রবিবার, ১৯ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

দেশীয় টেক্সটাইল শিল্প হুমকিতে ফেলছে বন্ড

বন্ধের পথে টেক্সটাইল শিল্প ট্রাকে ট্রাকে বন্ডের অবৈধ কাপড় আসছে কালোবাজারে

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাত গভীর হলেই পোশাকশিল্প কারখানা থেকে প্রতিদিন বের হয় সারি সারি ট্রাক। কাপড় বোঝাই ট্রাকের গন্তব্য পুরান ঢাকার ইসলামপুরে। এখানেই চোরাকারবারিদের হাতে তুলে দেওয়া হয় রপ্তানির নামে শুল্কমুক্ত বন্ড সুবিধায় আমদানি হওয়া কাপড়। পোশাকশিল্পের মালিক নামধারী চোরাকারবারিরা এখান থেকেই কালোবাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে দেশীয় টেক্সটাইল শিল্পে উৎপাদিত কাপড় থাকছে অবিক্রীত। বন্ডেড ওয়্যার হাউস সুবিধাভোগী এই অশুভ চক্রের গভীর ষড়যন্ত্রে দেশীয় টেক্সটাইল শিল্প বন্ধের মুখে পড়েছে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন-বিটিএমএ বন্ড সুবিধার অপব্যবহারে দেশের টেক্সটাইল শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তথ্য দিয়েছে। তথ্যমতে, গত এক বছরে স্থানীয় চাহিদা পূরণের জন্য যেসব মিল সুতা ও কাপড় তৈরি করে, সে মিলগুলো তাদের পণ্য বিক্রি করতে পারছে না। শুল্ক ও করমুক্ত এবং মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে আমদানি হওয়া সুতা-কাপড়সহ বিভিন্ন ড্রেস ম্যাটেরিয়াল স্থানীয় বাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে। এর প্রভাব দেশের রপ্তানিমুখী স্পিনিং ও উইভিং মিলগুলোতেও পড়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এ ধরনের কর্মকা  বন্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও চোরাকারবারিরা আছেন বহাল তবিয়তে। দেশের টেক্সটাইল মিলগুলো বর্তমানে শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন, মজুরি ও অন্যান্য ইউটিলিটি ব্যয় দিতে উৎপাদন খরচের চেয়ে কম মূল্যে সুতা ও কাপড় বিক্রয় করছে।

এ প্রসঙ্গে বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেছেন, অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলো কার্যত বন্ধ, কিন্তু তাদের বন্ড লাইসেন্সগুলো বিভিন্ন পন্থায় কার্যকর রেখে সুবিধা নিচ্ছে। বন্ডেড ওয়্যার হাউস লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা চিহ্নিত এবং তাদের মধ্যে কতটি চালু আছে, তা নির্ধারণ করে বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর বন্ড লাইসেন্স বাতিল করা দরকার। বন্ধ কারখানার বন্ড লাইসেন্স অপব্যবহার বন্ধ হলে দেশীয় শিল্প সুরক্ষা পাবে। জানা গেছে, প্রতিদিন রাত ১২টার পর অবৈধ কাপড় বোঝাই ট্রাক বিভিন্ন কোম্পানির ওয়ার হাউস থেকে সরাসরি ইসলামপুর ও সদরঘাটের বিভিন্ন মার্কেটে চলে আসে। সদরঘাটের বিক্রমপুর সিটি গার্ডেন মার্কেটের প্রায় ৬০ শতাংশ কাপড়ই বন্ডেড সুবিধা নিয়ে আমদানি করে খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে। ইসলামপুরের নূর ম্যানশন, সাউথ প্লাজা, গুলশান আরা সিটি, মনসুর ক্যাসেল, ইসলাম প্লাজা, কে হাবিবুল্লাহ মার্কেটে বিক্রি হয় প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ সুতা ও অবৈধ কাপড়। এর সঙ্গে সরাসরি জড়িত ইপিজেডগুলোর কর্মকর্তারা। কিছুসংখ্যক ব্যবসায়ী শুল্ক দিয়ে সামান্য পণ্য আমদানি করেন, বাকি পণ্য বন্ড থেকে অপসারিত পণ্যের সঙ্গে মিলিয়ে এক ভ্যাট চালানের রসিদ ব্যবহার করেন। এসব অনিয়ম ও চোরাচালান ঠেকাতে সক্রিয় উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর, শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতর এবং বন্ড কমিশনারেট।

তবে বস্ত্র খাতের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ- বন্ডেড লাইসেন্সের অপব্যবহার ও আমদানিতে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে সুতা ও কাপড় স্থানীয় বাজারগুলোতে অবাধে বিক্রি করা হচ্ছে। এ কারণে এক লাখেরও বেশি দেশীয় তাঁত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বন্ডযুক্ত গুদামের সুবিধার অধীনে আমদানি হওয়া সুতা, জামাকাপড় এবং বিভিন্ন পোশাকের উপকরণ খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে, বিশেষ করে রাজধানীর ইসলামপুর, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার, গোপালদি ও বাবুরহাট এবং সিরাজগঞ্জে। ফলে দেশের ডাইং মিলগুলো ৪০ শতাংশ উৎপাদন কমিয়েছে এবং সুতা উৎপাদনের পরিমাণও কমছে, যা মূলত প্রাথমিক টেক্সটাইল খাতকে বন্ধের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. সহিদুল ইসলাম বলেন, দেশীয় টেক্সটাইল ও বস্ত্রশিল্প রক্ষা করেই সরকার রপ্তানিকে উৎসাহিত করছে। এক্ষেত্রে বন্ডেড ওয়্যার হাউস সুবিধার অপব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে শুল্ক গোয়েন্দা জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছে। বন্ড সুবিধার অপব্যবহার বন্ধে আমাদের সার্বক্ষণিক নজরদারি রয়েছে। চলছে নিয়মিত অভিযানও।

সর্বশেষ খবর