শুক্রবার, ১৯ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

ভুটান থেকে প্রথমবারের মতো নদীপথে এলো পাথর

নদীপথে বাণিজ্যে এটা নতুন অধ্যায়ের সূচনা : রিভা গাঙ্গুলী দাশ

সোনারগাঁ প্রতিনিধি

ভুটান থেকে প্রথমবারের মতো নদীপথে এলো পাথর

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে মেঘনা ঘাটে গতকাল ভারতীয় হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলী দাশকে শুভেচ্ছা জানানো হয় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রথমবারের মতো ভারতের নদীপথ ব্যবহার করে ভুটান থেকে বাংলাদেশে পাথর আমদানি শুরু করেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ মেঘনা ঘাটে আসা পাথরের প্রথম চালান আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলী দাশ, ভুটানের রাষ্ট্রদূত সোনম টি রাবগি এবং বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান। গতকাল আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে নদীপথে বাণিজ্যের এই নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক ইয়াশা সোবহান, বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর এম মাহবুব উল ইসলাম, শিপিং  করপোরেশনের অতিরিক্ত সচিব আতিকুর রহমান, নৌ-মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মহিবুল ইসলাম প্রমুখ। পাথরের প্রথম চালান গ্রহণে গতকাল বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান নারায়ণগঞ্জের মেঘনা ঘাটের বসুন্ধরা জেটিতে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। এ সময় তিনি সহযোগিতার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানে ভারতীয় হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলী দাশ বলেন, ‘এ উদ্যোগের ফলে তিন দেশই লাভবান হবে। ভুটান থেকে ভারত হয়ে বাংলাদেশে নদীপথে পাথর আমদানির মধ্য দিয়ে দেশ তিনটির বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। এটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এই ঐতিহাসিক উদ্যোগে ভারত-ভুটান-বাংলাদেশকে নিয়ে আমরা নতুন স্বপ্ন দেখতে পারি। আগামী দিনগুলোর বাণিজ্য এভাবেই হওয়া উচিত। এতে তিন দেশের সম্পর্কে আরও উন্নতি ঘটবে এবং আমরা সেটিকে আরও নতুন মাত্রায় নিয়ে যেতে পারব।’

ভুটানের রাষ্ট্রদূত সোনম টি রাবগি বলেন, ‘এ উদ্যোগের মাধ্যমে আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নতি ঘটবে। এতে ভারত, ভুটান ও বাংলাদেশ একদিকে উপকৃত হবে, অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যকার সম্পর্কের উন্নতি হবে। এভাবে ব্যবসায় পরিবহন ও অন্যান্য খরচও কমবে। নদীপথে পরিবহন একটি পরিবেশবান্ধব উপায়ও।’ বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর এম মাহবুব উল ইসলাম বলেন, ‘এটি আমাদের ত্রিদেশীয় যোগাযোগ বৃদ্ধি করবে। দেশগুলোর বাণিজ্যিক সম্পর্ক, জাতিগত সংযোগ ও সম্পর্ক বাড়াতে সহায়তা করবে।’ তিনি বলেন, ‘ড্রেজিং ও নদীপথের অন্যান্য কার্যক্রমে বসুন্ধরা গ্রুপ আমাদের অন্যতম অংশীদার। তারা খুবই আন্তরিক। নদীপথের যে কোনো সমস্যা সমাধানে সব সময় বিআইডব্লিউটিএ প্রস্তুত।’

এ সময় সংশ্লিষ্টরা বসুন্ধরা গ্রুপের প্রশংসা করে বলেন, এর মাধ্যমে ত্রিদেশীয় বাণিজ্যের নতুন দ্বার উন্মোচিত হলো। ভুটানের ফুয়েন্টশোলিং থেকে আসামের ধুবড়ি বন্দর দিয়ে নদীপথে সরাসরি নারায়ণগঞ্জে এসে পৌঁছয় জাহাজ। এভাবেই প্রথমবারের মতো ভারতীয় নৌপথ ও ভারতকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে ভুটান থেকে পাথর আমদানি শুরু হলো বাংলাদেশে। আর তা শুরু করল বসুন্ধরা গ্রুপ। ভারতের নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী মনসুখ মান্ডব্য ১২ জুলাই ডিজিটালভাবে এমভি এএআই নামের ভারতের অভ্যন্তরীণ নৌ-কর্তৃপক্ষের এই জাহাজটির যাত্রার সূচনা করেন। আসামের ধুবড়ি বন্দর থেকে ১৬০ কিলোমিটার দূরে ভুটানের ফুয়েন্টশোলিং থেকে ট্রাকে করে পাথর আনা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ভুটান স্থলপথ ব্যবহার করে বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পাথর রপ্তানি করে আসছে। জাহাজটি এক হাজার মেট্রিক টন পাথর পরিবহন করছে, যা স্থলপথে পরিবহন করতে ৫০টিরও বেশি ট্রাক প্রয়োজন হতো। আনুষ্ঠানিকতা শেষে জেটিতে আসা পাথরের প্রথম চালানটি আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করে বসুন্ধরা গ্রুপ। এর পরপরই শুরু হয় জাহাজ থেকে পাথর আনলোডের কাজ। নতুন চালু হওয়া এই রুটে পণ্য পরিবহনে অন্তত ১০ দিন সময় কম লাগবে। পাশাপাশি পরিবহন খরচ ৩০ শতাংশ কমবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সর্বশেষ খবর