মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

আর রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন নেই

মাশুক চৌধুরী

আর রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন নেই

বাংলা ভাষার জন্য আমাদের আর রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন নেই। সে কাজটি করে গেছেন ১৯৫২ সালে আমাদের গৌরব-গর্বের ইতিহাসের মহানায়ক মহান ভাষাশহীদরা। সেই শহীদী রক্তে আমাদের মাতৃভাষা পেয়েছে বিশ্বস্বীকৃতি। আমরা চেয়েছিলাম আমাদের মাতৃভাষার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। পেলাম আরও বেশি। পেয়ে গেলাম বিশ্বস্বীকৃতি। ভাষার জন্য আমাদের রক্তদানের দিন ২১ ফেব্রুয়ারি আজ বিশ্ব মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদায় অভিষিক্ত। ২১-এর রক্ত আমাদের দিয়েছে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। এর আগে সেই রক্তদানের ফলেই ১৯৫৪ সালে পেয়েছিলাম যুক্তফ্রন্ট, যুক্তফ্রন্ট দিয়েছিল ২১ দফা, সাম্প্রদায়িক পাকিস্তানি সরকারের মূল উৎপাটন করে ২১ দফা দিয়েছিল পূর্ব বাংলায় আলাদা বৈশিষ্ট্যের সরকার। পেয়েছিলাম ভাষা, সাহিত্য-সংস্কৃতির মূলধারায় নিজেকে সমর্পিত করার মৌলিক পথের সন্ধান। ভাষা আন্দোলন আমাদের দিয়েছে বাঙালি জাতিসত্তার অনুপ্রেরণায় সমর্পিত হওয়ার শিক্ষা, আমরা পেয়েছি বাংলা উন্নয়ন বোর্ড ও বাংলা একাডেমির মতো মননশীল প্রতিষ্ঠান। সবচেয়ে বড় কথা সেই মহান ভাষা আন্দোলন থেকেই আমরা পেয়েছি দুঃসাহসী আন্দোলন-সংগ্রামের প্রেরণা। পেয়েছি আন্দোলন-সংগ্রামে সাফল্য অর্জনের জন্য রক্তদানের অব্যর্থ আদর্শ। সেই থেকেই পেয়েছি বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূলমন্ত্র বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা। পেয়েছি ছাত্রসমাজের ১১ দফা। স্বাধীনতার জন্য ৩০ লাখ শহীদ রক্ত দিয়েছে। আন্দোলন-সংগ্রামে যে রক্ত দিতে হয় সে কথা আমাদের প্রথম শিখিয়েছে ভাষা আন্দোলন। এর আগেও কথাটা অজানা ছিল না। ভারত উপমহাদেশে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু বলতেন, ‘তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব।’ এ কথাটা আমাদের জাতির পিতা, সর্বকালের সর্বশেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবও বলতেন। তবে তাঁর ভাষা ছিল আরও শিল্পিত। জনগণের রক্ত চাননি তিনি। ’৭০ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব। এ দেশকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ।’ রক্ত দিয়ে মাতৃভাষার মর্যাদা আদায় করেছি। রক্ত দিয়ে স্বাধীনতাও পেয়েছি। তাই ভাষা ও স্বাধীনতার জন্য আর রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন নেই। এখন প্রয়োজন স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রাম আর মাতৃভাষাটা শুদ্ধরূপে লেখা ও পড়ার চর্চা করা। অনেকের ধারণা, মাতৃভাষা শিক্ষার প্রয়োজন নেই। এ কথা ঠিক নয়। সব ভাষারই ব্যাকরণ আছে, শুদ্ধ বানান আছে, সঠিক উচ্চারণও আছে। আমরা এগুলো মানি না। এগুলো মানলেই, বাংলা ভাষা শুদ্ধভাবে লিখতে ও পড়তে পারলেই শহীদের প্রতি আমাদের যথাযথ শ্রদ্ধা প্রদর্শনের দায়িত্ব পালিত হবে। জীবনের এবং রাষ্ট্রের সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করাই আমাদের একমাত্র দায়িত্ব। ভাষার জন্য এখন আর রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আসুন নিজে বাংলা শিখি, সন্তানকে শেখাই।

সর্বশেষ খবর