রবিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

রায়ের ৯ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি ভাষা সৈনিকদের তালিকা

আহমেদ আল আমীন

রায়ের ৯ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি ভাষা সৈনিকদের তালিকা

ভাষা সৈনিকদের তালিকা প্রণয়ন করতে হাই কোর্টের রায় নয় বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি। অনেকেই ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করলেও মুষ্টিমেয় কয়েকজন ছাড়া বাকিরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ‘ভাষা সৈনিক’ হিসেবে পরিচিত নন। তালিকা না থাকায় তারা জাতীয়ভাবে সম্মান ও মূল্যায়ন থেকেও বঞ্চিত। একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালের ২৫ আগস্ট বিচারপতি মো. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ এবং বিচারপতি নাইমা হায়দারের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ তালিকা প্রণয়নের নির্দেশনা দিয়ে রায় দিয়েছিল। বাংলা ভাষার মর্যাদা ও স্বীকৃতির আন্দোলনে সারা দেশ থেকে জড়িতদের তালিকা তৈরির নির্দেশনা চেয়ে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ রিট আবেদনটি দায়ের করেছিলেন। এ বিষয়ে রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে সারা দেশে অনেকেই অংশ নেন। ঘটনার পর কয়েক দশক পার হয়ে গেলেও এখনো কোনো তালিকা হয়নি। সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই আমরা আদালতের নির্দেশনার জন্য রিট দায়ের করেছিলাম। আদালত নির্দেশনা দিয়েছিল, কিন্তু রায়ের পর নয় বছর কেটে গেলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। তিনি আরও বলেন, সরকারিভাবে স্বীকৃত ও গ্রহণযোগ্যতা না থাকায় ভাষা সৈনিকদের যথাযথ মর্যাদা দেওয়া যাচ্ছে না। এটি দুঃখজনক। এ বিষয়ে আদালতের আদেশ আজও বাস্তবায়ন না হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান। হাই কোর্টের ওই রায়ে ভাষা সৈনিকদের তালিকা প্রণয়ন ছাড়াও বেশ কিছু নির্দেশনা আসে।  আদালতের দেওয়া নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নির্ধারিত এলাকায় পাহারার ব্যবস্থা করা, যাতে সেখানে অসামাজিক কার্যক্রম না হয়। ভবঘুরে ব্যক্তিরা যাতে শহীদ মিনারে ঘোরাফেরা করতে না পারে। শহীদ মিনারের মূল বেদিতে মিটিং মিছিল করা যাবে না। ভাষা সৈনিকদের জাতীয় পদক প্রদান করা। সরকারের কাছে আবেদন করলে সরকারি খরচে ভাষা সৈনিকদের চিকিৎসা দিতে হবে। ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি রক্ষার্থে জাদুঘর তৈরি করা। জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে ভাষা সৈনিকদের আমন্ত্রণ জানানো। স্কুল কলেজসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা।

এসব নির্দেশনার অধিকাংশই বাস্তবায়ন হয়নি বলে জানা গেছে। ফলে হাই কোর্টের অন্য একটি নির্দেশনা অনুসারে ভাষা সৈনিকদের জাতীয় পদকও প্রদান করা যাচ্ছে না। আবার চিকিৎসা ক্ষেত্রে ভাষা সৈনিকরা সরকারি সহায়তা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনো শহীদ মিনার নেই। তবে ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি রক্ষার্থে জাদুঘর তৈরির কার্যক্রম প্রাথমিকভাবে শুরু হয়েছে।

আদেশ বাস্তবায়ন না হওয়ায় ২০১১ সালের ৫ মার্চ আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হলে শুনানি করে হাই কোর্ট রুল জারি করে। ওই সময় সংস্কৃতি সচিবকেও তলব করে আদালত। সচিব আদালতে ভাষা সৈনিকদের আংশিক তালিকা দিয়ে জানান, তালিকা প্রণয়নের প্রস্তুতি চলছে। এরপর ভাষা সৈনিকদের তালিকা প্রণয়ন করতে একটি কমিটি করা হলেও সেই কমিটি ভাষা সৈনিকদের তালিকা প্রণয়নে অস্বীকৃতি জানায়। এর প্রেক্ষাপটে ২০১৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি আবেদকারীদের পক্ষ থেকে আবার আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। এই আবেদনের পর শুনানি করে ছয় মাসের মধ্যে ভাষা সৈনিকদের তালিকা প্রণয়নের নির্দেশ দেয় আদালত। উচ্চ আদালতের এই আদেশও বাস্তবায়ন হয়নি।

সর্বশেষ খবর