শিরোনাম
সোমবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

নির্বাচনে এবার ফ্যাক্টর নারী ভোটার

জিন্নাতুন নূর

নির্বাচনে এবার ফ্যাক্টর নারী ভোটার

দেশে সাড়ে ১০ কোটি ভোটারের অর্ধেকই নারী। বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনগুলোতে পুরুষ ভোটারের তুলনায় নারী ভোটারই ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত বেশি হতে দেখা যায়। তাই ফলাফল নির্ধারণে বড় ফ্যাক্টর তারা। প্রার্থী নির্বাচনে তাই নারীদেরও রয়েছে নানান হিসাব-নিকাশ। আবার নারী ভোটারের মধ্যে অনেকেই এবার জীবনে প্রথমবারের মতো ভোট দেবেন। নতুন এই ভোটারদের আশা-আকাঙ্ক্ষা ভিন্ন মাত্রার। শিক্ষিত ও বয়সে তরুণ এসব নারী ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে তুলনামূলক সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকেই ভোট দেবেন। বিষয়টি মাথায় রেখে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও নারী ভোটারদের নির্বাচনে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছেন। নির্বাচনী  ইশতেহারে নারীর উন্নয়নের বিষয়টি পেতে যাচ্ছে বিশেষ গুরুত্ব। অবশ্য ইতিমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নারী ভোটারদের গুরুত্ব দিয়েই তাদের প্রাক-নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। জানা যায়, এবারের সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ১০ কোটি ৪১ লাখ ৪২ হাজার ৩৮১ জন (নির্বাচন কমিশন কর্তৃক চূড়ান্ত হিসাব)। গত ৩১ জানুয়ারি কমিশন সংসদ নির্বাচনে ভোটারদের চূড়ান্ত এই তালিকা প্রকাশ করে। এবার নির্বাচনে ভোটারদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৫ কোটি ২৫ লাখ ১২ হাজার ১০৫ জন। আর নারী ভোটারের সংখ্যা ৫ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার ২৭৬ জন। অর্থাৎ নারী-পুরুষ ভোটারদের সংখ্যার ব্যবধান ৮ লাখ ৮১ হাজার ৮২৯ জন। আর পুরুষ ও নারী ভোটারের অনুপাত ৫০.৪২ : ৪৯.৫৮। আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রের খবর, নারী ভোটারদের ভোট পেতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ৫০টি সংরক্ষিত আসনের পাশাপাশি সরাসরি আসনেও নারী প্রার্থী মনোনয়ন দিচ্ছে। এরই মধ্যে দলটির বহু নতুন-পুরনো নারী কর্মী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এমনকি যেসব আসনে পুরুষ প্রার্থীরা লড়বেন সে আসনগুলোতে সেই পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে তার স্ত্রী নারী ভোটারদের কাছে গিয়ে ভোটের প্রচারণা চালাচ্ছেন। একই বিষয় আমলে নিয়ে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি অন্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নারীনেত্রীরাও ইতিমধ্যে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও গত দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালে নারীর ক্ষমতায়নে বেশ ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছেন। আর নারী ভোটারদের ভোট পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়নে প্রধানমন্ত্রীর সেই ভূমিকা ইতিবাচক ভূমিকা প্রভাব রাখবে বলেও আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট নেতা-কর্মীরা মনে করছেন। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে গতকাল বলেন, ২০০৮ সালে নারী ভোটারের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি থাকলেও এর পর থেকে ভোটার হালনাগাদ তথ্যে এই সংখ্যা কমতে থাকে। এবার ভোটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী ফলাফলে নিশ্চিতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। কারণ নারী ভোটাররা সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকলে ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে যান। এবার নারীদের মধ্যে অনেকেই বয়সে তরুণ ও শিক্ষিত। তারা ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে সৎ ও জনস্বার্থে যে প্রার্থী কাজ করবেন তাকেই ভোট দেবেন। আর গ্রামীণ নারীদের কেউ কেউ হয়তো পরিবারের পুরুষ সদস্যদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ভোট দিতে পারেন। নির্বাচন কমিশনের হালনাগাদ তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এবার মোট ১২টি আসনে পাঁচ থেকে সাত লাখের ওপর নারী ভোটার আছেন। এর মধ্যে ঢাকা-১৯ আসনেই সাত লাখের বেশি ভোটার। ভোটারদের হালনাগাদ তথ্য পর্যালোচনা করে আরও দেখা যায়, বাংলাদেশে মোট নারী-পুরুষ ভোটারের অনুপাত কাছাকাছি হলেও সংখ্যায় দেশের ১৮টি জেলায় নারী ভোটাররা পুরুষের তুলনায় এগিয়ে আছেন। বাকি ৪৬ জেলায় পুরুষ ভোটার বেশি। নারী ভোটারের সংখ্যা যেসব জেলায় বেশি সেগুলো হচ্ছে—বরগুনা, বগুড়া, চুয়াডাঙ্গা, গাইবান্ধা, হবিগঞ্জ, জয়পুরহাট, জামালপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, মানিকগঞ্জ, মেহেরপুর, নওগাঁ, নড়াইল, পটুয়াখালী, রাজশাহী, রংপুর, শেরপুর ও টাঙ্গাইল। প্রসঙ্গত, ২০০৮-এ প্রথমবারের মতো ছবিসহ তৈরিকৃত ভোটার তালিকায় পুরুষের চেয়ে নারী ভোটারের সংখ্যা বেশি ছিল। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিল মোট আট কোটি ১০ লাখ ৮৭ হাজার তিনজন। এর মধ্যে নারী ছিল চার কোটি ১২ লাখ ৪৪ হাজার ৮২০ জন এবং পুরুষ ভোটার তিন কোটি ৯৭ লাখ ৮৭ হাজার ৬৩৬ জন। ২০১৩ সালের ভোটার তালিকার হালনাগাদে পুরুষের তুলনায় নারী ভোটার কম নিবন্ধিত হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনে মোট ৯ কোটি ১৯ লাখ ৬৫ হাজার ১৭৬ ভোটারের মধ্যে নারীর সংখ্যা ছিল চার কোটি ৫৮ লাখ ৪২ হাজার ৬৯৮ ও পুরুষের সংখ্যা ছিল চার কোটি ৬১ লাখ ২২ হাজার ৪৬৯ জন।

 

সর্বশেষ খবর