রবিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

দালাল আইনে মামলার আসামিরাই রাজাকার তালিকায়

আনিস রহমান

এবারের মহান বিজয় দিবসকে সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে। ইতিমধ্যে সারা দেশে প্রায় আড়াই হাজার ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা গেছে। দালাল আইনে মামলার আসামিদের এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এই তালিকা তৈরির কাজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো দাবি করেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজাকারের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হলেও এ কাজ করতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। এই তালিকা তৈরি করতে জেলা প্রশাসকদের কাছে ডিও লেটার পাঠিয়ে সে রকম সুফল আসছে না। কর্মকর্তারা জানান, এমন পরিস্থিতিতে ১৯৭২ সালের দালাল আইনে স্বাধীনতাবিরোধীদের বিরুদ্ধে সারা দেশে যে খুন, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুণ্ঠনের অভিযোগে মামলা হয়েছিল সেই মামলার আসামিদের নাম রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। পরবর্তীতে এই তালিকা আরও সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। জেলা প্রশাসকরা জানান, এ তালিকা সংগ্রহে তাদের নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তাদের মতে, ৪৮ বছর আগের ঘটনার যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ মিলছে না। যুদ্ধকালে ২০ (ওই সময় পূর্ব পাকিস্তান/বাংলাদেশে জেলা ছিল ২০টি) জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাকিস্তান সরকারের কাছ থেকে নেওয়া ভাতার তালিকাও কাক্সিক্ষতভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে এর বাইরে আরও একটি বাধার কথা উঠে এসেছে তালিকা প্রণয়নে জড়িতদের ভাষ্যে। তারা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধকালে স্বাধীনতার বিরোধিতাকারীদের অধিকাংশই ছিল জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ ও নেজামে ইসলামীর নেতা-কর্মী। এসব ব্যক্তির অধিকাংশই মারা গেছেন। যারা জীবিত রয়েছেন তাদের বড় অংশের বিরুদ্ধেই মামলা হয়েছে, কারও কারও মৃত্যুদন্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি হয়েছে। অনেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, রাজাকারের তালিকা করতে এরই মধ্যে ডিসিদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত সারা দেশের বিভিন্ন সরকারি দফতরে এক হাজারের বেশি নথি পাওয়া গেছে। প্রায় আড়াই হাজার ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা গেছে। তবে এ সংখ্যা কাক্সিক্ষত সংখ্যার (প্রচলিত ধারণামতে, অর্ধলক্ষাধিক ব্যক্তি সে সময় পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীকে সহায়তা করেছিল) চেয়ে অনেক কম। এ বিষয়ে তাই আরও গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজাকারের তালিকা প্রণয়ন সংক্রান্ত একটি বৈঠক সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে অনুষ্ঠিত হয়। সূত্র জানায়, বৈঠকেও এসব বাধার তথ্য উঠে আসে। বলা হয়, ওই সময়ের ডিসিদের (২০ জেলা) কাছে সরকারি ভাতা নেওয়া রাজাকারদের তালিকা ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার এত বছর পর অধিকাংশ জেলায়ই সেই তালিকা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ১৯৭৫-এর পটপরিবর্তনের পর এসব তথ্য-উপাত্ত সরিয়ে ফেলা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জাতীয় সংসদে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, আমাদের কাছে কিছু দলিলপত্র আছে সেই দলিলপত্রের সহায়তায় ডিসেম্বরের মধ্যে রাজাকারের তালিকা তৈরির চেষ্টা চলছে। এটা হচ্ছে চলমান প্রক্রিয়া।

সর্বশেষ খবর