মঙ্গলবার, ২২ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
নতুন মন্ত্রীদের প্রধানমন্ত্রী বললেন

আস্থা রেখেছি তোমাদের ওপর সততা নিষ্ঠা নিয়ে কাজ কর

নিজামুল হক বিপুল

আস্থা রেখেছি তোমাদের ওপর সততা নিষ্ঠা নিয়ে কাজ কর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার সদস্যদের বলেছেন, তিনি আগে কখনোই মন্ত্রিসভায় এত বড় পরিবর্তন আনেননি, অতীতের কোনো আমলেও মন্ত্রিসভায় এরকম বড় পরিবর্তনের রেকর্ড নেই। তিনি বলেন, তোমাদের ওপর আস্থা রেখেছি। আস্থার মর্যাদা রক্ষা কর। সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে কর্তব্য পালন কর। প্রধানমন্ত্রী নতুন সরকার গঠনের পর গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতিত্ব করছিলেন। সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় শেখ হাসিনা মন্ত্রীদের করণীয়-অকরণীয় নির্দেশ করেন। তিনি বলেন, কেউ অনিয়ম করলে করতেই পার, কিন্তু সবার কাজের ওপর আমার সার্বক্ষণিক মনিটরিং রয়েছে। সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকের শুরুতে সরকার প্রধান বলেন, জনগণের প্রত্যাশা রয়েছে আমাদের কাছে সেই প্রত্যাশাপূরণ আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর যে আকাক্সক্ষা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছিল, আমাদেরও সেই আকাক্সক্ষা। সেই আকাক্সক্ষা পূরণ করব। একটি ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলব।

প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে আপনারা নিশ্চয়ই পড়েছেন, আমার দাদা তাকে বলেছিলেন; যে কাজই কর না কেন, সিনসিয়ারিটি অব পারপাস অ্যান্ড অনেস্টি অব পারপাস থাকতে হবে। আমি মনে করি এই দুটি কথা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই মন্ত্রিপরিষদ এ কথাটি মনে রেখে যে কাজই করবে, নিষ্ঠার সঙ্গে ও সততার সঙ্গে কাজ করবে। তিনি বলেন, জনগণের প্রতি আমাদের যে দায়িত্ব, কর্তব্য রয়েছে- সেটা পালন করতেই আমরা সরকারে এসেছি। শেখ হাসিনা বলেন, সততার শক্তি অপরিসীম, সেটা আমরা বারবার প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। সততা থাকলেই দেশ এগিয়ে যাবে। যে অগ্রযাত্রা আমরা শুরু করেছি সেটা আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বৈঠকে মন্ত্রিসভা পাঁচটি আইনের খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। এর বাইরে একাদশ জাতীয় সংসদের উদ্বোধনী অধিবেশনে মহামান্য রাষ্ট্রপতি যে ভাষণ দেবেন তার খসড়া অনুমোদন করা হয়। এ ছাড়া নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড রোয়েদাদ-২০১৮ পরীক্ষার নিমিত্তে ইতিপূর্বে গঠিত মন্ত্রিসভা কমিটি পুনর্গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে। বিকালে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, মন্ত্রিসভা ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ)(সংশোধন) আইন ২০১৮ এর খসড়া ও চিটাগাং হিলট্রাক্স (ভূমি অধিগ্রহণ) রেজুলেশন (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট ২০১৯ এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। তিনি জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ আইন ২০১৮ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন এবং বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র আইন ২০১৮ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, বৈঠকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা বিধিমালা ২০১৫ এর আলোকে প্রতিবন্ধী বিষয়ক জাতীয় কর্ম-পরিকল্পনার খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও জানান, বৈঠকের শুরুতে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি বলেন, তার মৃত্যু অত্যন্ত দুঃখজনক। আশরাফকে ছোটবেলা থেকেই আমি চিনি। কামালের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। ছাত্রলীগ করতেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর প্রবাসে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করা এবং পরে দেশে এসে সৈয়দ আশরাফের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

বঙ্গবন্ধু সিটি : নতুন মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় বেশ কিছু বিষয়ে কথা বলেন একাধিক মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী। সূত্র জানায়, শুরুতেই চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে নির্মাণাধীন টানেলের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। তিনি টানেলটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে নামকরণের প্রস্তাব করেন। ভূমিমন্ত্রীর এই প্রস্তাব শুনে প্রধানমন্ত্রী কোনো কথা বলেননি। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম প্রস্তাব করেন বঙ্গবন্ধুর নামে একটি সিটি গড়ে তোলার। তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সেইসব দেশের জাতির পিতার নামে গড়ে ওঠা নগরীর উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, আমাদের দেশেও জাতির পিতার নামে একটা নতুন নগরী গড়ে তোলা যেতে পারে। তিনি প্রস্তাব দেন টুঙ্গিপাড়াকে ঘিরে এই সিটি গড়ে তোলা যেতে পারে। তার এই বক্তব্য শুনেও প্রধানমন্ত্রী কোনো মন্তব্য করেননি। আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী প্রস্তাব করেন সিলেটে যেসব বড় বড় প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে সেগুলোর নামকরণ বঙ্গবন্ধুর নামে করার। বৈঠক সূত্র জানায়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম এ মোমেন বলেন, প্রবাসীদের জন্য একটি দিবস করার। এতে প্রবাসীরা খুশি হবেন। তিনি মন্ত্রিসভার সব সদস্যকে জাতীয় পতাকা ব্যবহারের ব্যবস্থা করতে বলেন। তার প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী হঠাৎ ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, হ্যাঁ, ফ্ল্যাগ সবাইকে দেই! পরে দেখা যাবে রাজাকাররাও পতাকা উড়াচ্ছে। এমনিতেই তো বিএনপি রাজাকারদের পতাকা দিয়ে রেখেছে।

সর্বশেষ খবর