বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

যুক্তরাজ্যের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্যে যেতে পারে বাংলাদেশ

ব্রেক্সিট পরবর্তী চ্যালেঞ্জ লন্ডন হাইকমিশন থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর যুক্তরাজ্য অন্তর্বর্তীকালীন একটি বাণিজ্য গাইডলাইন প্রকাশ করেছে, যেটিতে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে (এলডিসি) বাংলাদেশের জন্য জিএসপি সুবিধা বহাল রাখা হয়েছে। এ তথ্য দিয়ে  লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে সরকারের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের উচিত যুক্তরাজ্যের ভবিষ্যৎ বাণিজ্য সুবিধার দিকে তাকানো। সে লক্ষ্যে দুই দেশের মধ্যে মুক্তবাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা দরকার। গত ৩১ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য পদ ত্যাগ করে যুক্তরাজ্য। এর আগের দিন দেশটির সরকার অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য একটি বাণিজ্য গাইডলাইন প্রকাশ করে। এখন বিভিন্ন দেশ ইউরোপের এই গুরুত্বপূর্ণ দেশটির সঙ্গে নিজেদের বাণিজ্য কাঠামো পর্যালোচনা করছে। সে অনুযায়ী যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ বাণিজ্য সম্পর্ক কী হতে পারে এ বিষয়ে একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদন পাঠায় লন্ডনের বাংলাদেশ দূতাবাস। গত ৫ ফেব্রুয়ারি ওই দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর এস এম জাকারিয়া হক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এ ‘ব্রেক্সিট প্রতিবেদন’ পাঠান।  

এতে বলা হয়, ব্রেক্সিট-পরবর্তী যুগে যুক্তরাজ্য বিভিন্ন উঠতি অর্থনীতির দেশগুলোর সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তিতে যেতে পারে। প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে এ ধরনের চুক্তি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করবে। সে কারণে সরকারের উচিত হবে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের মুক্তবাণিজ্যের সম্ভাবনা পর্যালোচনা করা। এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অন্তর্বর্তী সময়ের পর যুক্তরাজ্য একটি স্থায়ী বাণিজ্য কাঠামোর দিকে যাবে। ফলে তখন বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক কী ধরনের হবে সেটিই আমাদের কাছে গুরুত্ব পাচ্ছে। নতুন ওই বাণিজ্য কাঠামোতে যদি দেশটির সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি লাভজনক হয়, তবে আমরা সে দিকেই যাব।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ এখন এমনিতেই যুক্তরাজ্যে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাণিজ্য সুবিধা পাচ্ছে। এফটিএ করা হলে বাংলাদেশ যত পণ্যে সুবিধা নেব, তাদেরও সমপরিমাণ পণ্যে সুবিধা দিতে হবে। ফলে জিএসপি সুবিধা বহালের সময়ে এ ধরনের চুক্তির দিকে যাওয়া উচিত হবে না। ভিয়েতনাম ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্যে যাচ্ছে। এতে করে প্রতিযোগী দেশটি ইউরোপে বাণিজ্য সুবিধা পাবে। এটি বাংলাদেশের রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সরকারের সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বাংলাদেশের এ ধরনের চুক্তি করতে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে আমদানি রাজস্ব। বাণিজ্য সচিব বলেন, ভিয়েতনামের ইমপোর্ট ডিউটি তাদের মোট রাজস্বের মাত্র ১২ শতাংশ। ফলে তারা এফটিএ করতে দ্বিধা করেনি। কিন্তু আমদানি থেকে আমাদের মোট রাজস্বের প্রায় ৩২ শতাংশ আসে। ফলে কোনো দেশের সঙ্গে এফটিএ করার আগে আমাদের রাজস্ব আয় নিয়েও চিন্তা করতে হয়। এখানেই আমরা পিছিয়ে পড়ি। তবে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যেহেতু আমাদের নতুন বাণিজ্য সম্পর্ক গড়তে হবে, সে কারণে দেশটির সঙ্গে মুক্তবাণিজ্যের সম্ভাব্যতা আমরা ইতিবাচকভাবেই পর্যালোচনা করব।

 ব্রেক্সিট-পরবর্তী যুক্তরাজ্যের ভবিষ্যৎ বাণিজ্যিক কাঠামোর দিকে ইঙ্গিত দিয়ে লন্ডন দূতাবাসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, যতটা অনুধাবন করা যায়, ইইউ থেকে বেরিয়ে গিয়ে ইউকে নতুন বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উঠতি অর্থনীতি ও কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ায় গুরুত্ব দেবে। বাংলাদেশ কমনওয়েলথ রাষ্ট্র হওয়ায় এ সুযোগ নিয়ে দেশটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়তে পারে। কমনওয়েলথ রাষ্ট্র হিসেবে দেশটির বাজারে বাংলাদেশের পণ্য ব্র্যান্ডিংয়ের সুযোগ নিতে পারে।

সর্বশেষ খবর