রবিবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
জঙ্গি শরিফুলের স্বীকারোক্তি

হলি আর্টিজান হামলার অর্থ আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও রাজশাহী

হত্যাকাণ্ডের এক মাস আগে থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিমের ওপর নজর রাখছিল জঙ্গিরা। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে স্থানীয় জঙ্গি সদস্যদের দিয়ে এই শিক্ষকের ওপর রেকি করা হয়। উগ্রপন্থায় আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠীর নজরে আসতেই নিরীহ রাবি শিক্ষককে নৃশংসভাবে খুন করে জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ-জেএমবি। কিলিং মিশনের নেতৃত্বে ছিল মো. শরিফুল ইসলাম ওরফে খালিদ। এই মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি এবং বহুল আলোচিত হলি আর্টিজান হামলা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি এই শরিফুলকে শুক্রবার বেলা ৩টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার নাচোলমহিপুর সড়ক থেকে গ্র্রেফতার করে র‌্যাব। র‌্যাব বলছে, শরিফুল ইসলাম নব্য জেএমবির শীর্ষ পর্যায়ের নেতা। হলি আর্টিজান হামলার অর্থ মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসে বলে সে র‌্যাবকে জানায়।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, রেজাউল হত্যাকা  নিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য দিয়েছে শরিফুল। সে বলেছে, স্থানীয় জঙ্গি রিপন আলী ওরফে রকি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষকদের ক্লাসের রুটিন মোবাইলে ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে দিয়েছিল। কিলিংয়ে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল সংগ্রহ করে জঙ্গি ওসমান মিলু ও মাসকাওয়াত ওরফে আবদুল্লাহ। মিশন শেষ করে বাইক হাসান মোটরসাইকেলে করে তাকে ও খাইরুল ইসলাম ওরফে পায়েলকে নিয়ে রওনা দেয়। পায়েলের কাছে চাপাতি ও রক্তমাখা জামাকাপড় ছিল, তাকে খরখড়ি বাইপাসে নামানোর পর হাসান তার নাটোরের ভাড়া করা বাসায় শরিফুলকে নিয়ে ওঠে। পরদিন সকালে শরিফুল ঢাকায় চলে আসে এবং আমিরের নির্দেশে পার্শ্ববর্তী দেশে পালিয়ে যায়। শরিফুলের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে মুফতি মাহমুদ জানান, শরিফুল রাজশাহীর বাগমারায় ১৯৯১ সালে জন্মগ্রহণ করে।

যোগাযোগ ছিল না পরিবারের সঙ্গে : ২০১৫ সাল থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না শরিফুলের। গণমাধ্যমের খবরে তার পরিবারের লোকজন জানতে পারে শরিফুল জঙ্গি হয়েছে। রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বাগমারা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবদুল হাকিমের দুই ছেলের মধ্যে বড় শরিফুল ইসলাম। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উচ্চ মাধ্যমিকে ছাত্র হিসেবে পড়ার সময় রাজশাহীতে মেসে থাকত শরিফুল। এ সময় শরিফুলের মধ্যে পরিবর্তন দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম কয়েক বছর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তার। তবে বাড়ি কম আসত শরিফুল। শরিফুলের বাবা আবদুল হাকিম জানান, ২০১৫ সাল থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ একেবারেই বন্ধ করে দেয় শরিফুল। ওই বছরের ২৩ মে মোবাইল ফোনে তার সঙ্গে কথা বলে শরিফুল। এরপর চার বছর ধরে ছেলের সঙ্গে দেখা কিংবা মোবাইলে কথাবার্তা হয়নি। ছেলের সন্ধানে ২০১৬ সালের ৪ জুলাই বাগমারা থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেন তিনি। ছেলের গ্রেফতারের খবর বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে জানতে পেরেছেন আবদুল হাকিম।

গতকাল সন্ধ্যায় আবদুল হাকিম বলেন, ‘তার গ্রেফতারের খবরে হতাশ হইনি। আমার ছেলে যদি জঙ্গি হামলা বা শিক্ষক মার্ডারে (হত্যায়) জড়িত থাকে, তাহলে অবশ্যই তার সাজা হওয়া উচিত। চেয়েছিলাম, ছেলে লেখাপড়া করে বড় কর্মকর্তা হবে। ওকে নিয়ে আমার স্বপ্ন নষ্ট হবে, ভাবিনি।’

অন্যদিকে, শরিফুল গ্রেফতারের খবরে তার গ্রাম শ্রীপুরের মানুষ খুশি। ইউপি চেয়ারম্যান মকবুল হোসেন জানান, তাদের গ্রামের ছেলে এমন ভয়ঙ্কর জঙ্গি হতে পারে, তারা কখনো বিশ্বাস করেননি। সে গ্রেফতার হওয়ায় এলাকার মানুষ খুশি।

স্মর্তব্য, ২০১৬ সালের ২৩ এপ্রিল সকালে রাজশাহী নগরের শালবাগান এলাকায় নিজের বাড়ির পাশে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয় অধ্যাপক রেজাউল করিমকে। তার ছেলে রিয়াসাত ইমতিয়াজ সৌরভ পরে অজ্ঞাত পরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে বোয়ালিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ২০১৭ সালের ৬ নভেম্বর আদালতে ৮ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। এদের মধ্যে খায়রুল ইসলাম বাঁধন, নজরুল ইসলাম ওরফে হাসান ওরফে বাইক হাসান ও তারেক হাসান ওরফে নিলু ওরফে ওসমান অভিযোগপত্র দেওয়ার আগেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়। ঘটনার দুই বছর পর গত বছরের ৮ মে হত্যা মামলায় নিষিদ্ধ জঙ্গি দল জেএমবির দুই সদস্যের মৃত্যুদ  এবং তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদ  দেয় আদালত।

সর্বশেষ খবর