মঙ্গলবার, ১৫ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

কোটার প্রজ্ঞাপন দাবিতে বিক্ষোভ

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোটা বাতিল ঘোষণার প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে গতকাল উত্তাল ছিল শাহবাগ। দুপুর থেকে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। এ সময় তারা গান গেয়ে ও নানা স্লোগানে মুখরিত রাখেন শাহবাগ এলাকা।

পরে সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর ওপর আস্থা রেখে রাস্তায় নেমে আন্দোলন স্থগিত করার ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এদিকে আন্দোলনের কারণে দুপুর থেকে শাহবাগ হয়ে যান চলাচল বন্ধ থাকে। এতে আশপাশের সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল সকাল ১০টা থেকে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলনকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে (ঢাবি) বিক্ষোভ করতে থাকেন এবং তারা কলা ভবন ও ব্যবসা শিক্ষা অনুষদের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে হাজারো আন্দোলনকারী এসে জড়ো হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা নানা স্লোাগান দিয়ে বের হতে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তারা কয়েকবার মিছিল নিয়ে প্রদক্ষিণ করেন। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে শুরু হয়ে কলা ভবন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, সূর্যসেন হল, সিনেট ভবন, টিএসসি, শহীদ মিনার, দোয়েল চত্বর, কার্জন হল এলাকায় যান। পরে সেখান থেকে হাই কোর্ট মোড়, কদম ফোয়ারা, মৎস্য ভবন, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট পার হয়ে বেলা ১টার দিকে শাহবাগ মোড়ে এসে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা এ সময় বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এগুলো হলো— ‘আর নয় কালক্ষেপণ, এবার চাই প্রজ্ঞাপন’, ‘প্রজ্ঞাপনে টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘দাবি মোদের একটাই, প্রজ্ঞাপন প্রজ্ঞাপন’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’, ‘লেগেছে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’।

অবস্থানের বিষয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্লাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, ‘মহান জাতীয় সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণার ৩৩ দিন পার হলেও তা এখনো প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হয়নি। বাংলার ছাত্রসমাজ আজ বাধ্য হয়ে রাজপথে নেমেছে। তারা আন্দোলন করতে করতে আজ ক্লান্ত। আমরা আর আন্দোলন করতে চাই না। আমরা পড়ার টেবিলে ফিরে যেতে চাই। প্রধানমন্ত্রীকে আমরা অনুরোধ করব, সচিবদের প্রজ্ঞাপন জারি করার নির্দেশ দিয়ে ছাত্রসমাজকে শান্ত করুন।’ তিনি বলেন, গত ৩ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোজাম্মেল হক খান বিবিসির এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যেদিন নির্দেশ দেবেন, তার পরের দিনই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। এজন্য কোনো কমিটির দরকার নেই।’ তাহলে তারা কেন বার বার কমিটির কথা বলছেন? আমাদের প্রজ্ঞাপন জারির একটি নির্দিষ্ট সময় দিন, তাহলে আমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করব। এদিকে গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ‘মন্ত্রিসভার বৈঠকে কোটা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তবে কোটা সংস্কারের সারাংশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।’

এরপর সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন তারা। পরে সন্ধ্যা ৪টায় সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলন স্থগিত করার ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো আরও খবর— চট্টগ্রাম : কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় গতকাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শাটল ট্রেন আটকে রেখে প্রতিবাদ করেছে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ চবি শাখা। সকাল ৮টার শাটল ট্রেন যেতে দেননি ছাত্ররা। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে তারা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে নগরীর ষোলশহর স্টেশনে অবস্থান নেন। এ সময় রেললাইন অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকলে বন্ধ হয়ে যায় শাটল ট্রেন চলাচল। বরিশাল : কোটা পদ্ধতি বাতিলে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বেলা ১১টায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। দিনাজপুর : গতকাল বেলা ১১টার দিকে ক্লাস বর্জন করে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেশিয়ামের সামনে থেকে এ বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে একাডেমিক ভবন এবং দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এম. ওয়াজেদ ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। শাবি : কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ধর্মঘট করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সকাল ৮টায় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অবস্থান নেন। পরবর্তীতে সকাল সাড়ে দশটায় প্রধান ফটক হতে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়, যেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে এসে সমাবেশে মিলিত হয়। রাবি : কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে বাস চলাচল বন্ধ করে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন ও ছাত্র ধর্মঘট পালন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে থেকে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে।

সর্বশেষ খবর