শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

আসা-যাওয়াতেই ব্যস্ত ছিল বাংলাদেশ টিম

আসিফ ইকবাল, কলকাতা থেকে

‘সিটি অব জয়’ বা আনন্দনগরী এখন গোলাপি নগরী। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস, সত্যজিৎ রায়, অমর্ত্য সেন, সৌরভ গাঙ্গুলী, চানক্য, উত্তম কুমারের কলকাতা এখন ক্রিকেটের শহর। লেডি হেলেন ইডেনের নামাঙ্কিত দেড়শ বছরের পুরনো ইডেন গার্ডেন এখন ক্রিকেট উৎসবের মঞ্চ। বেলেঘাট থেকে কালিঘাট, হাওড়া থেকে কেওড়াতলা, ধর্মতলা থেকে দমদম- সব রাস্তা গতকাল মিশেছে ইডেনে। ৪০০ বছরের পুরনো কলকাতায় কাল প্রাণের সঞ্চারণ ঘটেছে বাংলাদেশ ও ভারতের গোলাপি বলে দিবা-রাত্রির টেস্ট ঘিরে। গোলাপি বলের ঐতিহাসিক টেস্টের আভিজাত্য বাড়িয়ে দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থেকে। শুধু উপস্থিতই ছিলেন না ক্রীড়াপ্রেমী প্রধানমন্ত্রী, বাংলার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ডা. বিধান চন্দ্র রায় স্ট্যান্ডে রাখা ঘণ্টি বাজিয়ে ঐতিহাসিক টেস্টের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনও করেন। তার সঙ্গে ঘণ্টি বাজান বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ও বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলী। ঐতিহাসিক টেস্টকে স্বপ্নিল করে রাখতে পারতেন মুমিনুলরা। কিন্তু তিন ভারতীয় পেসার ইশান্ত শর্মা, উমেশ যাদব ও মোহাম্মদ সামীর সাঁড়াশি আক্রমণে ১৭৪ মিনিটে গুটিয়ে যায় মাত্র ১০৬ রানে। ইনিংসের স্থায়িত্ব ছিল ৩০.৩ ওভার। ভারতের বিপক্ষে এটা দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোর। ২০০০ সালের অভিষেক টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৯১ রান করেছিল বাংলাদেশ। সেবার অবশ্য ব্যাটিং করেছিল ৪৬.৩ ওভার। জবাবে ভারত প্রথম দিন শেষ করে ৩ উইকেটে ১৭৪ রান তুলে। আজ দ্বিতীয় দিন শুরু করবেন কোহলিরা ৬৮ রানে এগিয়ে থেকে।

ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের দায়িত্ব পেয়েই সৌরভ গাঙ্গুলী ইডেনে আয়োজন করেন গোলাপি বলের ঐতিহাসিক টেস্ট। নন্দনকানন ইডেনের টেস্টটিকে ইতিহাসের সেরা করতে আয়োজনের সবটুকু উজাড় করে দেন গাঙ্গুলী। বিসিসিআই সভাপতির আমন্ত্রণে ইডেনে উপস্থিত হন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। গোলাপি বলে বাংলাদেশ-ভারত ঐতিহাসিক টেস্টে উপস্থিত থেকে গুরুত্ব বাড়িয়েছেন ক্রীড়াপ্রেমী প্রধানমন্ত্রী। ২০০০ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টেও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময়ও তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বাংলাদেশের।

গোলাপি বলের টস জিতে ব্যাট করতে নেমে বিস্ময়ের জন্ম দেন মুমিনুল হক। অপরিচিত গোলাপি বলে তিন ভারতীয় পেসারের গতি ও বাউন্সের সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে টাইগার ব্যাটসম্যানরা সাজঘরে ফেরার অলিখিত প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠেন। কনকুশান সাব নিয়মে ১২ জন ব্যাট করেও ১০৬ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ। ব্যাটিং ব্যর্থতার ইনিংসে ‘গোল্ডেন ডাক’ মারেন অধিনায়ক মুমিনুল, মিথুন, মুশফিক ও রাহী। দুই অংকের রান করেন ওপেনার সাদমান (২৯), লিটন দাস (২৪) ও নাইম (১৯)। আশ্চর্য হলেও সত্যি, আইসিসির ‘কনকুশান সাবস্টিটিউট’ নিয়মে লিটনের পরিবর্তে মেহেদি হাসান মিরাজ ও নাইমের পরিবর্তে তাইজুল খেলেন। দুজনেই গতকাল মাঠে আঘাত পান। দুজনকে ওডল্যান্ড হাসপাতালে পরীক্ষা করা হয়। ডাক্তার সপ্তর্শী বসু জানান, নাইমের এমআরআই রিপোর্ট ও লিটনের সিটি স্ক্যান রিপোর্ট ভালো। শুধু অবজারভেশনের জন্য তাদের ২৪ ঘণ্টা দেখা হবে।

টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে এক ইনিংসে এবারই প্রথম দুজন পরিবর্ত ক্রিকেটার খেলছেন।

গোলাপি বলের ইতিহাসের সাক্ষী হতে বাংলাদেশ গতকাল খেলে দুই পরিবর্তন নিয়ে। ইন্দোর টেস্ট খেলা তাইজুল ও মিরাজকে সাজঘরে বসিয়ে রাখা হয়। তাদের পরিবর্তে খেলার সুযোগ পান পেসার আল আমিন ও নাইম হাসান। কিন্তু ঐতিহাসিক দিনটিকে সোনালি করতে পারেনি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। টিম বাংলাদেশ আসা-যাওয়ার মধ্যেই ব্যস্ত ছিল।

সর্বশেষ খবর