সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ভোটে বাড়ছে উত্তেজনা

উত্তরে তাবিথ দক্ষিণে তাপসের প্রচারে হামলার অভিযোগ, সচল ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতি আতিকের, পুরান ঢাকায় খোকার ছায়া দেখতে পান ইশরাক, গণসংযোগে জাতীয় পার্টি সিপিবি ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্র্থীরাও, তারিখ পেছানো নিয়ে আজ শুনানি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভোটে বাড়ছে উত্তেজনা

প্রতীক বরাদ্দের তৃতীয় দিনে রাজধানীর দুই সিটি ভোটে ব্যাপক গণসংযোগ করেছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। ঢাকায় ভোট উৎসব নিয়ে চায়ের কাপে ঝড় শুরু হয়েছে। দুই দিন স্বাভাবিক থাকলেও ভোটে বাড়ছে উত্তেজনা। প্রচারে হামলার অভিযোগ করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ফজলে নূর তাপস। গতকাল উত্তর সিটি ভোটে নৌকার প্রার্থী আতিকুল ইসলাম সচল ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গণসংযোগ করেছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও মির্জা আব্বাসকে সঙ্গে নিয়ে পুরান ঢাকায় দিনভর গণসংযোগ করেছেন দক্ষিণ সিটিতে ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন। নিজেদের মতো করে দিনভর গণসংযোগ করেছেন জাতীয় পার্টি, সিপিবি ও ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থীরা।
সচল ঢাকার প্রতিশ্রুতি আতিকের : গতকাল বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের   আখেরি মোনাজাতে অংশ নেওয়ার পর উত্তরা, আবদুল্লাহপুর, দক্ষিণখানে গণসংযোগ করেছেন আতিকুল ইসলাম। ভোটারদের ‘সচল ঢাকা’ উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছেন তিনি। সকালে উত্তরার রাজলক্ষ্মী প্লাজার সামনে বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন আতিক। এরপর সেখান থেকেই শুরু করেন গণসংযোগ। এলাকার মানুষের হাতে হাতে লিফলেট তুলে দিতে দেখা যায় তাকে। এ সময় আতিকের কর্মীরা নৌকার স্লোগান দিতে থাকেন। ‘উন্নয়ন চলছে, চলবে’ প্রতিশ্রুতিতে সাধারণ নাগরিকদের মাঝে লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে ভোট চান আতিক। এরপর ঢাকা-১৮ আসনের কসাইবাড়ি রেলগেট, কাঁচপুর, দক্ষিণখান, উত্তরখান ও আবদুল্লাহপুর এলাকায় গণসংযোগ করেন আওয়ামী লীগের এই মেয়র প্রার্থী। ছাদ খোলা গাড়িতে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে অভিবাদন জানাতে দেখা যায় তাকে। এরপর হেঁটে সাধারণ পথচারী থেকে শুরু করে আশপাশের দোকানিদের সঙ্গেও হাত মেলান তিনি। গণসংযোগের সময় গত ৯ মাস মেয়রের দায়িত্বে থাকাকালীন নিজের কর্ম ও সদিচ্ছার কথা তুলে ধরেন আতিক। তিনি ভোটারদের প্রতিশ্রুতি দেন, মেয়র হলে ঢাকাকে সিঙ্গাপুর-দুবাইয়ের মতো গড়ে তোলা হবে। রাজলক্ষ্মী এলাকায় গণসংযোগকালে ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা আমাকে সুযোগ দেন, আমি আপনাদের একটি সচল ঢাকা উপহার দেব। নির্বাচিত হলে কী কী কাজ করব সেসব পরিকল্পনা করা হয়েছে। এখন শুধু কাজ করব। এরপর বিকালে বাউনিয়া এলাকায় গণসংযোগ করেন তিনি। সন্ধ্যায় উত্তরায় তার নির্বাচনী কার্যালয়ে ঢাকা মেকানিক অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন আতিকুল ইসলাম।
পিছু না হটার অঙ্গীকার তাবিথের : তীব্র শীত উপেক্ষা করে হাজার হাজার নেতা-কর্মী নিয়ে গতকাল গণসংযোগ করেছেন ঢাকা সিটি করপোরেশন উত্তরে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। গতকাল বেলা পৌনে ১১টার দিকে মিরপুর মাজার রোড এলাকায় গণসংযোগে হামলার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন এই প্রার্থী। তিনি বলেন, জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালায়। এ সময় আল আমিন নামে এক যুবদল কর্মী আহত হন। ক্ষমতাসীন দলের বাধা উপেক্ষা করে হাজার হাজার নেতা-কর্মী নিয়ে দিনব্যাপী মিরপুর এলাকা চষে বেড়ানোর কথাও বলেন তাবিথ আউয়াল।
বেলা পৌনে ১১টার দিকে মিরপুর এক নম্বর মাজার রোড এলাকায় গণসংযোগের জন্য বিএনপি নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা জড়ো হতে থাকেন। সেখান থেকে প্রচারের জন্য যাত্রা শুরু হওয়ার পর বিপরীত দিক থেকে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে ইটপাটকেল নিপেক্ষ করে। এ সময় ধানের শীষের সমর্থকরা প্রতিরোধ করে সামনে এগিয়ে যায়। এরপর দুপুরে মিরপুর রাইনখোলা এলাকায় প্রচারের সময় আরিফ নামে এক কর্মীসহ কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ। তাবিথ আউয়াল অভিযোগ করেন, প্রচারে বাধা আসছে। যত বাধাবিপত্তি আসুক আমরা পিছু হটব না। আমাদের প্রচারে সাধারণ জনগণের সমর্থন আছে। আমরা তাদের নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবই। নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমাদের আশঙ্কার (হামলা ও বাধা) কথা দিন দিন প্রমাণিত হচ্ছে। এ সময় তিনি নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে নির্বিঘ্নে প্রচারণার সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার দাবি জানান।
এরপর তাবিথ আউয়াল উত্তর বিশিল, গুদারাঘাট, চিড়িয়াখানা রোড, ১ নং মিরপুর ঈদগা মাঠ, ডি ব্লক মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট, ১২ নং ওয়ার্ডে দক্ষিণ বিশিল, হাজী বশির উদ্দিন স্কুল রোড, হাবুলের পুকুর পাড়, ১৩ নং ওয়ার্ডে উত্তর পীরেরবাগ, ৬০ ফিট, মধ্য পীরেরবাগ, মোল্লাপাড়া, মণিপুরী স্কুল রোড, জোনাকি রোড, বড়বাগ হয়ে মিরপুর থানা, ১০ নং ওয়ার্ডে মিরপুর মাজার থেকে দ্বিতীয় কলোনি, তৃতীয় কলোনি হয়ে দারুস সালাম ফুরফুরা শরীফে গণসংযোগ করেন। এ সময় তার সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরী, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, ৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন দুলু, ১০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী মাসুদ খান, লেবার পার্টি চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, স্বেচ্ছাসেবক দল উত্তরের সভাপতি ফখরুল ইসলাম রবিন, সাধারণ সম্পাদক রেজোয়ান ইসলাম রিয়াজসহ বিএনপি ও তার অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। দুপুরে শাহআলী মাজার মসজিদে জোহরের নামাজ পড়ে মাজার জিয়ারত করেন তাবিথ আউয়াল। সেখান থেকে ৮ নং ওয়ার্ড বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ফেরদৌসী আহমেদকে নিয়ে তার নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় রাস্তার দুই পাশের সাধারণ জনগণ বিএনপি মেয়র প্রার্থীকে জড়িয়ে ধরে দোয়া করেন। মিরপুর এলাকাবাসী নানা সমস্যার কথা জানান তাবিথ আউয়ালকে। তিনি সবার কথা শোনেন। নির্বাচিত হলে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে সমস্যার সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
এদিকে ঢাকা সিটি করপোরেশন উত্তরে নির্বাচন পরিচালনার প্রধান সমন্বয়ক দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায় বলেছেন, গুম, হামলা-মামলা-অপহরণ আওয়ামী লীগের অতীত চরিত্র। সেখান থেকে তারা কখনো বের হতে পারেনি। নির্বাচন এলে তারা প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গতকাল দুপুরে কারওয়ানবাজারে তাবিথ আউয়ালের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। হামলার প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, এসব করে জনস্রোত থামানো যাবে না। জনগণ মাঠে নেমে পড়েছে। যত বাধাই আসুক আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাব।
