সমারসেটের কাউন্টি গ্রাউন্টের প্রেসবক্সে বসলে চোখে সামনেই ভাসে অপূর্ব সুন্দর কনটক পাহাড়! হিটল্যান্ড, উডল্যান্ড, প্রাচীন পার্কল্যান্ড ও কৃষি জমি নিয়ে গঠিত ইংল্যান্ডের সবচেয়ে সুন্দর স্থান! ১৩ কিলোমিটার দূরে হলেও মনে হয় যেন স্টেডিয়ামের পাশেই। ঠিক পেছনে স্টেডিয়ামের গা ঘেঁষেই ১১শ শতাব্দীর সাক্ষ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ১১১ ফুট উচ্চতার সেন্ট জেমস চার্চ। বাম পাশ দিয়ে বয়ে গেছে টান নদী, ডান পাশে ‘সমারসেট ক্রিকেট মিউজিয়াম’! স্থানীয় সমারসেট কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের বর্ণাঢ্য এক ইতিহাস। টনটন হচ্ছে ঐতিহাসিক এক শহর। স্টেডিয়াম থেকে আট মিনিট হাঁটলেই যাওয়ায় ক্যাসল লজে, যেখানে ‘অ্যাংলো স্যাক্সন’ শুরু! হাজার বছরের স্মৃতি বুকে ধারণ করা ক্যাসল লজই হচ্ছে ‘মিউজিয়াম অব সমারসেট’! যেখানে খুঁজে পাওয়া যায় হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি। প্রাচীন মানুষদের জীবনাচরণ, ডাইনোসোরের ফসিল, রাজা-মহারাজাদের ব্যবহৃত নানা জিনিসপত্রসহ দারুণ এক সংগ্রহশালা। ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পার্থক্য ছাড়াও যুক্তরাজ্যের এই শহরটি আরেক বিশেষ কারণে অন্য শহর থেকে আলাদা! তা হচ্ছে ক্রিকেট! ইংলিশরা ক্রিকেটের জন্মদাতা হলেও এই আধুনিক ইংল্যান্ডে ক্রিকেট কিন্তু সবচেয়ে জনপ্রিয় নয়। লন্ডন যেমন ফুটবলের শহর, কার্ডিফ রাগবির। প্রতিটি শহরই দখল করে আছে এই দুই ক্রীড়া ইভেন্ট। কিন্তু টনটনে শুধুই ক্রিকেট। বলা যায় এটি বিশুদ্ধ এক ক্রিকেট নগরী!
আর বিশুদ্ধ এই ক্রিকেট নগরীতে আজ উত্তেজনার আগুন! মুখোমুখি বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বিশ্বকাপের লড়াইয়ে টিকে থাকতে হলে দুই দলকেই জিততে হবে। দুই দলের জন্যই ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচ। সেমিফাইনালের আশা টিকিয়ে রাখতে হলে জয়ের বিকল্প আর কিছুই নেই। আজকের ম্যাচে খেলতে নামার আগে দুই দলই একই সরলরেখায়। একটি করে জয়, একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত, দুই ম্যাচে হার। পয়েন্ট টেবিলে এগিয়ে যাওয়ার এটিই দারুণ সুযোগ। টনটন শহরের প্রাণকেন্দ্রের এই কাউন্টি গ্রাউন্ড বেশ ছোট। ক্রিস গেইল কিংবা আন্দ্রে রাসেলের স্বাভাবিক ছক্কাগুলোও গ্যালারির বাইরে গিয়ে পড়ার কথা! তবে সমারসেটের এই কাউন্টি গ্রাউন্ড যে কেবলই ছক্কা হাঁকানোর মাঠ, তা কিন্তু নয়! এই মাঠে বিশ্বকাপের চলতি আসরের প্রথম ম্যাচে দুই ইনিংস মিলে ছক্কা হয়েছে মাত্র দুটি! ক্রিকেট এমন এক গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা এখানে পরিসংখ্যান কিংবা অতীত রেকর্ড কোনো ফ্যাক্টর নয়! তারপরেও জানতে ভালো লাগে এই যা। দুই দেশের ২০ বছরের ক্রিকেটাতিহাসে ৩৭টি একদিনের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তার মধ্যে বাংলাদেশের জয় ১৪, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ২১। আবার সাম্প্রতিকের কথা চিন্তা করলে, শেষ ৪ ম্যাচেই জিতেছে টাইগাররা। এই ইতিহাসে ম্যাচে কোনো কাজে আসে না! বাংলাদেশ নম্বরে থেকে এবারের বিশ্বকাপটা শুরু করেছে। ক’দিন আগে আইসিসি তাদের র্যাঙ্কিং আপডেট করেছে। সেখানে মাশরাফিদের টপকে এক ধাপ উপরে উঠে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ! তাহলে ক্যারিবীয়রা আজ ফেবারিটের তকমা গায়ে পরে খেলতে নামছে? একদিন আগে তামিম ইকবালকে এ কথা মনে করিয়ে দিতেই যেন কিছুটা হুঙ্কারের সুরে বললেন, ‘এই ম্যাচে আমরাই ফেবারিট!’ তামিমের কথায় আছে দারুণ যুক্তি! এই তো সেদিন, আয়ারল্যান্ডে ওদেরকে টানা তিন ম্যাচে হারিয়ে তিনজাতি টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। ত্রিদেশীয় সিরিজে বাংলাদেশের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ! না হয় বোঝা গেল, আইপিএলে ব্যস্ততার কারণে সে ম্যাচে খেলেননি গেইল, রাসেল, ব্রাভো, হেটমায়ার। কিন্তু এরা সবাই থাকার পরও কিছুদিন আগে এই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদের মাটিতে হারিয়েছে বাংলাদেশ। মাশরাফিদের জন্য প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে, সাউদাম্পটনে ইংলিশদের বিরুদ্ধে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাসে চোট লাগা ওয়েস্ট ইন্ডিজ আজ তাদের সামনে খেলতে নামছে! স্বভাবতই দলটি এখন খেপাটে! মাথা খাঁটিয়ে এমন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে কিভাবে বধ করতে হবে তা ক্ষুরধার মস্তিষ্কের ক্যাপ্টেন মাশরাফি খুবই ভালো করেই জানেন। কন্ডিশনের সুবিধা কিভাবে নিতে হবে তার জন্য ইংলিশম্যান কোচ স্টিভ রোডস তো আছেনই! আর ‘বিভীষণ’ এর কাজ করার জন্য উইন্ডিজ কিংবদন্তি কোটর্নি ওয়ালশই যথেষ্ট। সব প্রস্তুতি শেষ। এখন কেবল অপেক্ষা!