রবিবার, ২১ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা
ছেলেধরা নিয়ে গুজব, পুলিশ সদর দফতরের সতর্কতা

আসামিদের ধরার খবর নেই পুলিশ ব্যস্ত মিন্নি নিয়ে

আইনজীবীরা বরগুনায়

নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা ও বরগুনা প্রতিনিধি

আসামিদের ধরার খবর নেই পুলিশ ব্যস্ত মিন্নি নিয়ে

বরগুনায় আলোচিত রিফাত হত্যা মামলার পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের কোনো আগ্রহ নেই। বরগুনার পুলিশ শুধু মিন্নিকে নিয়েই ব্যস্ত রয়েছেন। মিন্নিদের বাড়ির চারপাশ ঘিরে রেখেছে পুলিশ। তার বাবার ওপর চলছে কঠোর নজরদারি। তারা এক রকম গৃহবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। এ অবস্থায় কারাগারে মেয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর। এদিকে মিন্নিকে আইনি সহায়তা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন শতাধিক আইনজীবী। বরগুনা কারাগারে মেয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর সাংবাদিকদের বলেন, তার মেয়ে খুবই অসুস্থ, চিকিৎসার প্রয়োজন। মিন্নি পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছে রিমান্ডে নিয়ে তার ওপরে শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। মোজাম্মেল হোসেন কিশোর মিন্নির উদ্ধৃতি দিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, তাকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। পুলিশের শিখানো জবানবন্দী না দিলে আবারও রিমান্ডে আনার হুমকি দেওয়া হয়েছে।  মিন্নির বাবা প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পুলিশের এই ভূমিকার উচ্চতর তদন্তের দাবি জানিয়ে বলেন, আমি আজ এক অসহায় কন্যা সন্তানের পিতা হয়ে এর সঠিক তদন্ত দাবি করছি। মিন্নিকে আইনি সহায়তা দিতে গতকাল ঢাকা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি থেকে আইনজীবীদের একটি বড় দল বরগুনায় পৌঁছেছেন। এ ছাড়া বরগুনা জেলা আইনজীবীরাও মিন্নির পক্ষে থাকবেন। সমিতির সম্পাদক অ্যাড. মাহাবুল বারী আসলাম মিন্নির পক্ষে ওকালতনামায় স্বাক্ষর দেন। এ সময় অ্যাড. মাহাবুল বারী আসলাম বলেন, ইতিমধ্যে মিন্নির স্বাক্ষরিত ওকালতনামা আমরা পেয়েছি। আজ (রবিবার) সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট  আদালতে  জামিনের আবেদন করা হবে। আশা করছি আদালত আমাদের জামিন আবেদন মঞ্জুর করবেন। ইতিমধ্যে ঢাকা থেকে চারজন আইনজীবী বরগুনায় পৌঁছেছেন। বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), নিজেরা করির আইনজীবীরা এই সহায়তা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য ও সুপ্রিম  কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না জানান, শনিবার ঢাকা থেকে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) আইনজীবীরা এবং বরিশাল, পটুয়াখালী ও ঝালকাঠি থেকে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টসহ (ব্লাস্ট) বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের আইনজীবীরা বরগুনার পথে যাত্রা করেছেন। মিন্নির জামিনের জন্য চেষ্টা চালানো হবে। তিনি বলেন, ‘বরগুনা থেকে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিয়েছি। দেশের সব আইনজীবীর সহানুভূতির জন্য এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। জাতির কাছে একটা ভুল বার্তা গেছে যে, বরগুনা আইনজীবী সমিতি মিন্নিকে আইনি সহায়তা দিবে না। কিন্তু সমিতির নেতৃবৃন্দ এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। তারাও মিন্নিকে আইনি সহায়তা দেবেন বলে আমাকে জানিয়েছেন।’ গত শুক্রবার আদালতে অসহায় মিন্নির বাবার আহাজারির দৃশ্য তোলপাড় সৃষ্টি করে গোটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ সময় মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর আহাজারি করে বলতে থাকেন, ‘আমার মেয়েকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে আজকে তারা কী করতেছে। আমি সারা বিশ্ব ও সারা বাংলাদেশের মানুষকে জানাতে চাই। তারা আমার মেয়েকে কোর্টে এনে তালাবদ্ধ করে রেখেছে। এই জবানবন্দি শিখাইয়া, বলাইয়া এবং জীবনের ভয়ভীতি দেখিয়ে তারা আমার মেয়ের মুখ থেকে স্বীকারোক্তি নিতেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বাংলাদেশের যত আইনজীবী ও বুদ্ধিজীবী আছে তাদের প্রতি আমার নিবেদন যে, আপনারা দেখুন, কী হচ্ছে এখানে। অন্যায়ভাবে আমার প্রতি জুলুম করা হচ্ছে। খুনের আসামি যারা তারা আমার মেয়েকে ফাঁসিয়েছে। আমার পরিবার এখন গৃহবন্দী। ছেলেমেয়েদের স্কুল, কলেজে যাওয়া বন্ধ। আমার হাট-বাজার বন্ধ। আমার সবকিছু বন্ধ। আপনারা দেখুন, তারা ১৬৪ ধারার নামে আমার মেয়ের সঙ্গে কী করতেছে। আমি নিজে আত্মহত্যা করব, আমি বাঁচতে চাই না। ৫ দিনের রিমান্ডের দুই দিনে তারা আমার মেয়েকে শেষ করে ফেলছে। আকুতি করে বলেন, বাংলাদেশে কোনো আইন নাই। আমি প্রধানমন্ত্রীকে জানাতে চাই, আপনি কী করেন প্রধানমন্ত্রী। আজকে জীবন নিয়ে খেলা চলছে। আজকে আমার মেয়ের জীবনকে বিপন্ন করে দিয়েছে। আপনি স্বজনহারা, আমার মেয়েও স্বজনহারা, স্বামীহারা। তারা আমার মেয়ের সঙ্গে কী করছে দেখুন। আমি সহ্য করতে পারছি না। এসব বলতে গিয়ে অঝোরে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। করুণ সুরে আরও বলেন, এত নির্যাতনের শিকার কেন আমার মেয়ে। কী অপরাধ তার স্বামীকে বাঁচাতে গিয়ে আজকে। শেষ করে ফেলছে আমার মেয়েকে। আদালতে আনার আগে গত রাতে এক এসআই আমার বাসা থেকে প্রেসক্রিপশন নিয়ে আসছে।’ 

সর্বশেষ খবর