বাজারে পিয়াজ-সবজির কোনো ঘাটতি নেই। সবকিছুই ভরপুর। তবু দাম বেড়েছে পিয়াজের। সবজি ও চালের দামও বেড়েছে। কদিন আগে পিয়াজের দাম কিছুটা কম থাকলেও, এখন প্রতি কেজিতে বেড়েছে ৩৫ থেকে ৫০ টাকা।
গতকাল সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কারওয়ান বাজার, রামপুরা, মালিবাগ হাজীপাড়া, খিলগাঁও, যাত্রাবাড়ী ও মোহাম্মদপুর টাউন হল এলাকার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারি বাজারে পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১২৫ টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে দেশি পিয়াজের দাম বেড়েছে ৩৫ থেকে ৫০ টাকা। পাইকারি বাজারে দেশি পিয়াজ ১২৫ টাকা, পাকিস্তানি পিয়াজ ৮৫, মিসরীয় পিয়াজ ৬৫ আর মিয়ানমারের পিয়াজ ১২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। মহাখালীর বউবাজারসহ কয়েকটি খুচরা বাজারে দেখা গেছে, ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজিতে দেশি মুড়িকাটা পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে। মহাখালীর খুচরা বাজারের পিয়াজ বিক্রেতা রনি সরদার বলেন, ‘দেশি পিয়াজ গত সপ্তাহে ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও অন্তত ৬০ টাকা বেড়ে এ সপ্তাহে ১৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।’ দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী আলম রহমান বলেন, ‘দাম বেশি হওয়ায় চাষিদের একটি অংশ নির্ধারিত সময়ের আগেই মুড়ি পিয়াজ তোলা শুরু করেন। এ কারণে বাজারে এখন পিয়াজের সরবরাহ তুলনামূলক কম। ফলে দাম কমার বদলে বাড়ছে। দেদার মুড়ি পিয়াজ তোলা না হলে এখন পিয়াজের দাম অনেক কম থাকত।’ মালিবাগ হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী জহির উদ্দিন বলেন, ‘পিয়াজের দাম নিয়ে শুধু ক্রেতারা নন, আমরাও বেশ অস্বস্তিতে আছি। হঠাৎ হঠাৎ দাম বাড়ছে আবার কমছে। বাড়তি দামে পিয়াজ কিনে আমি দুই দফায় ধরা খেয়েছি। হঠাৎ করে এখন আবার পিয়াজের দাম বাড়ছে। বুঝতে পারছি না সামনে কী হবে।’ এদিকে পিয়াজের দাম আবার বাড়ায় দারুণ বিরক্তি প্রকাশ করছেন ক্রেতারা। তাদের অভিযোগ, সিন্ডিকেট করে পিয়াজের দাম বাড়ানো হচ্ছে। বাজারে কার্যকর নজরদারি না থাকায় সিন্ডিকেট চক্র এভাবে দাম বাড়াচ্ছে। যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা শান্ত রহমান বলেন, ‘এখন পিয়াজের ভরা মৌসুম। ভারতও নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। তাহলে পিয়াজের কেজি কেন ১৫০ টাকা হবে? এটা কিছুতেই স্বাভাবিক অবস্থা নয়। এখন পিয়াজের কেজি ৫০ টাকার নিচে থাকা উচিত ছিল। মূলত বাজারের দিকে দায়ত্বশীলদের কোনো নজরদারি না থাকায় এভাবে দাম বাড়ছে।’ মৌচাকের বাসিন্দা আরমান হোসেন বলেন, ‘এখন আস্তে আস্তে পিয়াজের দাম কমার কথা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে দাম উল্টো বাড়ছে। শুধু পিয়াজ নয়, সব ধরনের সবজির দাম চড়া। বাজারে গেলে কোনো কিছুর দাম স্বস্তি দিচ্ছে না।’ বাড়তি দামের কারণে স্বস্তি মিলছে না চাল, সবজিতেও। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের মতো এখনো চালের দাম বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। কেজিতে ২-৩ টাকা করে চালের দাম বেড়েই চলেছে। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট ৬০, নাজিরশাল ৬০, বিআর আটাশ ৩৮, স্বর্ণা ৩৩, পুরাতন চিনিগুঁড়া ১১৫ ও নতুন চিনিগুঁড়া ৯৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে টাউন হলের চাল ব্যবসায়ী ফারুক আবদুল্লাহ বলেন, ‘দাম বাড়ার কারণ মিল মালিকরা বলতে পারেন। বাড়তি দামে কিনেছি, তাই বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। চালের দাম বাড়ার ফলে আমাদের ক্রেতা কমে গেছে। আমরা ব্যবসায়ীরাও সমস্যার মুখে আছি।’ নাহিদা বিনতে মুনা নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘বেশির ভাগ সময়ই বাজার অস্থিতিশীল থাকছে। বাজারে কোনো না কোনো পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। চালের বাজার এখন অস্থির। সব মিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি সাধারণ ক্রেতারা।’
এদিকে শীত মৌসুম হওয়ায় সব ধরনের শীতকালীন সবজি বাজারে পর্যাপ্ত রয়েছে। শিম, টমেটো, গাজর, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শালগমে বাজার ভরপুর থাকলেও বেশির ভাগ সবজির দাম বেশ চড়া। এমনকি সপ্তাহের ব্যবধানে নতুন করে দাম বাড়ার ঘটনাও ঘটেছে। নগরীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে ২০-৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া শসার দাম বেড়ে ৪০ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। শসার মতো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বেশির ভাগ সবজি। গত সপ্তাহে ৫০ থেকে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া করলার দাম বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। আগের সপ্তাহের মতো বাজার ও মানভেদে পেঁপের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়। দেশি পাকা টমেটোর কেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকা। তবে দাম অপরিবর্তিত রয়েছে শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা ও গাজরের। ভালো মানের শিমের কেজি ৪০-৫০ টাকা। ফুলকপি পিস ৩০-৩৫ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে বাঁধাকপি। গাজর বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা কেজি। মুলা পাওয়া যাচ্ছে ২০-২৫ টাকার মধ্যে। নতুন গোল আলু ২৫-৩০ টাকা। শালগম বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকায়। বেগুন পাওয়া যাচ্ছে ৪০-৫০ টাকার মধ্যে। মাঝারি আকারের প্রতি পিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৯০ টাকায়। রামপুরা বাজারের ক্রেতা মনির হোসেন বলেন, ‘এখন সবজির ভরা মৌসুম, তার পরও বেশির ভাগ সবজির কেজি ৫০ টাকার কাছাকাছি। সাধারণত এ সময় শিমের কেজি ২০-২৫ টাকার মধ্যে থাকার কথা, অথচ বাজারে শিমের কেজি ৫০ টাকা। শুধু শিম নয়, সব ধরনের সবজির দাম চড়া। ছোট একটি লাউয়ের দাম ৮০ টাকা। বাজারের এ চিত্রকে কিছুতেই স্বাভাবিক বলা যায় না।’ মাংসের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গরুর মাংস আগের নির্ধারিত মূল্যে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মুরগির দাম কিছুটা কমেছে। ফার্মের মুরগি কেজি প্রতি ১১৫-১২০, কক মুরগি ১৮০, পাকিস্তানি মুরগি ২২০, দেশি মুরগি ৪৫০, হাঁস ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে পর্যাপ্ত ইলিশের সরবরাহ রয়েছে। দামও তুলনামূলক কম। ১ কেজির ছোট সাইজের ইলিশ ৫০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া সাইজভেদে প্রতি কেজি বড় রুই মাছ ৪০০, তেলাপিয়া ১৬০, বড় সরপুঁটি ২০০, পাবদা ৬০০, ছোট মাছ ৩০০-৪৫০, রূপচাঁদা ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।