শিরোনাম
বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

সংসদের দায়িত্বে রওশন, দল চালাবেন জি এম কাদের

যেভাবে চলবে জাতীয় পার্টি

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নির্দেশনা অনুযায়ী পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও তার ছোট ভাই জি এম কাদের দল পরিচালনা করবেন। আর জাতীয় সংসদের দায়িত্বে থাকবেন তার স্ত্রী বেগম রওশন এরশাদ। এইচ এম এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টির সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মী এ রকম অভিমত প্রকাশ করেছেন। জীবদ্দশায় এরশাদ জি এম কাদেরকে পার্টির দায়িত্ব দেওয়ার পর থেকেই দলের একটি অংশ দলীয় কার্যক্রম এড়িয়ে চলতে থাকেন। তখন আশঙ্কা করা হয়েছিল, এরশাদের অবর্তমানে দলের চেয়ারম্যান এবং জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা কে হবেন তা নিয়ে জি এম কাদের ও বেগম রওশন এরশাদের নেতৃত্বে দল আবার ভাঙতে পারে। কিন্তু এরশাদের মৃত্যুর পর সবাই এক কাতারে দাঁড়িয়েছেন। নেতারা বলছেন, এইচ এম এরশাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে তার সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাতীয় পার্টি চলবে। কোনোভাবেই দল ভাঙতে দেওয়া যাবে না। বেগম রওশন এরশাদ জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার ভূমিকায় থাকবেন। আর জি এম কাদের পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে দল পরিচালনা করবেন। পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ সোমবার জাতীয় সংসদে জানাজা শেষে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এরশাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পার্টি পরিচালনা হবে। এরশাদের স্বপ্ন পূরণে ঐক্যবদ্ধভাবে তারা জাতীয় পার্টিকে সামনে এগিয়ে নেবেন। পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যারা দলে বিশৃঙ্খলা করতে চান, তারা সুবিধা করতে পারবেন না। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের দলকে একতাবদ্ধ রাখবেন। দল ভেঙে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। সাবেক মহাসচিব পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের আন্তরিক চেষ্টা হবে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখা। দলকে সম্মানজনক অবস্থানে রাখতে ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।’ জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের কাছে এরশাদ ছিলেন নায়কসম। তারা এরশাদকে ডাকতেন ‘পল্লীবন্ধু’ নামে। কোনো কোনো সিদ্ধান্তে নেতা-কর্মীদের মধ্যে ভিন্নমত দেখা দিলেও শেষ পর্যন্ত এরশাদের কথাই তারা মেনে নিতেন। এরশাদের কথার বিপক্ষে কখনই যাননি নেতা-কর্মীরা। তাই এরশাদ যেভাবে চেয়েছেন সব সময় সেভাবেই চলেছে জাতীয় পার্টি। জানা যায়, এরশাদ গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পরই তার দলের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। একেবারে শয্যাশায়ী হওয়ার আগে বিষয়টি আঁচ করতে পেরে এরশাদও জি এম কাদেরকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব দেন। তার জীবনাবসানের পরপরই দলে নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। তবে জাপার সিনিয়র নেতাসহ কর্মীরা বলছেন, এরশাদ যাকে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন তার নেতৃত্বেই চলবে দল। এরশাদ ৩২ বছরে দলকে একটি অবস্থানে রেখে গেছেন। তার অনুপস্থিতিতে দল ভাঙা নয়, বরং আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হবে। জাপা নেতারা বলছেন, ’৯০-এ ক্ষমতা ছাড়ার পর এরশাদ ও জাতীয় পার্টি টিকে থাকবে এমন ধারণা ছিল না অনেকের। প্রায় ৩০ বছর ধরে জাপা টিকে আছে এবং প্রধান দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়া-না যাওয়া অনেকাংশে নির্ভর করে জাতীয় পার্টির সমর্থনের ওপর। এ ক্ষেত্রে এরশাদের ভূমিকাই ছিল মুখ্য। এদিকে এরশাদের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া রংপুর-৩ আসনে কে প্রার্থী হবেন সে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। জানা গেছে, বেগম রওশন এরশাদ তার ছেলে শাদ এরশাদকে এ আসন থেকে মনোনয়ন দিতে চাইছেন। রংপুরবাসী এরশাদের ছোট ভাই হুসেইন মোর্শেদকে এ আসনে চাইছেন। এ ছাড়া এরশাদের ভাতিজা আসিফ শাহরিয়ারের নামও আলোচনায় রয়েছে। পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মামুন বলেন, পার্টির প্রাণশক্তি ছিলেন এরশাদ। তার মৃত্যুর শোক শক্তিতে পরিণত করে দলকে এগিয়ে নিতে হবে। আমাদের কাছে মৃত এরশাদ এখন জীবিত এরশাদের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। পার্টির সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, ‘দলে কোনো বিভক্তি হবে না। বিভক্তি করতে দেব না।’ তিনি বলেন, সঠিকভাবে রাজনীতি করতে পারলে জাতীয় পার্টি এগিয়ে যেতে পারবে।

সর্বশেষ খবর