শিরোনাম
শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

খালেদার জামিন আবেদন ফের খারিজ

সম্মতি দিলে দ্রুত অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্ট শুরুর নির্দেশ । আমরা আপিল করব : মওদুদ - হাই কোর্ট গভীরভাবে দেখে আইনি সিদ্ধান্ত নিয়েছে : আইনমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

খালেদার জামিন আবেদন ফের খারিজ

জামিন আবেদন খারিজ হওয়ার পর খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের ব্রিফিং -বাংলাদেশ প্রতিদিন

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দন্ডিত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন আবারও খারিজ করে দিয়েছে হাই কোর্ট। তবে খালেদা জিয়া মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী ‘অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্ট’ নিতে সম্মতি দিলে দ্রুত তাঁর উন্নত চিকিৎসা শুরু করতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। হাই কোর্ট বলেছে, উন্নত চিকিৎসার স্বার্থে বোর্ড চাইলে নতুন কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে। গতকাল খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা পরিস্থিতি নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেওয়া প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।

এর আগেও হাই কোর্টের এই বেঞ্চে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ হয়েছিল, যা পরে আপিল বিভাগেও বহাল থাকে। পুনরায় করা এই আবেদনে নতুন কোনো যুক্তি নেই বলে গতকালের আদেশে উল্লেখ করেছে হাই কোর্ট। আদেশে হাই কোর্ট বলেছে, অবশ্যই তাঁকে (খালেদা জিয়া) মনে রাখতে হবে যে, তিনি একজন বন্দী। তিনি একজন দ-প্রাপ্ত আসামি। একজন সাধারণ মানুষ যেভাবে সুযোগ-সুবিধা নিয়ে চিকিৎসা নিতে পারে, একজন বন্দী সব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে চিকিৎসা নিতে পারবেন না। কারাবিধি ও নিয়ম-নীতি অনুযায়ী তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা হবে এবং দেশের সর্বোচ্চ চিকিৎসা কেন্দ্র (বিএসএমএমইউ) থেকে সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদিকে আদেশের পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, হাই কোর্ট গভীরভাবে দেখে আইনি সিদ্ধান্ত দিয়েছে। অন্যদিকে এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। গতকাল আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও জয়নুল আবেদীন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী ও ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা ও মোমতাজ উদ্দিন ফকির এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। ২৩ ফেব্রুয়ারি অ্যাডভান্স (উন্নত) ট্রিটমেন্টের জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সম্মতি দিয়েছেন কি না, সম্মতি দিলে চিকিৎসা শুরু হয়েছে কি না এবং শুরু হলে কী অবস্থা তা জানাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্যকে নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। পরে বুধবার বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য প্রতিবেদন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের কাছে পাঠায়। গতকাল এ প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবার। এরপর আদালত এ প্রতিবেদন পড়ে শোনায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্ট নিতে খালেদা জিয়া রাজি হননি। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে সকালে আদালত আদেশ দিতে চাইলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন রবিবার পর্যন্ত সময় চান। কিন্তু আদালত তাতে রাজি না হলে তিনি (জয়নুল আবেদীন) দুপুর ২টা পর্যন্ত সময় দেওয়ার আবেদন জানান। এরপর আদালত দুপুর ২টায় আদেশের জন্য সময় রাখে। দুপুর ২টার পরে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা দুটি সম্পূরক আবেদন দেন। ওই আবেদনের ওপর উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আদেশ দেয়।

গভীরভাবে দেখে হাই কোর্ট আইনি সিদ্ধান্ত দিয়েছে- আইনমন্ত্রী : খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়টি গভীরভাবে দেখেই হাই কোর্ট আইনি সিদ্ধান্ত দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। হাই কোর্টের আদেশের পর গতকাল বিকালে গুলশানে নিজ বাসভবনে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন। আইনমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে আমি এটুকু বলতে পারি, সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগ অত্যন্ত গভীরভাবে এটাকে দেখেছে। এরপর আইনি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে।’ চিকিৎসকের ছাড়পত্র না পাওয়ায় জামিন হলো না- এমন প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বলব, চিকিৎসকরা চিকিৎসাই শুরু করতে পারেননি। এর কারণ হলো, তারা জানিয়েছেন, অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্টের জন্য যে অনুমতি প্রয়োজন তা খালেদা জিয়া দেননি।’

আমরা আপিল করব- মওদুদ : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করে হাই কোর্টের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন তাঁর অন্যতম আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি বলেন, ‘হাই কোর্টে জামিন খারিজের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করব। তাঁর (খালেদা) জামিন খারিজের বিষয়ে যদি দেশে অস্থির অবস্থার সৃষ্টি হয়, তাহলে এর দায় সরকারকে নিতে হবে।’ গতকাল হাই কোর্টের আদেশের পর তৎক্ষণা প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের এমন কথা বলেন মওদুদ আহমদ। ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর এ মামলার রায় ঘোষণা করেন পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক ড. মো. আকতারুজ্জামান।

বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচি : বেগম খালেদা জিয়ার জামিন উচ্চ আদালতের খারিজের আদেশকে ‘সরকারের হিংসাশ্রয়ী নীতির বহিঃপ্রকাশ’ বলে অভিহিত করেছে বিএনপি। এর প্রতিবাদে দলটি আগামীকাল শনিবার ঢাকা মহানগরীসহ সারা দেশের জেলা সদরে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। হাই কোর্টের আদেশের পর গতকাল বিকাল ৪টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্মমহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, হারুনুর রশীদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। রিজভী আহমেদ বলেন, ‘উচ্চ আদালতের এই খারিজ আদেশের মধ্য দিয়ে সরকারের হিংসাশ্রয়ী নীতিরই বহিঃপ্রকাশ ঘটল।

সর্বশেষ খবর