বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

পাকিস্তানকে ব্ল্যাকলিস্ট করতে পারে ফিন্যানশিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্স

প্রতিদিন ডেস্ক

সন্ত্রাসের জন্য অর্থ জোগানোয় পাকিস্তানের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজরদারি ইদানীং বেড়ে গেছে। এ তথ্য দিয়ে পশ্চিমী বার্তা সংস্থাগুলো জানায়, ফিন্যানশিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্স (এফএটিএফ) তাদের গত বছর অনুষ্ঠিত পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে ‘সন্ত্রাসে অর্থায়ন ঝুঁকি’ প্রসঙ্গে আলোচনাকালে এই ঝুঁকি মোচনে পাকিস্তানের সর্বাত্মক ব্যর্থতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, পাকিস্তান এখন কঠিন অবস্থায় রয়েছে। কারণ চলতি ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় এফএটিএফের বৈঠকে পাকিস্তানের বিশ্বাসযোগ্যতা কতটুকু তা নির্ণয় করা হবে। আলামতদৃষ্টে অনেকেরই ধারণা- এ বৈঠকে পাকিস্তানকে কালো তালিকাভুক্তির আশঙ্কা আছে। তেমনটি ঘটলে তা হবে পাকিস্তানের ভঙ্গুর অর্থনীতির জন্য বেশ বিপর্যয়কর।

পাকিস্তান তার পাশের অঞ্চলগুলোয় সন্ত্রাসবাদ রপ্তানি করে- এ অভিযোগ অনেক পুরনো। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান অবশ্য সমানে অভিযোগটি অস্বীকার করে চলেছেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানে কোনোরকম সন্ত্রাস নেই। যেটুকু সন্ত্রাস পাকিস্তানে ঘটে তা আফগানিস্তান থেকে আসে। তবে সমালোচকরা বলছেন, পাকিস্তানের আচরণ দ্বিমুখী। একদিকে সে বলছে, সন্ত্রাসবাদ দমনে সে লড়ছে। অন্যদিকে ভারতে ও অন্যান্য দেশে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে সমর্থন দিচ্ছে।

মানবাধিকারের সুরক্ষায় পাকিস্তান যেসব বুলি কপচায় তা যে বিলকুল কৃত্রিম তা ধরা পড়ে ইমরান খানের নির্লজ্জ মন্তব্যে। চীনে ১০ লক্ষাধিক উইঘুর মুসলিমকে অবৈধভাবে আটকে রাখা হয়েছে, তাদের ওপর নির্যাতন বিষয়ে পাকিস্তান নীরব কেন? এ প্রশ্নের জবাবে পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন, তার দেশের তরক্কির জন্য চীন অনেক কিছু করেছে। কাজেই তার পক্ষে কোনো মন্তব্য করা সম্ভব নয়। মানবাধিকার নিয়ে পাকিস্তানের রংতামাশার প্রকৃষ্ট উদাহরণ আসিয়া নরীন যাকে সবাই আসিয়া বিবি নামে জানে। ২০১০ সালে খ্রিস্টান এই মহিলাকে খোদাদ্রোহের অভিযোগে ব্লাসফেমি আইনে ‘মৃত্যুদন্ড’ দেয় আদালত। বিচারকালে আসিয়া নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেন। গ্রেফতার হওয়ার নয় বছর পর ২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবর পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট প্রমাণের অভাবে মৃত্যুদন্ড বাতিল করে। এতে রক্ষণশীলরা খেপে যায়। তারা রাস্তায় নেমে আসিয়ার মৃত্যুর দাবিতে তুমুল বিক্ষোভ করে। তাদের কাছে নতিস্বীকার করে সরকার। আসিয়া তাই কানাডা চলে গেছেন। ব্লাসফেমি আইনের কড়া সমালোচনা করতেন পাঞ্জাবের তদানীন্তন গভর্নর সালমান তাসির। তাই তাকে হত্যা করে তারই নিরাপত্তারক্ষী মমতাজ কাদরি। এই ঘাতককে ‘দরবেশ’-এর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে এবং তার নামে একটা খানকার নামকরণ হয়েছে। পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর ক্যাডারদের পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যে কাশ্মীর সীমান্তে নিয়মিত মোতায়েন করে এবং বিএসএফ ও ভারতীয় সেনাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে, এটা কোনো গোপন খবর নয়। লস্কর-ই-তৈয়বা, জইশ-ই-মুহাম্মদ ও আলবদরের মতো ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের মুজাফফরাবাদে বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নেয়। পাকিস্তান প্রতি বছর ৫ ফেব্রুয়ারি কাশ্মীর দিবস পালন করে। পাঞ্জারের মুখ্যমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ডাকে দিবসটি পালন শুরু হয় ১৯৯০ সালে। কাশ্মীর দিবসের মিছিলে জঙ্গি সংগঠন জইশের প্রধান মাওলানা মাসুদ আজহার এবং ২৬/১১ মুম্বাই হামলার পরিকল্পক লস্করের প্রধান হাফিজ সাইদকে দেখা যায়। আরও দেখা যায় ৪০টি জিহাদি সংগঠনের মোর্চা ইউনাইটেড জিহাদ কাউন্সিল প্রধান সৈয়দ সালাহউদ্দিনকে। এই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পাকিস্তানের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ আছে। তা সত্ত্বেও এরা প্রকাশ্যে ভারতবিরোধী উত্তেজনাকর বক্তৃতা দিতে পারছে। সন্ত্রাসী তৎপরতা চালানোর জন্য তহবিল সংগ্রহ করছে প্রকাশ্যে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর