করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গতকাল পর্যন্ত বিদেশে ১৩৫ জন বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছেন। এরমধ্যে শুধু নিউইয়র্কেই ৮৬ জন বাংলাদেশি মারা গেছেন। অন্যান্য স্থানের মধ্যে যুক্তরাজ্যে মারা গেছেন ৩৬ জন, সৌদি আরবে ৩, ইতালিতে ৩, কাতারে ৩, স্পেন-সুইডেন-লিবিয়া ও গাম্বিয়ায় একজন করে মোট ৪ জন।
যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলছে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের মৃত্যুর খবর প্রকাশ করেছেন তাদের স্বজনরা। এর মধ্যে দুই প্রবীণ ব্যক্তিত্ব রয়েছেন। সরকারি সূত্রে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান প্রকাশিত না হলেও সোশ্যাল মিডিয়ার পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ব্রিটেনে এ পর্যন্ত ৩৬ জন বাংলাদেশি মৃত্যুবরণ করেছেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গতকাল ভোররাতে মৃত্যুবরণ করেছেন পূর্ব লন্ডনের স্টেপনিগ্রিনের বাসিন্দা জামিল আহমদ আজাদ (৬৫)। তিনি স্ত্রী ৩ ছেলে ৪ ছেলেসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন রেখে গেছন। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ কিডনি জটিলতাসহ নানা রোগে আক্রান্ত ছিলেন। তার বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার বুধবারী ইউনিয়নের বানীগ্রামে। এর আগে সোমবার বিকালে মারা যান লিভারপুলের বাসিন্দা ৬০ বছর বয়সী হাজী খলিলুর রহমান। তার বাড়ি সিলেটের ওসমানীনগরের খুছকিপুর গ্রামে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতাসহ নানা রোগে আক্রান্ত ছিলেন। নিউইয়র্ক থেকে এনআরবি নিউজ জানায়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে নিউইয়র্ক অঞ্চলে দুই মহিলাসহ আরও ৮ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসীদের মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ৮৬ জনে। ব্রঙ্কস, কুইন্স, ব্রুকলিনের বিভিন্ন হাসপাতালে তারা চিকিৎসাধীন ছিলেন। নিউজার্সির প্যাটারসনে রুবেল নামে ৩২ বছরের এক তরুণ, নিউইয়র্ক সিটির ব্রঙ্কসে মন্টিফিউর হাসপাতালে হাসিনা ইয়াসমীন (৪৪), জ্যামাইকা হাসপাতালে তানিয়া আকতার (৩৮), কুইন্স হাসপাতালে সাঈদ খালেদ (৬২), ব্রুকলিনের মায়মনিডেস হাসপাতালে আবদুর রাজ্জাক (৫৬) এবং মো. ইমাম খান তপন (৩২) মারা যান বলে হাসপাতালের উদ্ধৃতি দিয়ে তাদের স্বজনরা জানান। এদিন ভোররাতে নিউইয়র্কের এলমহার্স্ট হাসপাতালে মারা গেছেন বৃহত্তর কুমিল্লা সমিতির সাবেক সেক্রেটারি ও যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক বাকির আজাদ (৫৭)। নিউইয়র্কসহ আশপাশের হাসপাতালে কমপক্ষে ৫ শতাধিক বাংলাদেশি রয়েছেন আইসিইউতে। এরমধ্যে গুরুতর অবস্থায় রয়েছেন বাংলাদেশ সোসাইটির বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারপারসন এম আজিজ, ব্রঙ্কসের একটি মসজিদের প্রেসিডেন্ট গিয়াস আহমেদ। গত ১৯ মার্চ থেকেই নিউইয়র্ক অঞ্চলে ঘরে থাকার নির্দেশ জারি হয়েছে। এই নির্দেশ ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। নিউইয়র্কের রাজ্য গভর্নর এ্যান্ড্রু ক্যুমো গতকাল দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে জানান, লোকজন যত বেশি ঘরে থাকবেন, ততই এই রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি কমে। ইতিমধ্যেই এমন সুফল আমরা দেখেছি। এজন্য স্কুল-কলেজসহ ব্যবসা-বাণিজ্য-কারখানা বন্ধ রাখা হচ্ছে। কেবল ওষুধ এবং খাবার কেনার জন্যই লোকজনকে বাসার বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। ফার্মেসি এবং খাবার দোকান ও রেস্টুরেন্টগুলোর অধিকাংশই বন্ধ হয়ে গেছে। এক ধরনের স্থবিতরতায় আক্রান্ত গোটা কমিউনিটিতে প্রতিদিনই শুধু মারা যাওয়ার তথ্য ঘোরপাক খাচ্ছে। বিকাল পর্যন্ত নিউইয়র্ক সিটিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭২,১৮১ জন। এরমধ্যে মারা গেছে ৪,৭৫৮ জন। রাজ্য গভর্নর জানান, নিউইয়র্ক সিটি এবং আশপাশের হাসপাতালে বেড এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামের তীব্র সংকট মোকাবিলায় সেনাবাহিনী ম্যানহাটানে জ্যাকভ জেভিট সেন্টারে ২,৫০০ শয্যার একটি ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল স্থাপন করেছে।
এছাড়া নৌবাহিনীর একটি জাহাজ নোঙর করেছে, সেখানেও একহাজার বেডের হাসপাতাল রয়েছে। এরফলে চিকিৎসা নিয়ে যে মহাসংকট দেখা দিয়েছিল, তার কিছুটা হলেও লাঘব হচ্ছে বলে সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাসিয়ো এদিন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করেন।