শুক্রবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

আতঙ্ক কাটলেও হতাশা বাড়ছে রোহিঙ্গাদের

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

রোহিঙ্গাদের আতঙ্ক অনেকটা কাটলেও তাদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে দিন দিন। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাধারণ ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কর্মরত চিকিৎসক এবং সংশ্লিষ্ট এনজিও কর্মকর্তারা এমনটাই মনে করেন। এক বছর আগে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিধন-ধর্ষণ ও অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের স্মৃতি এখনো দগদগে ক্ষতের মতো। নিজের সামনেই পরিবারের অন্য সদস্যকে নির্মমভাবে খুন ও ধর্ষণের মতো পাশবিকতার শিকার হতে দেখে পালিয়ে আসাদেরও দীর্ঘদিন আতঙ্ক তাড়া করেছে। কিন্তু কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়ার পর ত্রাণসহায়তা, চিকিৎসাসেবা, নিরাপত্তা ও অন্যান্য মৌলিক সেবা প্রাপ্তিতে তাদের সেই আতঙ্ক ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হতে থাকে। কিন্তু এক বছরেও নিজ দেশে ফিরে যেতে না পেরে অনেকেই এখন নানা কারণে হতাশায় ভুগছে বলে জানালেন মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক একাধিক চিকিৎসক ও এনজিও কর্মকর্তা। তাদের মতে, এখনো ৮০ শতাংশ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু মানসিক ট্রমায় ভুগছেন। হতাশার কারণ সম্পর্কে জানার জন্য কথা হয় রোহিঙ্গা যুবক ও একটি ক্যাম্পের মাঝি (নেতা বা প্রতিনিধি) মুহিব্বুল্লাহর সঙ্গে। তিনি জানান, গত বছরের এই সময় রোহিঙ্গারা স্রোতের মতো যখন বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় প্রবেশ করে তখন তাদের পেছনে তাড়া করছিল খুন-ধর্ষণের মতো আতঙ্ক। খোলা আকাশের নিচে লাখ লাখ রোহিঙ্গার আশ্রয় হলেও মাথা গোঁজার ঠাঁই মেলেনি অনেক দিন। অনিয়ম-উচ্ছৃঙ্খলতার মধ্যে দিন পার করতে হয়েছে শুরুতে। এখন তেমন আতঙ্ক তাড়া না করলেও দিন দিন হতাশ হয়ে পড়ছেন ক্যাম্পের বাসিন্দারা। মুহিব্বুল্লাহ জানান, নিজের দেশে ফিরে গিয়ে স্বাধীনভাবে বসবাস করা আর ভিনদেশে আশ্রিত হয়ে থাকা এক নয়। অনেকে নিজেদের এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে হতাশ হয়ে পড়ছেন। একটা পরিবারের জন্য বাসস্থান ও কিছু ত্রাণ সাহায্যই সব নয়। বেঁচে থাকতে হলে ন্যূনতম আরও অনেক চাহিদা রয়েছে, যেগুলো কোনো উদ্বাস্তু শিবিরে কখনো পূরণ হওয়ার নয়।

 হতাশাগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে ক্যাম্পগুলোতে কাজ করছে নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি উইং এবং দেশি-বিদেশি অন্তত এক ডজন এনজিও। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ১১টি সেন্টার স্থাপন করে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক কাজে নিয়োজিত এনজিও ইউনাইট থিয়েটার ফর সোশ্যাল অ্যাকশনের (উৎস) প্রধান নির্বাহী মোস্তফা কামাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার হতে হতে রোহিঙ্গারা অনেক আগে থেকেই মনোবৈকল্যের শিকার। তার ওপর জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে তারা নিজভূমি থেকে উচ্ছেদের পর প্রতিটি ধাপে যে অন্যায়-অত্যাচারের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, এতে তাদের স্বাভাবিক মানসিক আচরণ বিপর্যস্ত হয়ে গেছে। নিজের চোখের সামনে আপনজনকে হত্যা-ধর্ষণের মতো পাশবিক নির্যাতন ঘটার কারণে অনেকে এখনো বাকরুদ্ধ। মনের ওপর নেতিবাচক চাপ পড়ায় তারা এখন ভালো কিছুর পরিবর্তে নেতিবাচক বিষয়ে জড়িয়ে পড়ছে। তাই দিন দিন হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে অধিকাংশ রোহিঙ্গা।’ রোহিঙ্গাদের মানসিক সেবাদানের জন্য উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকারের নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন, এসিএফ, এমএসএফ, গণস্বাস্থ্য, মুক্তি, সিআইসি, ব্র্যাকসহ ১২টি প্রতিষ্ঠান।

সর্বশেষ খবর