শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

মাঠে ফিরছেন ক্রিকেটাররা

বিসিবির সঙ্গে বৈঠক দাবি মানার আশ্বাস

মেজবাহ্-উল-হক

মাঠে ফিরছেন ক্রিকেটাররা

বৈঠকের পর গতকাল রাতে সংবাদ সম্মেলনে নাজমুল হাসান পাপন ও সাকিব আল হাসান

অবশেষে সমস্যা সমাধান হয়েছে। ক্রিকেটারদের দাবি মেনে নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। শুক্রবার থেকে মাঠে ফিরছেন সাকিবরা। যোগ দিচ্ছেন ভারত সফরের অনুশীলন ক্যাম্পে। গতকাল রাতে ক্রিকেটারদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিল বিসিবি। রাত ১১টায় সংবাদ সম্মেলনে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জানিয়েছেন, ক্রিকেটারদের দাবি মেনে নিয়েছে বিসিবি। সাকিব আল হাসান বলেছেন, বোর্ডের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছে বিসিবি। তবে বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত সন্তুষ্ট হওয়ার কিছু নেই। গত সোমবার ১১ দফা দাবি জানিয়ে আন্দোলন শুরু করেন ক্রিকেটাররা। তাদের অভিযোগ ছিল, সঠিক পথে চলছে না দেশের ক্রিকেট। ক্রিকেটারদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এক দিন আগে সংবাদ সম্মেলনে ধমকের সুরে কথা বলেছিলেন বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। তিনি ক্রিকেটারদের রীতিমতো ধুয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পর চিত্র পাল্টে যায়। বিকাল থেকেই ক্রিকেটারদের সঙ্গে বসার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। এদিকে আন্দোলনরত ক্রিকেটাররা তাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে গুলশানের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করেন। আগের ১১ দফা দাবির সঙ্গে সেখানে যোগ করা হয় আরও দুই দফা। আর এই দুই দফা হলো রাজস্বের ভাগ দেওয়া ও নারী ক্রিকেটারদের সঙ্গে পুরুষ ক্রিকেটারদের ভারসাম্য করা। মোট ১৩ দফা দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে একটি চিঠি পাঠান ক্রিকেটাররা। তারপর ক্রিকেটারদের প্রতিনিধি হিসেবে ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান সংবাদমাধ্যমের সামনে সেই ১৩ দফা দাবি তুলে ধরেন। ক্রিকেটারদের ১২তম দাবিতে বলা হয়েছে, ‘ক্রিকেটের ব্যবস্থাপনায় আমরা স্বচ্ছতা চাই। জবাবদিহি চাই। (বোর্ডে) যে রেভিনিউ (রাজস্ব) হচ্ছে, তার ন্যায্য হিস্যা ক্রিকেটারদের চাই।’ উদাহরণ হিসেবে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারদের বোর্ডের আয়ের ভাগ পাওয়ার কথা বলেন মুস্তাফিজুর রহমান। রাজস্ব কতটুকু পাবে তা নির্ধারণের ব্যাপারে একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলার কথাও বলেছেন তারা। ক্রিকেটারদের ১৩তম ও শেষ দফা দাবি ছিল, ‘নারীদের ক্ষেত্রেও একই সংস্কার। নারীদেরও তাদের খেলার ভিত্তিতে ন্যায্য হিস্যা দিতে হবে। সেখানে উল্লেখ আছে, পুরুষের সমান সম্মান ও পারিশ্রমিক পাওয়ার কথা।’ এ ছাড়া ১৩ দফার মধ্যে সাকিবরা যেসব সংস্কারের কথা বলেছেন, নারীদের ক্রিকেটেও তা বাস্তবায়ন করতে হবে। আর ক্রিকেটার হিসেবে ছেলেদের সমান সম্মানের কথাও চিঠিতে উল্লেখ করেছেন ক্রিকেটাররা। তবে বোর্ড সভাপতি জানিয়েছেন, তারা আগের ১১ দফা দাবি মেনে নিয়েছেন। পরের দুটি দাবির ব্যাপারে জানেন না। সাকিব বলেছেন, পরের দুই দাবি নিয়ে পরে আলোচনা হবে। গত রাতে সংবাদ সম্মেলনে হাসতে হাসতে দাবি মেনে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন নাজমুল হাসান। অথচ এক দিন আগেই তিনি কড়া ভাষায় বলেছিলেন, খেলোয়াড়দের এই আন্দোলন ক্রিকেটকে ধ্বংস করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র। তিনি জানেন, কারা এ ষড়যন্ত্র করছেন। তাদের মুখোশ খুলে দেওয়ার কথাও জানান। তিনি আরও বলেছিলেন, ক্রিকেটাররা কেন তার সঙ্গে আলোচনা না করে আন্দোলনে নামলেন? গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি পরিষ্কার করে ক্রিকেটারদের মুখপাত্র জানিয়েছেন, এখানে ষড়যন্ত্রের কিছু নেই। আর গত পাঁচ বছরে বোর্ডের সঙ্গে ক্রিকেটাররা অনেকবার আলোচনা করেছেন। কিছু দাবি মানা হয়েছিল, কিছু আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। আর বেশির ভাগ দাবিই মানা হয়নি। তাই বাধ্য হয়েই আন্দোলনে নেমেছেন ক্রিকেটাররা। তবে আগের দিন হার্ডলাইনে থাকলেও গতকাল দুপুরে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পর নমনীয় হয়ে যান বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন কোয়াবের (ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) সভাপতি ও বোর্ড পরিচালক নাঈমুর রহমান দুর্জয়। গণভবন থেকে বেরিয়ে বোর্ড সভাপতি ক্রিকেটারদের দাবি মেনে নেওয়ার কথা জানান। তবে সাকিব-মুশফিকরা বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা না করে গুলশানের একটি হোটেলে জমায়েত হন। সংবাদ সম্মেলন শেষে তারা নিজেরা সিদ্ধান্ত নেন বোর্ড সভাপতির সঙ্গে দেখা করার। বোর্ড সভাপতি ক্রিকেটারদের অভিভাবক হয়েও সংবাদ সম্মেলনে মেজাজ হারিয়ে ক্রিকেটারদের প্রতি অভিযোগ করেছিলেন। কিন্তু ক্রিকেটাররা উল্টো সম্মানের সঙ্গে তাদের দাবি উত্থাপন করেছেন। সাকিব আল হাসান বলেন, ‘বোর্ডের কারও সঙ্গে আমাদের ব্যক্তিগত ক্ষোভ, দুঃখ কিংবা বিরাগ নেই। আমরা সবাই মিলেই ক্রিকেট বোর্ড। দ্রুত সমস্যার সমাধান চাই। বোর্ডের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘আমরা কিছু দাবি তুলে ধরেছি। যেগুলো যৌক্তিক।’ সংবাদ সম্মেলনে সাকিব আল হাসান ছাড়াও মুশফিকুর রহিম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, আবদুর রাজ্জাক, অলোক কাপালি, তুষার ইমরানসহ অধিকাংশ পেশাদার ক্রিকেটার উপস্থিত ছিলেন। আয়ের দিক দিয়ে ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের পরই এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের বেতন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটারদের সমান। তা ছাড়া পেশাদার ক্রিকেটারদের স্বার্থ দেখার জন্য যে কোয়াব গঠিত হয়েছিল, সেই কোয়াবের সভাপতি নাঈমুর রহমান দুর্জয় নিজেই বিসিবি বোর্ড পরিচালক এবং সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পালও বিসিবির সঙ্গে যুক্ত। ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কীভাবে ক্রিকেটারদের স্বার্থ রক্ষায় ভূমিকা রাখবেন? এ প্রশ্ন পেশাদার ক্রিকেটারদের। তাই কোয়াবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন তারা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর