বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

বিশেষ ব্যবস্থায় ১৭১ জনকে চীন থেকে আনা হবে

আশকোনা হজ ক্যাম্প থেকে একজন কুর্মিটোলায় ভর্তি । আক্রান্তের হাঁচি-কাশি থেকে ছড়ায় ভাইরাস । চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা রেকর্ড ছাড়িয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত চীনের উহান নগরী থেকে ফিরতে চাওয়া ১৭১ বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে সরকার। চীন থেকে ভাড়া করা বিমানে আনা হতে পারে তাদের। আশকোনা হজ ক্যাম্প থেকে একজন সর্দি, মাথাব্যথা নিয়ে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না তা ৪৮ ঘণ্টা পর জানা যাবে বলে জানিয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, দেশের বিমানবন্দর, নৌবন্দর, স্থলবন্দরগুলোয় করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নেওয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ সতর্কতা। মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। উহান থেকে দেশে ফিরতে আগ্রহী আরও ১৭১ জনকে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা চলমান রয়েছে। বিশেষ বিমানের পরিবর্তে চীন থেকে ভাড়া করা বিমানে তাদের ফিরিয়ে আনা হতে পারে।

এ ব্যাপারে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহিবুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘উহান থেকে ১৭১ বাংলাদেশিকে কবে নাগাদ ফিরিয়ে আনা হবে এ সিদ্ধান্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। তারা আমাদের কাছে বিমান চাইলে আমরা তা দিয়ে সহযোগিতা করব। তবে তাদের বিশেষ ফ্লাইটের পরিবর্তে চীন থেকে বাংলাদেশে নিয়মিত যাতায়াত করা চারটি ফ্লাইটে আনা যেতে পারে।’

করোনাভাইরাস ঠেকাতে স্ক্রিনিং চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, এ পর্যন্ত চীন থেকে ফেরা ৬ হাজার ৭৮৯ জনকে বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। সোমবার রাতে আশকোনা ‘কোয়ারেনটাইন’ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে মাথাব্যথা নিয়ে একজন উহান-ফেরত যাত্রী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তিনি এবং জ্বর নিয়ে এর আগে ভর্তি হওয়া আরও একজনের অবস্থা এখন পর্যন্ত স্থিতিশীল। আশকোনা হজ ক্যাম্পে অবস্থানরত সবাই সুস্থ আছেন। তাদের নিয়মিত পর্যাপ্ত খাবার ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করা হচ্ছে। করোনাভাইরাস ঠেকাতে সতর্কতা হিসেবে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘ঘন ঘন সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোবেন (অন্তত ২০ সেকেন্ড)। অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করবেন না। ইতিমধ্যে আক্রান্ত এমন ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। হাঁচি কিংবা কাশির সময় হাত, টিস্যু কিংবা কাপড় দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখতে হবে। অসুস্থ পশু-পাখির সংস্পর্শ পরিহার এবং মাছ-মাংস ভালোভাবে রান্না করে খেতে হবে। অসুস্থ হলে ঘরে থাকতে হবে।’ বাইরে যাওয়া অত্যাবশ্যক হলে নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেন তিনি। এ ছাড়া জরুরি প্রয়োজন ছাড়া চীন ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকতে এবং প্রয়োজন ছাড়া এ সময় বাংলাদেশ ভ্রমণেও নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রেকর্ড ছাড়িয়েছে : চীনের গন্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বের ২৭টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২০ হাজার ৪৩৮ জন এবং মারা গেছেন ৪২৫ জন। দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, সোমবার এক দিনেই এ ভাইরাসে মারা গেছেন ৬৪ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ২২৫ জন।

গত বছরের শেষ দিন চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম এ ভাইরাস সংক্রমণের বিষয়টি ধরা পড়ার পর থেকে এক দিনে এত বেশি মৃত্যু ও নতুন রোগীর তথ্য আর আসেনি। চীনের মূল ভূখন্ডের বাইরে ফিলিপাইন ও হংকংয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে নতুন এ করোনাভাইরাসে। এ ভাইরাস নিয়ে বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে প্রাথমিক উপসর্গ হয় ফ্লু বা নিউমোনিয়ার মতো। কিন্তু বয়স্ক এবং অন্য অসুস্থতা থাকা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এ সংক্রামক রোগ হয়ে উঠতে পারে প্রাণঘাতী। এর কোনো প্রতিষেধক এখনো পাওয়া যায়নি। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিকদের চীন থেকে সরিয়ে নিচ্ছে। শঙ্কিত কয়েকটি দেশ তাদের সীমান্তে চীনাদের জন্য কড়াকড়ি আরোপ করেছে। ফ্লাইট অপারেশন বন্ধ করে দিয়েছে বিভিন্ন এয়ারলাইন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর