মঙ্গলবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

আমি রোজা রেখেছি আল্লাহর জন্য

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

আমি রোজা রেখেছি আল্লাহর জন্য

হে বিশ্বাসী মুমিন বান্দাগণ! পৃথিবীর এমন বেদনাপূর্ণ সময়ে আমরা সিয়াম সাধনার তিনটি দিন অতিবাহিত করে এখন চতুর্থ রোজা পালন করছি। আল্লাহর ইচ্ছায় বাকি রোজাগুলোও সহিহ সালামতে পালন করব ইনশাল্লাহ। বান্দা যখন আত্মশুদ্ধির পথে হাঁটে, অন্যভাবে বলতে গেলে বান্দা সিয়াম সাধনায় থাকে তখন শয়তান নানাভাবে তার সাধনায় বাধা দিতে চেষ্টা করে। তাই একজন সায়েম অর্থাৎ সিয়াম সাধককে সবসময় সতর্ক-সচেতন থাকতে হবে। নতুবা একটু ভুলে একটু অবহেলায় সব পরিশ্রম প- হয়ে যেতে পারে। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে একটি হাদিসে কুদসি বর্ণিত হয়েছে। রসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা বলেছেন, আদম সন্তানের প্রত্যেকটা কাজ তার নিজের জন্য। তবে রোজা ছাড়া। কেননা রোজা আমার জন্য এবং আমিই তার প্রতিদান দেব। আর রোজা হচ্ছে ঢালের মতো। কাজেই কেউ যখন রোজা রাখে, তখন সে যেন কোনো অশ্লীল কথা না বলে এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। কেউ যদি তাকে গালমন্দ করে অথবা লড়াই করতে আসে, তবে সে যেন বলে, আমি রোজাদার।’ (বুখারি ও মুসলিম।) মুসলিম শরিফের অন্য বর্ণনায় আছে, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আদম সন্তানের সকল কাজের সওয়াব দশ গুণ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়, কিন্তু রোজার কথা ভিন্ন। কেননা রোজা আমারই জন্য এবং আমিই তার প্রতিদান দেব।’ (মুসলিম।) পবিত্র রমজান মাসে রোজাদারের জন্য মহান আল্লাহ তাঁর রহমত এবং নিয়ামতের অফুরন্ত ভান্ডারের দরজা খুলে দেন। এ সময় প্রতিটি সিয়াম সাধকের একান্ত কর্তব্য হলো প্রভুর এই অফুরন্ত ভান্ডার থেকে রহমত ও দয়া লুফে নেওয়া। যদিও সিয়াম সাধনা প্রতিটি নবীর উম্মতের ওপরই ফরজ ছিল, তবে উম্মতে মুহাম্মদি হওয়ার কারণে আল্লাহ পাক আমাদের বিশেষ কিছু সুবিধা দিয়েছেন। হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলে পাক (সা.) বলেছেন, রমজান মাসে আমার উম্মতকে পাঁচটি বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে, যা আমার পূর্ববর্তী কোনো নবী কিংবা নবীর উম্মতকে দেওয়া হয়নি। প্রথমটি হলো, রমজানের প্রথম রাতে আল্লাহতায়ালা যার দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন, তাকে কখনো শাস্তি দেন না। দ্বিতীয়ত, সন্ধ্যার সময় তাদের মুখ থেকে যে দুর্গন্ধ বের হয়, তা আল্লাহতায়ালার কাছে মেশকের সুগন্ধির চেয়েও উত্তম। তৃতীয়ত, রমজানের প্রত্যেক দিনে ও রাতে ফেরেশতারা রোজাদারদের জন্য দোয়া করেন। চতুর্থত, আল্লাহতায়ালা তাঁর বেহেশতকে বলেন, তুমি আমার বান্দার জন্য সুসজ্জিত ও প্রস্তুত হও। আমার বান্দারা দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি পেয়ে আমার বাড়িতে ও আমার সম্মানজনক আশ্রয়ে এসে বিশ্রাম নেবে। পঞ্চমত, রমজানের শেষ রাতে আল্লহতায়ালা তাদের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন। এক ব্যক্তি বলল, এটা কি লাইলাতুল কদর? রসুল পাক (সা.) বললেন, না, তুমি দেখনি, শ্রমিকরা যখন কাজ শেষ করে, তখনই পারিশ্রমিক পায়। (শুআবুল ইমান।) আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে মাহে রমজানের কল্যাণ ও বরকত পরিপূর্ণভাবে অর্জন করার তাওফিক দিন। লেখক : বিশিষ্ট মুফাস্সিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাস্সির সোসাইটি www.selimazadi.com

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর