শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

রাজস্ব কমার শঙ্কা চট্টগ্রাম বন্দরে

তৈরি পোশাকশিল্প মেশিনারিজ খাদ্যপণ্যে নেতিবাচক প্রভাব

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

চীনে করোনাভাইরাস আক্রান্তের কারণে দেশের রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেশের প্রধান রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টমসে চলতি মাসের শেষদিকে রাজস্ব আদায় অনেকাংশে কমে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। চীনের বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন না হলে প্রথমদিকে রাজস্ব আদায় কমপক্ষে ২০ শতাংশ কমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চট্টগ্রাম কাস্টমসের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। যেহেতু দেশের আমদানি বাণিজ্যের ৯০ শতাংশ হয়ে থাকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। আর সিংহভাগ আমদানি হয়ে থাকে চীন থেকে। বিশেষ করে গার্মেন্ট শিল্প, মেশিনারিজ এবং খাদ্যপণ্যে ইতিমধ্যে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বলে জানা গেছে। তবে রাজস্ব আদায় এখনো স্বাভাবিক গতিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার কাজী মুহাম্মদ জিয়াউদ্দীন। তিনি বলেন, এখনো বন্দরে জাহাজ আসা স্বাভাবিক রয়েছে। কারণ চীন থেকে ১৫ দিন আগে যে জাহাজগুলো ছেড়েছে সেগুলো এখনো আসা অব্যাহত রয়েছে। ফলে রাজস্ব আদায়ে যদি নেতিবাচক প্রভাব পড়েও তা চলতি মাসের শেষের দিকে বোঝা যাবে। এদিকে গত দুই সপ্তাহে শুধু চট্টগ্রামের গার্মেন্ট এক্সেসরিজ আমদানির জন্য বুকিং দেওয়া হয়েছে এমন ৩৫টি এলসির শিপমেন্ট স্থগিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ গার্মেন্ট এক্সেসরিজ ম্যানুফেকচারিং অ্যান্ড এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএপিএমইএ) দেওয়া তথ্যে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ছাড়া  দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের প্রধান কাঁচামাল ‘ফেব্রিক্স’ এর অধিকাংশই আসে চীন থেকে। ফলে সারা দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য শতাধিক প্রতিষ্ঠান এলসি খোলার পর চীন থেকে জাহাজ আসা স্থগিত থাকায় এসব পণ্য দেশে আসতে পারছে না বলে জানিয়েছে বিজিএমইএ’র একটি সূত্র। এই অবস্থার পরিবর্তন না হলে পুরো আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য এবং রাজস্ব আদায়ে চরম বিপর্যয় নেমে আসবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশের ব্যবসায়ী মহল। বিজিএপিএমইএ-এর কাস্টমস-পোর্ট অ্যান্ড শিপিং বিষয়ক উপকমিটির আহ্বায়ক খোন্দকার লতিফুর রহমান আজিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমদানি বাণিজ্যে কী দুরবস্থা চলছে তা সংশ্লিষ্টজন ছাড়া অন্যরা এখনো বুঝতে পারছে না। চীনে করোনাভাইরাস আক্রান্তের ঘটনা প্রশমিত না হলে আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের আমদানিনির্ভর দেশের করুণ পরিণতি ঘটবে। একইভাবে বিজিএমইএ-এর পরিচালক সাইফুল্লাহ মনসুর বলেন, আমাদের গার্মেন্টশিল্প পুরোটাই চীননির্ভর, এখনো এর বিকল্প হয়ে ওঠেনি। করোনাভাইরাসের কারণে এই খাতে যে অচলাবস্থা তৈরি হতে চলেছে, তা অব্যাহত থাকলে আগামী ১০ দিনে দেশের তৈরি পোশাকশিল্পে কী নেতিবাচক প্রভাব পড়বে তা কল্পনা করতেও গা শিউরে উঠছে। শুধু পোশাকশিল্পে নয়, ইতিমধ্যে বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দামেও এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আর দেশের প্রধান রপ্তানি বাণিজ্য তৈরি পোশাকশিল্পের কাঁচামাল আমদানি আর কয়েকদিন বন্ধ থাকলে দেশের রাজস্বেও এর মারাত্মক প্রভাব পড়বে। ফলে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও বৈরী পরিবেশ সৃষ্টি হবে।

এদিকে চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, প্রতিমাসে চীন থেকে ১৪-১৫টি কনটেইনার জাহাজ এবং ৪ থেকে ৫টি জেনারেল কার্গো জাহাজ আসে চট্টগ্রাম বন্দরে। সাধারণত চীন থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে আসতে একটি জাহাজের সময় লাগে ১৩ থেকে ১৫ দিন। তবে বর্তমানে চীন থেকে জাহাজ আসা কমে গেছে। গত ১০ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৫ দিনে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে চীনের বিভিন্ন বন্দর থেকে ছেড়েছে মাত্র ১০টি জাহাজ। এর মধ্যে কয়েকটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে, অন্যগুলো আসার পথে রয়েছে। যেখানে মাসে গড়ে ২০টি জাহাজ আসে চীন থেকে, সেখানে ২৫ দিনে মাত্র ১০টি জাহাজ এসেছে। বন্দরের দেওয়া এই তথ্য থেকেই দেশের আমদানি বাণিজ্যে কী প্রভাব পড়তে শুরু করেছে তা সহজেই অনুমেয়। শুধু আমদানির ক্ষেত্রে নয়, চীনমুখী রপ্তানির ক্ষেত্রেও এই অবস্থা চলছে বলে জানা গেছে।

সর্বশেষ খবর