মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

কী কারণে চট্টগ্রামে বিস্ফোরণ, দুই তথ্য নিয়ে ধূম্রজাল

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম নগরের পাথরঘাটার ব্রিকফিল্ড রোডের পাঁচতলা বড়ুয়া ভবনের নিচতলায় বিস্ফোরণের ঘটনা গ্যাসের লাইন থেকে ঘটেছে, না অন্য কিছু থেকে ঘটেছে- তা উদঘাটনে এখন তদন্ত কমিটির তদন্ত শেষ হওয়ার অপেক্ষা করা হচ্ছে। এ সম্পর্কে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) বলছে, গ্যাস লাইন থেকে বিস্ফোরণ ঘটেনি। আর ফায়ার সার্ভিস, বিস্ফোরক অধিদফতর, পুলিশ, জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন বলছে গ্যাসলাইনের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে। এই বিস্ফোরণ ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে কাজ করছে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি। গতকাল সকালে তিনটি তদন্ত দলের প্রতিনিধিরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন। ঘটনার পর পাঁচতলা ভবনের বাসিন্দাদের সবাইকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন এবং নগর পুলিশের গঠিত পৃথক দুটি তদন্ত কমিটিও কাজ শুরু করেছে। এর মধ্যে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এ জেড এম শরিফ হোসেনকে প্রধান করে গঠিত টিম সকালে সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। টিমে ফায়ার সার্ভিস, সিটি করপোরেশন, কেজিডিসিএল, সিডিএ ও পুলিশের প্রতিনিধিরা ছিলেন। এ কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেনের কাছে জমা দেওয়ার কথা। তাছাড়া, নগর পুলিশের দক্ষিণ জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) মেহেদী হাসানকে প্রধান করে গঠিত কমিটিও সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে যে বাসায় বিস্ফোরণ ঘটেছে, এর বাসিন্দা মণি রাণী দেবী ও তার ছেলে অর্ণব দেবনাথের সঙ্গে কথা বলেছে। এ ছাড়া প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের বক্তব্য নিয়েও নানা তথ্য-উপাও সংগ্রহ করা হয়েছে। এর আগে গত রবিবার সন্ধ্যায় কেজিডিসিএলের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে গ্যাসের লাইনে কোনো লিকেজ না পাওয়া এবং রাইজার অক্ষত থাকার কথা বলা হয়। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক পূর্ণচন্দ্র মুৎসুদ্দী বলেন, ‘আমরা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, ভিকটিমসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলছি। তাদের বক্তব্য রেকর্ড করেছি। যে বাসায় বিস্ফোরণ হয়েছে সেই বাসার রান্নার চুলা পরীক্ষা করা হয়েছে। ওই ভবনের গ্যাসের লাইন পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে ঘটনার প্রকৃত কারণ পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শেষে জানা যাবে।’ তিনি বলেন, ‘বিস্ফোরণে ভবনের নিচতলার দেওয়াল বিধ্বস্ত হয়েছে। ফলে পুরো ভবনটিই এখন ঝুঁকিপূর্ণ। তাই বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে চলে যেতে বলা হয়েছিল।’ বিস্ফোরক অধিদফতর চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘ওই ভবনের রাইজার ও পাইপলাইন অনেক পুরনো এবং অরক্ষিত। পাইপলাইনের ফুটো দিয়ে গ্যাস বের হয়েও এ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তবে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শেষে চূড়ান্ত কথা বলা যাবে।’ কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী সৈয়দ আবু নসর মো. সালেহ বলেন, ‘চুলার ওপর পাতিল এবং সেই পাতিলে এখনো তরকারি অক্ষত আছে। দেয়ালে টাঙানো রশিতে ঝুলছে কাপড়। একটি প্লাস্টিক পুড়েনি। রান্নাঘরে গ্যাসের জিআই লাইন অক্ষত। এমনকি দুই ঘরের মাঝখানের দেয়ালটিও অক্ষত। তাই কোনোভাবেই এটি গ্যাসলাইন লিকেজের অগ্নিকা- নয়। কারণ এখানে আগুনটা ছোট, বিস্ফোরণটা বড়। আমরা দেখেছি  সেপটিক ট্যাংকের ঢাকনা উড়ে গেছে। ওই ট্যাংক থেকেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটতে পারে।’ প্রসঙ্গত, গত রবিবার সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে নগরের কোতোয়ালি থানার পাথরঘাটা ব্রিকফিল্ড রোডের বড়ুয়া ভবন নামে একটি পাঁচতলা বাড়ির নিচতলায় বিস্ফোরণে দেয়াল বিধ্বস্ত হয়। বিস্ফোরণে নারী ও কিশোরসহ সাতজনের মৃত্যু এবং আহত হয়েছেন ১০ জন। এ সময় আশপাশের আরও কয়েকটি বাসা এবং দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

মামলা দায়ের : বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের হয়েছে কোতোয়ালি থানায়। এতে কারা আসামি হয়েছে, সে বিষয়ে তদন্তে নিরপেক্ষতার স্বার্থে মুখ খুলছেন না পুলিশের দায়িত্বশীলরা। এ মামলায় আসামির তালিকায় ভবন মালিক অমল বড়ুয়া ও তার ভাই টিটু বড়ুয়ার নাম আছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। গতকাল নিহত রিকশা চালক মাহমুদুল হকের স্ত্রী শাহীনা আক্তার বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

সর্বশেষ খবর