মঙ্গলবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
বিশেষ সাক্ষাৎকার

সিদ্ধান্ত অন্য দলের নয়, নিজস্ব

হাসানুল হক ইনু

নিজস্ব প্রতিবেদক

সিদ্ধান্ত অন্য দলের নয়, নিজস্ব

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, ১৪ দল জোটবদ্ধ হয়েছে একটি আদর্শের ভিত্তিতে। জোটগতভাবে নির্বাচন হলেও কেবল আওয়ামী লীগের সদস্যদের দিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়েছে। এখন কে বিরোধী দলে যাবে আর কে যাবে না সে সিদ্ধান্ত প্রতিটি দলের নিজস্ব বিষয়। প্রত্যেক দল নিজেদের স্বার্থ ও লক্ষ্য অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবে তারা সরকারকে সমর্থন করবে কি না। গত শনিবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের দলীয় কার্যালয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি এসব কথা বলেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর নতুন মন্ত্রিসভা গঠন, জোটের রাজনীতি, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি, জামায়াতকে নিষিদ্ধ করাসহ নানা বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেন তিনি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম এই শরিক নেতার কাছে জানতে চাওয়া হয়, ভোট পরবর্তী সময়ে সরকার গঠন নিয়ে টানাপড়েন চলছে কিনা? জবাবে হাসানুল হক ইনু বলেন, মন্ত্রিসভা গঠন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাথমিক পদক্ষেপ। আমরা স্বাগত জানিয়েছি। একই সঙ্গে আমি পরিষ্কার বলতে চাই, মহাজোট এবং ১৪ দলের যে ঐক্য তা বহাল আছে। বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত বিএনপি-জামায়াত-ঐক্যফ্রন্ট রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হলেও তারা ষড়যন্ত্র বন্ধ করেনি। সরকারকে পদত্যাগ করে পুনর্নির্বাচনের দাবি উত্থাপনের মধ্যে তারা নতুন চক্রান্তের বীজ বুনেছে। সে কারণে আমাদের সামনে বিপদ কাটেনি। তাড়া খেয়ে সাপ গর্তে লুকালেও বিষ ধ্বংস হয়ে যায়নি। সাপের শেষ রাখতে নেই। সাম্প্রদায়িক দোসর জামায়াত-বিএনপিকে ধ্বংস না করা পর্যন্ত আমরা বিপদমুক্ত নই। তিনি বলেন, বিভিন্নভাবে আমাদের বিরোধী দলে যাওয়ার কথা বললেও আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ কোনো কথা বলেননি। আগামীতে মন্ত্রিসভায় ডাক পাওয়ার আশা করছেন কিনা জানতে চাইলে সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, মন্ত্রিসভায় কে এলো, কে বাদ পড়ল সে বিষয় নিয়ে ভাবছি না। আমরা ভাবছি আগামী ৫টি বছর দেশকে একটি সমৃদ্ধ জায়গায় নিয়ে যাওয়া। দেশের মধ্যে অনেক সাম্প্রদায়িক ছাপ রয়েছে রাজনীতি, সংবিধান ও আইনকানুনে। এগুলো পরিষ্কার করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির বিপরিতে আর কখনো সামরিক সরকার হবে না। অস্বাভাবিক সরকার হবে না। রাজাকার সমর্থিত সরকার হবে না। মীমাংসিত বিষয়গুলো যারা অমীমাংসিত করে, তাদের রাজনীতি করার কোনো সুযোগ দেওয়া যাবে না। মন্ত্রিসভা নিয়ে ভাবছি না, আগামী ৫ বছরের রাজনৈতিক কর্মপন্থা নির্ণয় করাই জরুরি মনে করছি। নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের মামলা প্রসঙ্গে হাসানুল হক ইনু বলেন, নির্বাচনী আইনে মামলা করার অধিকার সবার আছে। তাদের মামলাগুলো নথিবদ্ধ হয়েছে। শুনানি হলে দেশবাসী দেখবেন কোন তথ্যের ভিত্তিতে মামলা করেছে। যারা নির্বাচনী মাঠেই যায়নি, নির্বাচনে এজেন্টই দেয়নি। তথ্য পাবে কোথায়? তারা নির্বাচনটাকে যেমনভাবে ছেলেখেলার মতো দেখেছে, তেমনি মামলাটা হেলায় ফেলায় করেছে। লোক দেখানো মামলাও হতে পারে। তবে তথ্য দিয়ে মামলা করার মতো যোগ্যতা বিএনপির আছে বলে মনে করি না। বিগত নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত ঐক্যফ্রন্টের পরাজয় এবং ১৪ দলীয় জোটের বড় বিজয় প্রসঙ্গে হাসানুল হক ইনু বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের বড় বিজয় হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত ঐক্যফ্রন্টের ভরাডুবির জন্য তারা নিজেরাই দায়ী। তাদের নির্বাচনী কোনো প্রস্তুতি ছিল না। ঢাকায় গণমাধ্যমে ও আর রাতের আঁধারে বিভিন্ন মহলে বৈঠক করা ছাড়া নির্বাচনী কোনো প্রচারে ছিল না তারা। জেলা-উপজেলায় রাজনৈতিক কোনো কর্মকা ই হয়নি। জেলা-উপজেলার নেতা-কর্মীরা মুক্তই ছিল। বিএনপি জেদ করে যুদ্ধাপরাধীর সন্তানদের মনোনয়ন দেওয়াসহ মনোনয়ন বাণিজ্য করার কারণে তৃণমূল কর্মীরা হতাশ হন। তৃণমূলের প্রতি কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ হারায়। বেশির ভাগ প্রার্থী মাঠে যাননি। ফলে নির্বাচনে তারা কোনো প্রতিযোগিতা করতে পারেনি। বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটে বিজয় সে কারণে হয়েছে। ভোটের মাঠে যদি কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকে তাহলে তো ফলাফল এমনই হবে। আগামী ৫ বছরের মধ্যে বিএনপির অবস্থা মুসলিম লীগের মতো হবে জানিয়ে জাসদ সভাপতি ইনু বলেন, মুসলিম লীগ অনেক বড় দল ছিল। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের ভরাডুবি ঘটে। ঠিক এবারও সে রকম হয়েছে। বিএনপি বড় দল হলেও একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে। আগামীতেও বিএনপির পরিণতি মুসলিম লীগের মতোই হবে। কারণ গ্রেনেড হামলা করে, জঙ্গিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে বিএনপি যে ভুল করেছে, তারা এখনো শোধরায়নি। কোনো পদক্ষেপও গ্রহণ করেনি। কারণ এখন পর্যন্ত সাতজন এমপি শপথ গ্রহণ করেননি। তারা সংসদকে নাকচ করেছে। ফলাফলকে প্রত্যাখ্যান করেছে। অতীতের মতোই ভুল রাজনীতিতে যাচ্ছে। এই ৫ বছরে বিএনপির রাজনৈতিক যুগের অবসানের সূচনা দেখছি। জাসদে বারবার ভাঙন হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়েও হয়েছে- এখন কি আবার ঐক্যের সুযোগ আছে? জানতে চাইলে জাসদ (একাংশের) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, রাজনৈতিক কারণে যদি ভাঙে, তাহলে রাজনৈতিক কারণে ঐক্য হয়। যেই জাসদের কার্যালয়ে বসে আছেন (৩৫-৩৬ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ), সেটাই জাসদের কর্মীদের আসল ঠিকানা। যে কারণেই হোক না কেন, যারাই দল ত্যাগ করেছেন, যদি দলে আবার ফেরত আসতে চান, তাহলে আমার দলের ৩৫/৩৬ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের ঠিকানা খোলা আছে। আজ পর্যন্ত যেসব নেতা জাসদ ত্যাগ করেছেন, তারা রাজনৈতিক কারণে দল ছাড়েননি। সুতরাং বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত দলছুট ব্যক্তির সঙ্গে ঐক্যের আলাপ হয় না। ঐক্যের আলাপ হয় একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আরেকটি রাজনৈতিক দলের।

সর্বশেষ খবর