নিরাপত্তা দাবি তাবিথের : মিরপুর দারুসসালাম থানা এলাকায় প্রচার চালানোর সময় নেতা-কর্মীদের উপর লাঠিসোঁটা নিয়ে অতর্কিত আক্রমণ ও কয়েকজনকে গুরুতর আহত করার ঘটনায় নিরাপত্তা চেয়ে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছেন তাবিথ আউয়াল। গতকাল সন্ধ্যায় এ চিঠি পাঠান তিনি। চিঠিতে তিনি নিজের নিরাপত্তার পাশাপাশি গণসংযোগে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের হামলার বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন।
গণসংযোগে হামলার অভিযোগ তাপসের : ঢাকায় ‘সম্প্রীতির রাজনীতি’র সূচনা করতে চাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা তার গণসংযোগে ‘হামলা করেছে’ বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস। গতকাল সকালে রাজধানীর শান্তিনগর কাঁচাবাজার থেকে তৃতীয় দিনের মতো নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করার আগে গণমাধ্যমের সামনে কথা বলতে গিয়ে তিনি এ অভিযোগ করেন। শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, আর কে মিশন রোডে নির্বাচনী প্রচারণার একপর্যায়ে সেখানে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ইশরাক হোসেনের বাসায়ও আমি গিয়েছি। সেখানে সবার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। ভোট প্রার্থনা করেছি। আমরা সেখান থেকে চলে আসার পরই সন্ধ্যার দিকে তারা অতর্কিতভাবে আমাদের ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীসহ গণসংযোগে যারা ছিল তাদের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে। এটা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। তিনি বলেন, আমরা চাই সম্প্রীতির রাজনীতি, পরিবর্তনের রাজনীতি। আমরা এই রাজনীতির সূচনা করতে চাই। আমরা আশা করব সবাই আমার সঙ্গে সেই সূচনায় অংশগ্রহণ করবেন এবং আমরা একটা সুন্দর, সম্প্রীতির রাজনীতি ঢাকাবাসীকে উপহার দেব। আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সভাপতি আবু আহাম্মদ মোহাম্মদ মন্নাফি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল চৌধুরী, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত সিকদার, যুবলীগের সাবেক নেতা আতাউর রহমান আতাসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ-যুবলীগ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
তাবলিগ জামাতের সবচেয়ে বড় আয়োজন বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে দোয়া প্রার্থনা করার পর নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন জানিয়ে শেখ তাপস বলেন, আমরা জনগণের কাছ থেকে স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পাচ্ছি। আমরা খুবই আশাবাদী যে ঢাকাবাসী আমাদের পক্ষে রায় দেবে। এ সময় শান্তিনগর এলাকার ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী পল্টন থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এনামুল হক আবুল (ঘুড়ি মার্কা) এবং সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলর রোকসানা ইসলাম চামেলীকে (আনারস মার্কায়) পরিচয় করিয়ে দেন তাপস। গতকাল সারা দিনব্যাপী পল্টন, মালিবাগ, সেগুনবাগিচা, মতিঝিল, শাহজাহানপুর, সিদ্ধেশ্বরী, বেলী রোডসহ ওই এলাকায় নির্বাচনী কার্যক্রম চালান শেখ ফজলে নূর তাপস। এর আগে তাপসকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় ব্যাপকভাবে দলীয় নেতা-কর্মীর উপস্থিতি ঘটে। নৌকার পক্ষে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। পরে শেখ ফজলে নূর তাপস নেতা-কর্মীদের নিয়ে দোকানে, গলিতে ঢুকে লিফলেট বিতরণ করে নৌকার পক্ষে ভোট ও দোয়া চান। সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণও তাকে স্বাগত জানিয়ে ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
দিনভর গণসংযোগ ইশরাকের : দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে দিনভর গণসংযোগ করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বিএনপি মনোনীত  মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন। রাজধানীর পুরান ঢাকায় জজ কোর্ট এলাকায় গণসংযোগের মধ্য দিয়ে তার ভোট প্রচার শুরু হয়। এ সময় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন, হাবিব-উন নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রাজিব আহসান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহীনসহ সহস্রাধিক নেতা-কর্মী। ইশরাক হোসেন আদালত সড়ক, ইংলিশ  রোড, বংশাল, তাঁতীবাজার হয়ে নয়াবাজারের মোড়ে গিয়ে প্রচারণা শেষ করেন। এ সময় ইশরাক হোসেন ‘সরকারদলীয়’ লোকজন তার কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা করেছে বলে অভিযোগ করে বলেন, এটা কী সুষ্ঠু নির্বাচনের আচরণ? আমার দলের কাউন্সিলর ও সমর্থকদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রচারণায় ওরা বাধা দিচ্ছে। গণসংযোগ করতে দিচ্ছে না। নির্বাচনে এখনো লেভেল  প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি। গণসংযোগে ইশরাক হোসেন বলেন, ‘আমার বাবা এই পুরান ঢাকার সন্তান। এখানে আমি বাবার ছায়া দেখতে পাই। এখানে মুরব্বি আছেন, তারা বাবাকে চেনেন। আমি আজকে আপনাদের দোয়া চাইতে এসেছি। আপনাদের দোয়াই আমার একমাত্র ভরসা। তিনি বলেন, ধানের শীষ প্রতীক গণতন্ত্রের প্রতীক। এই প্রতীক বেগম খালেদা জিয়ার প্রতীক। পুরান ঢাকার ঐতিহ্যে আমি ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরীতে ঢেলে সাজাতে চাই। যানজট, দূষণমুক্ত আধুনিক ঢাকা বিনির্মাণে কাজ করতে চাই।
সাজেদুল হকের গণসংযোগ : বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) মনোনীত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাস্তে মার্কার মেয়র প্রার্থী ডা. আহাম্মদ সাজেদুল হক (রুবেল) গতকাল সকাল থেকে মোহাম্মদপুর টাউন হল, ইকবাল রোড, লালমাটিয়া এলাকায় গণসংযোগ করেন। বিকালে মোহাম্মদপুর টাউন হল ও বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অনুষ্ঠিত পথসভায় প্রার্থী ডা. সাজেদুল হক রুবেল বলেন, নির্বাচিত হলে শ্রমজীবী, নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ ও দলিত জনগোষ্ঠীর নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা হবে। সকল নাগরিকের সমান সুযোগ নিশ্চিতের মাধ্যমে দুই কোটি জনসমুদ্রের এ মহানগরকে মানবিক ঢাকায় রূপান্তরিত করা হবে। সচল, পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ ও বাসযোগ্য ঢাকার জন্য নগর সরকার প্রতিষ্ঠা ছাড়া বিকল্প নেই। তিনি বলেন, নগর সরকার, বিকল্প রাজনীতি ও ভোটাধিকারের নিশ্চিতের জন্য সংগ্রাম করতে হবে। ৩০ জানুয়ারি যদি মানুষ তার ভোট দিতে না পারে তবে ওইদিন থেকেই প্রতিরোধ আন্দোলনের শুরু করতে হবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিপিবির সহ-সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ জহির চন্দন, প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট আহসান হাবীব লাবলু, কেন্দ্রীয় নেতা লুনা নূর, ঢাকা কমিটির সভাপতি মোসলেহ উদ্দিন, ঢাকা কমিটির নেতা শংকর আচার্য, আসলাম খান, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নেতা জামাল হায়দার, ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বল, যুব ইউনিয়ন নেতা শিমুল খান, আহমেদ তালাত তাজিব প্রমুখ। এর পরে ডা. রুবেল মোহাম্মদপুর এলাকার বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার কর্মী ও দলিত জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
পরিকল্পিত নগরী গড়ার অঙ্গীকার মিলনের : নগরকে সুন্দর পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার করলেন জাতীয় পার্টির মনোনীত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন। গতকাল নবাবগঞ্জ, কলতাবাজার এলাকায় গণসংযোগকালে সাইফুদ্দিন মিলন বলেন, নির্বাচিত হলে শুধু রাস্তা-কালভার্ট ঠিক করা নয়, নাগরিকদের সকালে ঘর থেকে বের হওয়া ও ঘরে ফেরা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করব। পৃথিবীর শতাধিক রাষ্ট্র ভ্রমণের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে স্বপ্নের সিটি গড়ে তুলব।
দুর্নীতি ও দূষণমুক্ত নগরী করার অঙ্গীকার আবদুর রহমানের : ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তৃতীয় দিনেও ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন মনোনীত মেয়র প্রার্থী আলহাজ আবদুর রহমান। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ আবদুর রহমান নিউমার্কেট ও ধানমন্ডি, নীলক্ষেত বাবুপুরা মার্কেট, আজিমপুর, বিডিআর এলাকায় হাতপাখার পক্ষে গণসংযোগ চালান। বিভিন্ন পথসভায় আবদুর রহমান বলেন, ঢাকার পুরাতন ঐতিহ্য বিলীনের পথে। মসজিদ নগরী এখন পাপের নগরীতে পরিণত হয়েছে। খানাখন্দকে মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। মশার উপদ্রবে মানুষ অতিষ্ঠ। তিনি বলেন, হাতপাখার বিজয় হলে মানুষের দুর্ভোগ লাঘব করে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের ব্যবস্থা করা হবে। ঢাকাকে দুর্নীতি ও দূষণমুক্ত স্মার্ট নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
ভোটাধিকার প্রয়োগ ও রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থাকতে বললেন মাসউদ : ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ বলেন, অতীতে যারা নগর ভবনে ছিলেন তারা নির্বাচনের সময় বিভিন্ন মুখরোচক স্লোগান দিয়ে নগর ভবনে এসে নগরবাসীর সঙ্গে বারবার প্রতারণা করেছেন। সচল ঢাকার স্লোগান দিয়ে ঢাকার জীবনযাত্রাকে অচল ও বিপর্যস্ত করে তুলেছে। ক্লিন ঢাকার কথা বলে ঢাকাকে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরে পরিণত করেছে। গতকাল কাফরুলে গণসংযোগকালে বিভিন্ন পথসভায় বক্তব্য দেন মেয়র প্রার্থী অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ।
ঢাকা সিটি ভোটের তারিখ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়নি : ঢাকার দুই সিটি ভোটের তারিখ পরিবর্তন নিয়ে গুঞ্জন ছিল নির্বাচন কমিশনে। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশন জরুরি বৈঠকও করেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বে তার কক্ষে এই বৈঠক হয়। বৈঠকে চার নির্বাচন কমিশনার উপস্থিত ছিলেন। তবে বৈঠকে ভোটের তারিখ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়নি।
সূত্র জানিয়েছে, ইসির বৈঠকে নির্বাচন কমিশনাররা বলেছেন, ভোটের তারিখ পরিবর্তনের বিষয়টি এখন আদালতের ওপরে নির্ভর করছে। যেহেতু এ বিষয়ে একটি রিট শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে, তাই আদালত যে সিদ্ধান্ত দেবে সেই অনুযায়ী পরে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
