সোমবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
বাজারজুড়ে অস্থিতিশীলতা

পিয়াজ নিয়ে রিট, রাস্তায় মারামারি, ক্রেতা কমছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর সচিবালয়-প্রেস ক্লাবসংলগ্ন রাস্তায় একটি ট্রাকে পিয়াজ বিক্রি করা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আরও একটি ট্রাক  সেখানে যোগ দেয়। শুরু হয় টিসিবির দুই ট্রাকে করে খোলা বাজারে পিয়াজ বিক্রি। এর একটি ট্রাকে দেওয়া হয় নারীদের, অন্যটিতে চলে পুরুষ ক্রেতাদের জন্য পিয়াজ বিক্রি। দুই ট্রাকে বিক্রি হলেও অসাধু কিছু ক্রেতা লাইনের সামনে গিয়ে পিয়াজ কিনতে চায়। এ নিয়ে লাইনের পেছন থেকে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন ক্রেতারা। শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি। একপর্যায়ে সেখানে কিছুটা হট্টগোল সৃষ্টি হয়।

গত কয়েকদিনে টিসিবির সুলভ মূল্যের পিয়াজ বিক্রির ট্রাকে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন ক্রেতা। এই ভিড় সামলে সুষ্ঠুভাবে ক্রেতাদের হাতে পিয়াজ তুলে দেওয়ার জন্য পূর্ব প্রস্তুতি না থাকায় বিক্রির পুরো সময়েই হাতাহাতি ও লাইন ভাঙার হিড়িক ছিল পিয়াজের ট্রাকগুলোকে কেন্দ্র করে। গতকাল রাজধানীর মিরপুরের কচুক্ষেত, মিরপুর ১০ নম্বর, ফার্মগেটের খামারবাড়ি এলাকায় এ চিত্র দেখা গেছে। এসব এলাকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিশৃঙ্খলা দেখা গেছে কচুক্ষেত এলাকায়। সেখানে সকাল ৯টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়েও শেষ পর্যন্ত পিয়াজ না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন অনেক ক্রেতা। কাউকে কাউকে দেখা গেছে লাইনে না দাঁড়িয়ে পাশ থেকে পিয়াজ সংগ্রহ করতে। বেলা ১২টার দিকে কচুক্ষেত গিয়ে দেখা যায়, ট্রাকের কাছে জটলা বেঁধে আছেন নারী ও পুরুষ ক্রেতারা। জটলার কয়েক গজ দূরেই দুটি সারিতে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকশ ক্রেতা। কিন্তু যারা লাইন ভেঙে সামনে এসে জটলায় ঢুকতে পারছেন, পিয়াজ কিনতে পেরেছেন কেবল তারাই।

পিয়াজ নিয়ে রিট : পিয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণের নির্দেশনা চেয়ে হাই কোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে। পিয়াজের মূল্যবৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানে কমিটি গঠনেরও নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে এই রিটে। গতকাল  হাই কোর্টে রিট আবেদনটি দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানভীর আহমেদ। পরে তিনি রিটে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের চেয়ারম্যান, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ ও এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্টকে বিবাদী করা হয়েছে।

ক্রেতাশূন্য বাজার : সিলেট ব্যুরো জানায়, সিলেটে পিয়াজের দাম কমলেও পাইকারি বাজার ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়েছে। অগ্নিমূল্যের কারণে খুচরা দোকানগুলোতে পিয়াজের চাহিদা কমে যাওয়ায় ব্যবসায় মারাত্মক ধস নেমেছে পাইকারি বাজারে। গতকাল সিলেটের পাইকারি বাজার কালিঘাট পিয়াজপট্টি ঘুরে দেখা গেছে আড়তদাররা অলস সময় কাটাচ্ছেন। যে দু-একটি আড়তে ক্রেতারা এসেছেন তারা এক বস্তার বেশি পিয়াজ কিনছেন না। ক্রেতা কমে যাওয়ায় আড়তে থাকা পিয়াজ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। লোকসান দিয়েও তারা বিক্রি করতে পারছেন না পিয়াজ। আগামী দু-একদিন এ অবস্থা বিরাজ করলে আড়তে পিয়াজ পচে যাওয়ারও আশঙ্কা করছেন তারা। আড়তদাররা জানান, গত শনিবারও তারা প্রতিকেজি পিয়াজ ১৮০-২০০ টাকায় বিক্রি করেছেন। কিন্তু গতকাল রবিবার সকাল থেকে ভারত থেকে চোরাই পথে আসা পিয়াজ বাজারে ঢুকতে থাকে। ফলে ঘণ্টায় ঘণ্টায় পড়তে থাকে দাম। গতকাল সন্ধ্যায় পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি পিয়াজ ১২০ টাকায়ও বিক্রি হতে দেখা গেছে। এদিকে দাম কমলেও বাজার ক্রেতাশূন্য। একদিকে পিয়াজের সরবরাহ বৃদ্ধি অন্যদিকে ক্রেতা কমে যাওয়া, এমন বৈপরীত্য অবস্থা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন আড়তদাররা।

