বুধবার, ৮ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

সর্দি জ্বর শ্বাসকষ্ট নিয়ে শিশুসহ আরও আটজনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টের মতো করোনা উপসর্গ নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে আটজন মৃত্যুবরণ করেছেন। নারায়ণগঞ্জ, ঝালকাঠি, খুলনা, লালমনিরহাট, গাজীপুর, কুমিল্লার নাঙ্গলকোট ও কিশোরগঞ্জে এসব মৃত্যুর পর বিভিন্ন বাড়িঘর-এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। এলাকাগুলোতে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক। ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলায় জ্বর, কাশি, গলাব্যথা নিয়ে ছয় বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকালে বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। শিশুটি কিডনি সমস্যায় ভুগছিল বলে তার পরিবার জানিয়েছে। এ ঘটনায় ওই বাড়িটি লকডাউন করেছে উপজেলা প্রশাসন। বাড়িতে বসবাসকারী ১২ জনকে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই শিশুর সংস্পর্শে থাকা তার কিশোর এক খালাতো ভাই জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। জেলা সিভিল সার্জন শ্যামল কৃষ্ণ হাওলাদার জানান, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা ওই বাড়িতে যাওয়ার আগেই স্বজনরা শিশুটির লাশ দাফন করেছেন। তবে লোকজন যাতে বাড়ির বাইরে যেতে না পারে, সে জন্য লকডাউন করা হয়েছে। খুলনার রূপসা উপজেলার দেবীপুর গ্রামে অসুস্থ হয়ে সালেহা বেগম নামের এক বৃদ্ধা মারা গেছেন। সোমবার রাত দেড়টার দিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ষাটোর্ধ্ব ওই নারী। কিছু দিন আগে তিনি জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে ঢাকা থেকে খুলনায় যান। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, কিডনি বিকল হয়ে মারা গেছেন তিনি। পরে রূপসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাসরিন আক্তার ওই বাড়ির সবাইকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেন। তার বাড়ির সামনে লাল পতাকা টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে ওই বৃদ্ধার লাশ স্বাভাবিক নিয়মেই পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এদিকে তার সংস্পর্শে আসা আত্মীয়স্বজন ও আশপাশের ২০ পরিবারকে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, সালেহা বেগম জ্বর, সর্দি, কাশিতে আক্রান্ত ছিলেন। তিনি সাত দিন আগে নাতির সঙ্গে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে আসেন এবং তথ্য গোপন করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগ থেকে চিকিৎসা নেন। পরে অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে সোমবার দুপুরের দিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেন স্বজনরা। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার রাতে মারা যান তিনি। কিশোরগঞ্জে গতকাল করোনার উপসর্গ নিয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন পাকুন্দিয়া উপজেলার নামা পুটিয়া গ্রামের সুমন মিয়া (২৫) ও বাজিতপুর উপজেলার তাতালচর গ্রামের আমরু মিয়া (৫২)। প্রশাসন পাকুন্দিয়ার নামা পুটিয়া গ্রামের ১০০ বাড়ি লকডাউন করে দিয়েছে। জানা গেছে, আমরু মিয়া জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে সোমবার বাজিতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। গতকাল সকালে তার মৃত্যু হয়। এ ছাড়া পাকুন্দিয়া উপজেলার নামা পুটিয়া গ্রামের একটি বেসরকারি কোম্পানির কর্মচারী সুমন মিয়া একই উপসর্গ নিয়ে নিজ বাড়িতে গতকাল দুপুরে মারা যান। এ ঘটনায় প্রশাসন পাকুন্দিয়ার নামা পুটিয়া গ্রামের ১০০ বাড়ি লকডাউন করে দিয়েছে। পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ হাসান এ কথা জানিয়েছেন।

কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে করোনার উপসর্গ নিয়ে যুবকের মৃত্যু : কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মোশারফ হোসেন তালুকদার (৪০) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল উপজেলার দৌলখাঁর গ্রামের নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান। তিনি ওই গ্রামের মৃত আলী আক্কাসের ছেলে। ওই যুবকের করোনা নিশ্চিতে নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকা আইইডিসিআরে প্রেরণ করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসারে স্থানীয় প্রশাসন সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে ওই ব্যক্তির লাশ দাফন করে।

বাড়িতে লাশ পড়ে আছে, ধরছে না কেউ : নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় সর্দি-কাশি নিয়ে নিজ বাড়ির কক্ষে মৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম (৬০)। পরিবারের সদস্যরা আহাজারি করলেও এলাকার কেউ এগিয়ে আসছেন না। গতকাল সকালে ফতুল্লার কোতালেরবাগ এলাকায় নিজ বাড়িতে তার মৃত্যু হয়। তিনি ওই এলাকার মৃত জনাব আলীর ছেলে। পরিবারের লোকজন জানান, ১০-১২ দিন আগে তিনি শ্বাসকষ্ট ও কাশি নিয়ে অসুস্থ হন। পরে তাকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে (ভিক্টোরিয়া) নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসা শেষে তাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ওই সময় তার নমুনা পরীক্ষার জন্য রক্ত ও থুথু রেখে দেন চিকিৎসক। এরপর তিনি গতকাল মারা যান। তিনি হার্ট ও ডায়াবেটিক রোগী। স্থানীরা জানান, বাড়ির বাইরে লোকজন জমায়েত হতে শুরু করেছে। পরিবারের সদস্যরা আহাজারি করলেও এলাকার কেউ এগিয়ে আসছেন না। ফতুল্লা মডেল থানার ওসি অপারেশন তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘তার মৃত্যু করোনায় হয়নি। তবে নমুনাও পরীক্ষা হয়নি। শ্বাসকষ্ট, হার্ট ও ডায়াবেটিক রোগী ছিলেন। কয়েক দিন আগে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। গতকাল মৃত্যুবরণ করেছেন। পরিবারে এক নারী ও দুই শিশু সদস্য ছাড়া আর কেউ নেই। আমরা স্থানীয় মেম্বার ও ইউএনওকে জানিয়েছি। তারা ব্যবস্থা নিচ্ছেন।’

সর্বশেষ খবর