শনিবার, ১১ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা
যা বললেন বিশেষজ্ঞরা

দেশে এ রোগেই বেশি মানুষ মারা যায়

-- ডা. মাহবুুবর রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে এ রোগেই বেশি মানুষ মারা যায়

ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতালের সিনিয়র কার্ডিওলজিস্ট ডা. মাহবুবর রহমান বলেছেন, দেশে হৃদরোগেই সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায়। এরপর ক্যান্সার, তিন নম্বরে আছে সংক্রামক ব্যাধি। হৃদরোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় অনেক রোগী চিকিৎসা নিতে না পেরে মারা যায়। বড় একটা অংশের মৃত্যু হয় সময়মতো হাসপাতালে না আসায়। এক্ষেত্রে অসচেতনতার পাশাপাশি আর্থিক বিষয়ও জড়িত। এই মৃত্যুর মিছিল থামাতে হৃদরোগ নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি চিকিৎসা ব্যয় কমাতে হবে। রোগীকে বীমার আওতায় আনতে হবে। পশ্চিমা দেশগুলোতে এ ব্যবস্থা আছে। এতে চিকিৎসার খরচের একটি অংশ রোগী বহন করে, বাকিটা সরকার বা বীমা কোম্পানি। রোগীর ওপর চাপ পড়ে না।চিকিৎসা ব্যয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রক্তনালির ব্লক চিকিৎসায় রিংয়ের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। ফলে দামটা নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে সে খরচও অনেক রোগীর জন্য বহন করা কষ্টসাধ্য। এ ছাড়া বাইপাস সার্জারিতে সরকারি হাসপাতালে ৫০-৬০ হাজার টাকা লাগে। বেসরকারি হাসপাতালে লাগে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা। ওষুধসহ অন্যান্য খরচ আছে। বীমার ব্যবস্থা থাকলে এ ব্যয় বহন রোগীর জন্য কঠিন হতো না। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশেই হৃদরোগের বিশ্বমানের চিকিৎসা আছে। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালগুলোতে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর হার সমান। চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার প্রয়োজন নেই। যাদের টাকা আছে তারা যাচ্ছেন। কেন যাচ্ছেন তারাই জানেন। দেশের চিকিৎসায় হয়তো আস্থা নেই। তবে এটা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, বাংলাদেশে হৃদরোগের চিকিৎসা বিশ^মানের। এদিকে, দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল সংকটের কারণে এখনো শতভাগ মানসম্মত চিকিৎসা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না বলেও মনে করেন ডা. মাহবুব। তিনি বলেন, রোগীর তুলনায় চিকিৎসক ও প্রশিক্ষিত জনবল কম। আমাকেই প্রতিদিন শতাধিক রোগী দেখতে হয়। আমাকে কেন এত রোগী দেখতে হবে। সর্দি-কাশির রোগীকেও যদি হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের দেখতে হয় তাহলে সে তার বিশেষায়িত জায়গায় কাক্সিক্ষত সেবা কীভাবে দেবে? কোনো রোগী কোনো চিকিৎসককে দেখাবেন, তাকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে কিনা তা প্রান্তিক পর্যায়ের মেডিকেল অফিসার ঠিক করে দেবেন। অন্য চিকিৎসকের রেফারেন্সের মাধ্যমে রোগীকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে আসতে হবে। জনবলও বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে হৃদরোগে আক্রান্ত ২৫ শতাংশ রোগী হাসপাতালে আসার আগেই মারা যাচ্ছে। এ ছাড়া হাসপাতালে এসে উন্নত চিকিৎসা সুবিধা পাওয়ার পর মারা যাচ্ছে ৭ শতাংশ। আর উন্নত চিকিৎসা না পেলে মারা যাচ্ছে ১৫ শতাংশ। সময়মতো হাসপাতালে না আসা এই মৃত্যুর অন্যতম কারণ।

 বুকে ব্যথা হলে কারও বসে থাকা উচিত নয়। হার্ট অ্যাটাকে সময় নষ্ট করা মানেই মৃত্যু ডেকে আনা। তিনি বলেন, আমাদের জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসের কারণে হৃদরোগ বাড়ছে। শহুরে মানুষের এ সমস্যা বেশি। শারীরিক পরিশ্রমের সুযোগ নেই। আছে নানামুখী দুশ্চিন্তা। তেলযুক্ত খাবার, লাল মাংস ও ফাস্টফুড বেশি খাওয়া, ধূমপান, অ্যালকোহল পান, দূষিত বায়ুÑ সবই হৃদরোগকে ত্বরান্বিত করে।

সর্বশেষ খবর