মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা
খাদ্যমন্ত্রীর জামাতার মৃত্যুরহস্য

আগেও আহত হয়ে আইসিইউতে ছিলেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

খাদ্যমন্ত্রী সাধন মজুমদারের জামাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ডেন্টাল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রাজন কর্মকারের (৩৯) মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। রহস্যজনক মৃত্যুর কারণ জানতে পরীক্ষার জন্য মরদেহের হার্ট ও ভিসেরা নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষার রিপোর্ট এলে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। অন্যদিকে সৎকার করার জন্য ডা. রাজনের মরদেহ নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে তার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে ডা. রাজনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে তার পরিবার। রাজনের মৃত্যু নিয়ে বেশি নাড়াচাড়া না করতে অনেকেই তাদের হুমকি দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন রাজনের মামা সুজন কর্মকার। এ ছাড়া গতকাল সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে প্রতিবেদন সংগ্রহ করতে গিয়ে এক গণমাধ্যমকর্মী লাঞ্ছিত হয়েছেন। এদিকে ময়নাতদন্তের বিষয়ে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সেলিম রেজা বলেন, প্রাথমিকভাবে ডা. রাজনের মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি। মরদেহের হার্ট ও ফরেনসিক নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। নমুনাগুলো হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। পরীক্ষার রিপোর্টের ভিত্তিতে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে বলেও জানান তিনি। রাজনের মামা বলেন, স্কয়ার হাসপাতাল থেকে লাশ গ্রহণের সময় থেকেই নানা ধরনের অস্পষ্টতার অবতারণা হয়েছে। রাজনের শ্বশুরবাড়ির স্বজনেরা মরদেহ নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। রাজনের সহকর্মীদের সহায়তায় অনেকটা জোর করেই মরদেহের ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘শিক্ষক দম্পতির সন্তান রাজনরা নিরীহ একটি পরিবার। আমরা নানা কারণে অসহায় বোধ করছি। দেড় বছর আগে রাজনের গুরুতর আহত হওয়ার বিষয়টি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বর্তমান ভিসি স্যার তদারক করেছিলেন। ওই সময়ও রাজন গৃহে নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। প্রায় এক মাস আইসিইউতে ছিল সে।’ একাধিক সূত্র বলছে, চার বছর আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে হলেও ডাক্তার দম্পতি রাজন ও কৃষ্ণার মধ্যে কলহ চলছিল। দেড় বছর আগে রাজনের গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পেছনেও পারিবারিক হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন রাজনের অনেক সহকর্মী ও স্বজন। ডা. রাজন বিএসএমএমইউর ডেন্টাল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। তিনি খাদ্যমন্ত্রী সাধন মজুমদারের জামাতা। তার স্ত্রী কৃষ্ণা মজুমদার রুপা বিএসএমএমইউর সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছি। প্রতিবেদনে যা আসবে সে অনুসারেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমার কাছে কোনো ধরনের তদবিরই স্থান পাবে না।’ শনিবার রাত ১২টা পর্যন্ত রাজধানীর শ্যামলীর মানারাত হাসপাতালে রোগীর অস্ত্রোপচার করে ইন্দিরা রোডের বাসায় যান রাজন। রাত সাড়ে ৩টার দিকে ইন্দিরা রোডের বাসা থেকে তার পরিবারের লোকজন স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাজনকে মৃত ঘোষণা করেন। রাজনের সহকর্মী বিএসএমএমইউর সহকারী প্রক্টর ও নিউরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আহসান হাবীব বলেন, ‘একবার রাজনকে গুরুতর অবস্থায় একটি স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খবর পেয়ে আমি গিয়ে দেখি তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। আমি দ্রুত বিএসএমএমইউর একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে ফোন করে রাজনকে অন্য একটি হাসপাতালে নিয়ে যাই। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাকে স্থানান্তর করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে না দেখালে তখন তাকে বাঁচানো যেত না।’ তিনি বলেন, ‘তখন তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন দেখেছি। ওই সময় তার স্ত্রী কৃষ্ণাকে আমি বারবার বিষয়টি নিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। কিন্তু তিনি কোনো উত্তর দেননি।’ সাংবাদিক লাঞ্ছিত : রাজন কর্মকারের লাশের পাশে স্বজনদের আহাজারির ছবি মুঠোফোনে ধারণ করতে গিয়ে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকার অপরাধ বিভাগের সাংবাদিক ইমন রহমান। এ সময় তার মুঠোফোনটি কেড়ে নেন রাজনের স্ত্রীর সঙ্গে থাকা কয়েকজন। পরে শেরেবাংলানগর থানার কনস্টেবল শামীমের কাছে মুঠোফোনটি দিয়ে ওসির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। গতকাল বেলা দেড়টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল মর্গে এ ঘটনা ঘটে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর