শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
আওয়ামী লীগের সম্মেলন আর মাত্র ৫ দিন

চমকের সম্মেলনের প্রস্তুতি শেষ

ব্যয় হবে ৪ কোটি টাকা, সাড়ে সাত হাজার কাউন্সিলর, ১৫ হাজার ডেলিগেটস, পদ্মা সেতুর পাটাতনে নৌকার আদলে তৈরি হবে মঞ্চ, ঢাকায় বিভিন্ন জায়গায় হবে শোভাবর্ধন

শাবান মাহমুদ ও রফিকুল ইসলাম রনি

চমকের সম্মেলনের প্রস্তুতি শেষ

আর মাত্র পাঁচ দিন পর আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন। সহযোগী সংগঠনের মতোই কেন্দ্রে চমক দেখার অপেক্ষায় তৃণমূল। চমকের এই সম্মেলনের সব ধরনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। সম্মেলন সফল করতে গঠিত ১১টি উপ-কমিটির নেতারা কাজ করে যাচ্ছেন। এবার ব্যয় ধরা হয়েছে চার কোটি টাকা। সারা দেশ থেকে সাড়ে সাত হাজার কাউন্সিলর ও পনের হাজার ডেলিগেটসসহ ৫০ হাজার নেতা-কর্মী উপস্থিত থাকবেন। এ উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দলীয় সভানেত্রীর ধানমন্ডির কার্যালয়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।  দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্মেলন সফল করতে দলের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, পোস্টার ও দাওয়াত কার্ড তৈরি, অতিথিদের দাওয়াত দেওয়া, এমনকি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাল তোলা নৌকায় সভামঞ্চ করারও প্রস্তুতি শেষ। এবারের সম্মেলনের স্লোগান- ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে গড়তে সোনার দেশ, এগিয়ে চলেছি দুর্বার, আমরাই তো বাংলাদেশ।’ প্রায় দুই মাস ধরে কাজ করে আসছেন ২১তম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত উপ-কমিটিগুলোর নেতারা। সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহ্বায়ক আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সদস্য সচিব দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অভ্যর্থনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ নাসিম, সদস্য সচিব ডা. দীপু মনি, অর্থ উপ-কমিটির আহ্বায়ক কাজী জাফরউল্লাহ, সদস্য সচিব এইচ এন আশিকুর রহমান, ঘোষণাপত্র উপ-কমিটির আহ্বায়ক শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সদস্য সচিব আবদুর রহমান, দফতর উপ-কমিটির আহ্বায়ক পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য, সদস্য সচিব আবদুস সোবহান গোলাপ, মঞ্চ ও সাজসজ্জা কমিটির আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সদস্য সচিব মির্জা আজম, প্রচার ও প্রকাশনা কমিটির আহ্বায়ক এইচ টি ইমাম, সদস্য সচিব ড. হাছান মাহমুদ, শৃঙ্খলা উপ-কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, সদস্য সচিব আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, গঠনতন্ত্র সংশোধন উপ-কমিটির আহ্বায়ক ড. আবদুর রাজ্জাক, সদস্য সচিব আফজাল হোসেন, স্বাস্থ্য উপ-কমিটির আহ্বায়ক ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সদস্য সচিব ডা. রোকেয়া সুলতানা, সাংস্কৃতিক উপ-কমিটির আহ্বায়ক আতাউর রহমান, সদস্য সচিব অসীম কুমার উকিল, খাদ্য উপ-কমিটির আহ্বায়ক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। এ প্রসঙ্গে অর্থ উপ-কমিটির আহ্বায়ক ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এবার আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে মোট বাজেট ধরা হয়েছে প্রায় ৪ কোটি টাকা। সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত বিভিন্ন উপ-কমিটি তাদের ব্যয়ের সম্ভাব্য খরচ আমাদের কাছে জমা দিয়েছে।   এবার গঠনতন্ত্র সংশোধনীতে বড় কোনো চমক থাকছে না। গঠনতন্ত্র সংশোধনী উপ-কমিটির সদস্য সচিব আফজাল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দলের এবার গঠনতন্ত্রে বড় কোনো সংশোধনী নেই। যেসব ছোটখাটো সংশোধনীর কাজ ছিল তা শেষ পর্যায়ে।’   

বরাবরের মতোই এবার সাজসজ্জার দায়িত্বে রয়েছেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সদস্য মির্জা আজম। এ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগামী বছর থেকে মুজিব বর্ষ শুরু হবে। আমাদের মূল ফোকাস সেখানেই থাকবে। সে কারণে দলের সম্মেলন উপলক্ষে তেমন সাজসজ্জা করা হবে না। মঞ্চ সাজসজ্জা উপ-কমিটির সদস্য সচিব মির্জা আজম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতুর আদলে তৈরি করা মূল প্যান্ডেলটি হবে আওয়ামী লীগের যতগুলো সম্মেলন হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় প্যান্ডেল। ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৪০ ফুট প্রস্থ হবে মূল প্যান্ডেল। উচ্চতা হবে ২৮ ফুট। পেছনে কোনো ব্যানার থাকবে না। সম্পূর্ণ ডিজিটাল মঞ্চ করা হবে। পুরো পদ্মা সেতুসহ দুই পাশের চর, টোলপ্লাজা ও উন্মুক্ত আকাশ সেখানে দেখা যাবে।

মঞ্চ সাজসজ্জা কমিটির সূত্র জানায়, মোট ২৮টি এলইডি পর্দায় দেখানো হবে আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পুরো অনুষ্ঠান। দলের নেতা-কর্মীদের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মোট গেট থাকবে ৫টি। একটি গেট ভিআইপিদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। মূল মঞ্চে চেয়ার থাকবে ৭৭টি। ৮১ সদস্যের মধ্যে চারটি পদ খালি রয়েছে। প্রথম সারিতে দুটি চেয়ারে বসবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। দ্বিতীয় সারির চেয়ারে বসবেন প্রেসিডিয়াম ও চার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকগণ। তৃতীয় সারির চেয়ারে সম্পাদকম-লীর ও কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যগণ বসবেন। নেতা-কর্মীদের জন্য চেয়ার থাকবে ৩০ হাজার। এ ছাড়া সম্প্রসারিত মঞ্চে চেয়ার দেওয়া হবে ১৫ হাজার। সেখানে এলইডি পর্দায় দেখানো হবে বক্তৃতা। দলের নেতা-কর্মীদের সহায়তা ও সার্বিক নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছাড়াও দুই হাজার দলীয় স্বেচ্ছাসেবক মাঠে থাকবে। এ প্রসঙ্গে শৃঙ্খলা উপ-কমিটির সদস্য সচিব ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে মোট দুই হাজার স্বেচ্ছাসেবক থাকবে। এর মধ্যে এক হাজার সদস্য সম্মেলন স্থলে উপস্থিত থাকবে, বাকি এক হাজার বাইরে থাকবে। তারা বিভিন্ন স্থান থেকে আসা দলীয় নেতা-কর্মীদের সব ধরনের সহায়তা করবে।

প্রতি বছর বিদেশি রাজনৈতিক দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও এবার ব্যতিক্রম হচ্ছে। আগামী বছর থেকে মুজিব বর্ষ শুরু হওয়ায় বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধান ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। সে কারণে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বিদেশিদের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন অভ্যর্থনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ নাসিম। 

রেওয়াজ অনুযায়ী সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তৃতার খসড়া চূড়ান্ত করেছে দফতর উপ-কমিটি। আজকালের মধ্যেই তা প্রেসে দেওয়া হবে। এ প্রসঙ্গে দলের উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দফতর কমিটির পক্ষ থেকে ঐতিহ্য অনুযায়ী সভানেত্রী ও সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য লেখা শেষ করা হয়েছে। এ ছাড়াও শোক প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যেই প্রেসে দেওয়া হবে। এ ছাড়া ৫ হাজার বাংলা কার্ড ও ১ হাজার ইংরেজি কার্ড তৈরি করা হয়েছে। দাওয়াতের কাজ শেষ পর্যায়ে। ২০ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ২৫ মিনিটের একটি উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করা হবে। সেখানে তুলে ধরা হবে আওয়ামী লীগের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সরকারের উন্নয়ন ও সাফল্য। এ প্রসঙ্গে সাংস্কৃতিক উপ-কমিটির সদস্য সচিব ও দলের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ২৫ মিনিটের উদ্বোধনী এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের ইতিহাস-ঐহিত্য এবং সরকারের উন্নয়ন ও সাফল্য তুলে ধরা হবে। আলেখ্য গীতিনাট্য শিরোনামে অনুষ্ঠানে স্বাধীন বাংলা বেতারের শিল্পী ও দেশের স্বনামধন্য শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করবেন। দলের সম্মেলনে আগত ২৫ হাজার অতিথিকে পাটের ব্যাগ উপহার দেবে প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটি। ওই ব্যাগে একটি আওয়ামী লীগের ইতিহাস সম্বলিত স্মরণিকা, শোক প্রস্তাব, দলের সভানেত্রী ও সাধারণ সম্পাদকের ভাষণ থাকবে। সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির সদস্য এবং দলের উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সারা দেশ থেকে আগত নেতা-কর্মীদের জন্য থাকছে ৪০ হাজার মানুষের খাওয়ার ব্যবস্থা। এ প্রসঙ্গে খাদ্য উপ-কমিটির আহ্বায়ক ও দলের কেন্দ্রীয় সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে ৪০ হাজার দলীয় নেতা-কর্মীকে আপ্যায়ন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আট বিভাগের জন্য মোট ১০টি বুথ রাখা হবে। বিভাগভিত্তিক খাদ্যের স্লিপ বিতরণ করা হবে।

সর্বশেষ খবর