বাজারে নতুন পিয়াজ : মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, রবিবার সকাল থেকে মাদারীপুর শহরের পুরান বাজারে নতুন পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে, তবে দাম কমেনি। মাদারীপুর পুরান বাজারের তরকারি বিক্রেতা তসলিম বেপারী বলেন, মাদারীপুর শহরের আশপাশের খেত থেকে কৃষকরা নতুন পিয়াজ তুলে সরাসরি আমাদের দিয়ে যাচ্ছেন। আমরা পিয়াজের শাকসহ আঁটি করে বিক্রি করছি। তিনি আরও জানান, কলি ছাড়াই আঁটিতে প্রায় আড়াইশ গ্রাম পিয়াজ আছে। প্রতি আঁটি পিয়াজের দাম পড়ছে ৩০ টাকা। সদর উপজেলার পাঁচখোলার কয়েকজন কৃষক জানিয়েছেন, বাজারে দাম ভালো থাকায় অপরিপক্ব হওয়া সত্ত্বেও পিয়াজ খেত থেকে তুলে বিক্রি করতে শুরু করেছেন। নতুন পিয়াজ পেয়ে খুশি স্থানীয় ক্রেতারাও। হানিফ নামে এ ক্রেতা বলেন, নতুন পিয়াজের দাম অনেক কম। তাই আমরা খুশি। পুরান পিয়াজের তুলনায় নতুন পিয়াজের দামও কম। এদিকে বাজার ঘুরে দেখা যায়, পুরনো পিয়াজের দামেও প্রভাব পড়েছে। অনেক ক্রেতা ও বিক্রেতা জানান, পুরনো পিয়াজও কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা করে কমেছে। মাদারীপুরের বিভিন্ন বাজারে শনিবার রাতে প্রতি কেজি পিয়াজ ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর রবিবার সকালে নতুন পিয়াজ  প্রতি আঁটি বিক্রি হয় ৩০ টাকা দরে। প্রতি আঁটিতে আনুমানিক ২৫০ গ্রাম হবে। পুরান পিয়াজ ২২০ থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসপির নির্দেশে মাইকিং করে পিয়াজ বিক্রি : চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার টিএম মোজাহিদুল ইসলামের নির্দেশে মজুদকৃত ৪০ টন পিয়াজ ১৫০ টাকা দরে বিক্রি শুরু হয়েছে। রবিবার সকাল থেকে জেলার শিবগঞ্জে এই পিয়াজ বিক্রি শুরু হয়েছে। জানা গেছে, শিবগঞ্জ বাজারে পিয়াজের আড়তদার তাজেল মেম্বার, আজিজুল হক, নাসিরুল হক, জোহরুল ও আবদুল লতিফ তাদের গুদামে প্রায় ৪০ টন পিয়াজ মজুদ রেখেছে বলে শনিবার সন্ধ্যায় জানতে পারে পুলিশ। পরে পুলিশ সুপার টিএম মোজাহিদুল ইসলামের নির্দেশে শিবগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টির সত্যতা পান। এ সময় পুলিশ কাগজপত্র দেখে পিয়াজ মজুদদারদের রবিবার সকালের মধ্যে মাইকিং করে খুচরা ১৫০ টাকা এবং পাইকারি ১৪০ টাকা দরে পিয়াজ বিক্রির নির্দেশ দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে রবিবার সকাল থেকে মাইকিং করে উল্লিখিত দরে পিয়াজ বিক্রি শুরু করেছে। এদিকে সকাল থেকেই দেখা গেছে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর