দেশে করোনাভাইরাসে কমিউনিটি (সামাজিক) সংক্রমণ শুরু হয়েছে। তবে তা ক্লাস্টার ভিত্তিতে আছে। সামাজিক সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে পাঁচটি এলাকা। এর মধ্যে রাজধানী মিরপুরের টোলারবাগ, বাসাবো এবং মাদারীপুরের শিবচর, নারায়ণগঞ্জ ও গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলা।
এদিকে গতকাল রাতে রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বরের তিনটি, মিরপুর-১৩ নম্বরে একটি ও সবুজবাগ বাসাবো এলাকার একটি গলি লকডাউন করেছে পুলিশ। মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মোশতাক আহমেদ বলেন, মিরপুর-১ নম্বরের ওভারব্রিজ সংলগ্ন এক পরিবারে দুজন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ায় একটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। তবে আরও কয়েকটি বাড়ি নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এছাড়া মিরপুর-১৩ নম্বরে একটি বাড়িতে করোনায় মৃত্যুবরণকারী শরীয়তপুরের এক ব্যক্তি এসেছিলেন। তাই ওই বাড়িটিও আমরা লকডাউন করেছি। জানা গেছে, মিরপুর-১ নম্বর ওভারব্রিজ সংলগ্ন গলির ওই তিনটি বাড়িকে লকডাউন করে জনসাধারণের চলাচল নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ। বাড়িগুলোতে প্রায় ২৫টি পরিবার বসবাস করছেন। এদিকে, ঢাকার সবুজবাগ থানার দক্ষিণগাঁও এলাকার এক পরিবারের ৬ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় দক্ষিণগাঁও এলাকার ৯টি বাড়ি ও একটি গলি লকডাউন করেছে পুলিশ। সবুজবাগ থানার ওসি মাহবুব আলম বলেছেন, একই পরিবারের সদস্যদের বাইরে তাদের প্রতিবেশী আরেক ব্যক্তিও আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত সবাইকে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ওই এলাকায় মানুষের চলাচল সীমিত করা হয়েছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গায় রোগী পাওয়া যাচ্ছে, এ কারণে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়েছে বলা যায়। তবে তা ক্লাস্টার ভিত্তিতে আছে। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ১২ জন ঢাকার, পাঁচজন নারায়ণগঞ্জের এবং একজন মাদারীপুরের। তাদের বেশিরভাগই কয়েকটি ‘ক্লাস্টার’ (যেখানে একসঙ্গে অনেকে সংক্রমিত হয়েছেন) থেকে এসেছেন। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে তিনি এসব তথ্য তুলে ধরেন। ডা. ফ্লোরা বলেন, এখন পর্যন্ত ঢাকার বাসাবোতে নয়জন, বৃহত্তর মিরপুরে ১১ জন, মাদারীপুর এবং নারায়ণগঞ্জে ১১ জন করে আক্রান্ত হয়েছেন। মাদারীপুরে ক্লাস্টার আগে থেকেই ছিল। এ কারণে সবার আগে আমরা মাদারীপুরে নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলাম। নারায়ণগঞ্জেও আমাদের নিয়ন্ত্রণ জোরদার করেছি। এ ১৮ জনের বেশিরভাগই আগে পাওয়া ক্লাস্টারের অংশ। তিনি বলেন, মিরপুরেও আমরা আগে থেকেই নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিলাম। সেখানে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে যারা এসেছিলেন, তাদের ছাড়াও সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের আমরা পরীক্ষা করছি, যাতে রোগটি সেখান থেকে ছড়িয়ে না পড়ে। আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গায় রোগী পাওয়া যাচ্ছে, এ কারণে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়েছে বলা যায়। তবে তা ক্লাস্টার ভিত্তিতে আছে। এখনো বলছি, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু একটা কথা মনে রাখতে হবে, জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে। এটা যদি না করি তাহলে সংক্রমণ কিন্তু ক্লাস্টার থেকে সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। সুতরাং সবাইকে অনুরোধ করছি সব ধরনের জনসমাগম এড়িয়ে চলুন। তিনি জানান, সর্বশেষ যে ব্যক্তি মারা গেছেন, তিনি নারায়ণগঞ্জের অধিবাসী। তিনি পুরুষ, বয়স ৫৫।