৩০ জানুয়ারি দুই সিটির ভোটের দিনে সরস্বতী পূজার লগ্ন বা তিথির কারণে ভোটের তারিখ পরিবর্তনের বিষয়ে গতকাল নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের সঙ্গে আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া পূজার জন্য ভোট পেছাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহাও একটি চিঠি দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে। তিনি চিঠি কমিশনে পাঠিয়েছেন। সূত্র জানায়, ভোটের তারিখ পরিবর্তনসহ বেশ কিছু বিষয় নিয়ে গতকাল বিকালে জরুরি বৈঠকে বসে নির্বাচন কমিশন। বৈঠকে একজন নির্বাচন কমিশনার জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থীদের ভোটের তারিখ পরিবর্তনের দাবির (সরস্বতী পূজার কারণে) বিষয়টি আলোচনায় আনেন। এ সময় অন্য নির্বাচন কমিশনাররা বলেন, ভোটের তারিখ পরিবর্তনের বিষয়টি যেহেতু এখন আদালতে গিয়েছে, তাই আদালত যা বলবে, তাই হবে। এ নিয়ে আর তেমন আলোচনা হয়নি। ভোটের তারিখ পরিবর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিষয়টি এখন আদালতে রয়েছে। আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম হবে। তিনি বলেন, আমরা কেবিনেটের সরকারি ছুটির তালিকা দেখেই ভোটের তারিখ নির্ধারণ করেছি। আপাতত আমরা ৩০ তারিখ ভোট হচ্ছে এ সিদ্ধান্তেই আছি। তারিখ পরিবর্তন করতে হলে আগে কেবিনেটকে ছুটির তারিখ পরিবর্তন করতে হবে।
রিটের শুনানি আজ : আগামী ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন পেছানোর নির্দেশনা চেয়ে করা রিট নতুন বেঞ্চে উপস্থাপন করা হয়েছে। গতকাল আবেদনটি বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাই কোর্ট বেঞ্চে উপস্থাপন করা হলে শুনানির জন্য আজকের দিন ঠিক করে আদালত। আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী অশোক ঘোষ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নূর উস সাদিক। পরে অশোক ঘোষ জানান, রবিবারের কার্যতালিকায় বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে রিট আবেদনটি ৩৮ নম্বর ক্রমিকে রয়েছে। কিন্তু বিষয়টি এখতিয়ার বহির্ভূত হওয়ায় আদালত অন্য বেঞ্চে নিতে বলেন। এর পর বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাই কোর্ট বেঞ্চে উপস্থাপন করা হয়। আদালত বলেছে, সোমবার (আজ) এটি কার্যতালিকায় আসবে এবং শুনানি হবে। এর আগে হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অশোক কুমার ঘোষ। রিট আবেদনে একমাত্র প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে বিবাদী করা হয়। রিট আবেদনে বলা হয়, আগামী ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি হিন্দু সম্প্রদায়ের সরস্বতী পূজা। বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে এ পূজা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ২৯ জানুয়ারি মূল পূজা হলেও পূজার পঞ্চমী শেষ না হওয়া পর্যন্ত সরস্বতী প্রতীমা বিসর্জন দেওয়া যায় না। পঞ্চমী শেষ হবে ৩০ জানুয়ারি। এ কারণে নির্বাচন পিছিয়ে দিতে গত ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনের প্রতি আইনি নোটিস পাঠানো হয়। কিন্তু নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভোটগ্রহণের দিন ৩০ জানুয়ারিই রেখেছে।
মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ : ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ উপলক্ষে রাজধানীতে ২৭ জানুয়ারি মধ্যরাত থেকে ৩১ জানুয়ারি সকাল ৬টা পর্যন্ত ৭৮ ঘণ্টা মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ছাড়া ২৯ জানুয়ারি রাত ১২টা থেকে ৩০ জানুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত আরও বেশকিছু যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। ইসির উপ-সচিব মাহফুজা আক্তার স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত নির্দেশনা সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে- ভোট উপলক্ষে ২৭ জানুয়ারি রাত ১২টা থেকে ৩১ জানুয়ারি সকাল ৬টা পর্যন্ত অর্থাৎ ৭৮ ঘণ্টা নির্বাচনী এলাকায় মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।
এজন্য জেলা প্রশাসককে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার জন্য বলেছে ইসি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর