সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিশ্বব্যাংককে প্রধানমন্ত্রীর কাছে মাফ চাইতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশ্বব্যাংককে প্রধানমন্ত্রীর কাছে মাফ চাইতে হবে

আনিসুল হক

পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ আনায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিশ্বব্যাংককে মাফ চাইতে বলেছেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। কানাডার আদালতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ খারিজের পর গতকাল জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় আইনমন্ত্রী এ দাবি করেন। অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, বিশ্বব্যাংককে বাংলাদেশের কাছে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে এবং এ মামলার আসামিদের কাছে মাফ চাইতে হবে। যদি মাফ না চায়, অর্থমন্ত্রীকে বলব, তিনি যেন প্রটেস্ট নোট পাঠান।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের বহুল আকাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু প্রকল্পে কানাডার পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে ঘুষের বিনিময়ে কাজ পাইয়ে দেওয়া হয়েছে বলে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ উত্থাপনের পর তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনার ঝড় ওঠে। ওই ঘটনায় কানাডার আদালতে করা মামলা শুক্রবার খারিজ করে দেয় দেশটির আদালত।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, সেদিন বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধের ঘটনায় আমাদের সময় নষ্ট হয়েছিল, অর্থের অপচয় হয়েছে। আমি এই সংসদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলতে চাই, এ জন্য বিশ্বব্যাংককে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। আনিসুল হক বলেন, আর যারা এ মামলার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তারা কোনো আইনজীবীর কাছে গেলে নিশ্চয়ই সেই আইনজীবী মামলা করার পরামর্শ দেবেন। আইনজীবীরা বলবেন, এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায়। তিনি বলেন, এখন অধিক্ষেত্রটা কোন জায়গায় হবে, তাও আইনজীবীরা বলে দেবেন। এখানেও (বাংলাদেশ) অধিক্ষেত্র হবে, ওইখানেও (কানাডা) অধিক্ষেত্র হবে। এটা দুই জায়গাতেই হবে। বিনা পয়সায় এর থেকে আর বেশি বলা যাবে না। তিনি বলেন, আজ বাংলার মানুষ দেখতে পেরেছে শেখ হাসিনার কী দৃঢ়চিত্ত। শেখ হাসিনার আত্মমর্যাদা কতটুকু তার প্রমাণ পেয়েছে। আজকে আমরা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে বলতে পারি, আমরা পদ্মা সেতু করছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়চেতার জন্য। তাই আজকে ঋণ ছাড়াই আমাদের পদ্মা সেতু হচ্ছে।

৪০ লক্ষাধিক মামলা নিষ্পত্তি : আইনমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সাল থেকে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের আদালতগুলোতে ৪০ লাখ ৬৪ হাজার ৫০০ মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। তিনি বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তিন মাস ধরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার জেরা চলছে। আর মাত্র নয়জন সাক্ষীর জেরা সম্পন্ন হলেই মামলাটির সাক্ষ্য ও জেরা শেষ হবে। গতকাল টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে মহিলা এমপি বেগম নাসিমা ফেরদৌসী ও বেগম হাজেরা খাতুনের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। মোহাম্মদ সুবিদ আলী ভূঁইয়ার (কুমিল্লা-১) এক প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, বর্তমান সরকার দেশের আদালতে মামলা জট কমিয়ে বিচার কাজ ত্বরান্বিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে। বিচারকার্য মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার ভোলা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, কুষ্টিয়া, কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, কক্সবাজার এবং নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ১৫টি চৌকি আদালত স্থাপন করেছে। সারা দেশে ৪১টি নারী ও শিশু নির্যাতনের অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল হবে এবং এ সংক্রান্ত মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া দেশে ১১২টি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ২১৪টি সহকারী জজ আদালত, ৩৪৬টি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সহায়ক পদ এবং ১৯টি পরিবেশ আদালত ও ৬টি পরিবেশ আপিল আদালত হচ্ছে।

উচ্চ আদালতে ১৭ জন স্থায়ী বিচারক নিয়োগ : এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন (বগুড়া-৪)-এর প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সাল থেকে হাই কোর্টে ৭ জন স্থায়ী বিচারক ও ১০ জন অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

 অধস্তন আদালতেও বিচারক সংখ্যা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চলছে। ২০১৪ সালে ২১২ জন সহকারী জজ ও সমপর্যায়ের বিচারক নিয়োগ হয়েছে। বিজিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ আরও ২০৭ জনকে অতি শীঘ্রই শূন্য পদসমূহে পদায়ন করা হবে। এ ছাড়া আরও ১১৫ জন সহকারী জজ ও সমপর্যায়ের বিচারক নিয়োগের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।

সর্বশেষ খবর