২১০টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে (কভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দুই লাখ ১৯ হাজারে পৌঁছেছে। ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে ৩১ লাখ ৫৫ হাজার মানুষের শরীরে। আর আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৯ লাখ ৬৫ হাজার মানুষ।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বরে চীন থেকে সংক্রমণ শুরু হওয়া কভিড-১৯ রোগে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন বিশ্বের ৩১ লাখ ৫৫ হাজার মানুষ। আক্রান্তদের মধ্যে বর্তমানে প্রায় ২০ লাখ মানুষ চিকিৎসাধীন এবং ৫৭ হাজার জন আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন। তবে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে উঠেছেন অনেক মানুষ। তথ্যে বলা হয়, করোনাভাইরাসজনিত কভিড-১৯ রোগ থেকে আমেরিকায় সেরে উঠেছে এক লাখ ৪৩ হাজার জন, স্পেনে এক লাখ ২৪ হাজার জন, চীনের মূল ভূখ-ে ৭৮ হাজার, ইরানে ৭৩ হাজার, ইতালিতে ৬৯ হাজার এবং ফ্রান্সে ৪৭ হাজার জন। এ ছাড়া তুরস্কে ৩৯ হাজার, সুইজারল্যান্ডে ২৩ হাজার, কানাডায় ১৯ হাজার ১৯০, অস্ট্রিয়ায় ১২ হাজার ৫৮০, বেলজিয়ামে ১১ হাজার, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৯ হাজার, অস্ট্রেলিয়ায় ৬ হাজার এবং মালয়েশিয়ায় চার হাজার ৩২ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ভাইরাসটির আক্রমণে সবচেয়ে বাজে অবস্থায় রয়েছে আমেরিকা। দেশটিতে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লাখ ৩৫ হাজার ৭৬৫ জন। আর মৃতের সংখ্যা ৫৯ হাজার ২৬৬ জন। এটি ভিয়েতনাম যুদ্ধে নিহত মার্কিন নাগরিকদের চেয়েও বেশি। প্রায় দুই দশকের ভিয়েতনাম যুদ্ধে ৫৮ হাজার ২২০ জন মার্কিন নাগরিকের মৃত্যু হয়েছিল। মৃতের সংখ্যায় আমেরিকার পরেই রয়েছে ইউরোপের দেশ ইতালি। নতুন ৩৮২ জনসহ দেশটিতে মারা গেছেন ২৭ হাজার ৩৫৯ জন। দেশটিতে নতুন করে শনাক্ত হয়েছে দুই হাজার ৯১ জন। মৃতের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে থাকা স্পেনে অবশ্য ইতালির চেয়েও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। সেখানে মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টায় দুই হাজার ৭০৬ জনসহ মোট আক্রান্ত হয়েছেন দুই লাখ ৩২ হাজার ১২৮ জন। আর নতুন ৩০১ জনসহ এ পর্যন্ত মারা গেছেন ২৩ হাজার ৮২২ জন। এ ছাড়া ফ্রান্সে অন্তত ২৪ হাজার, ব্রিটেনে ২২ হাজার, বেলজিয়ামে ৮ হাজার, জার্মানিতে ৭ হাজার, ইরানে ৬ হাজার, ব্রাজিলে ৫ হাজার ৬৩, নেদারল্যান্ডসে ৪ হাজার ৫৬৬ জন, তুরস্কে ৩ হাজার, কানাডাতে ৩ হাজার এবং সুইডেনে ২ হাজার ৩৫৫ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। এবার ট্রাম্পের ধারণা ৭০ হাজার মরবেন :? জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য কেন্দ্রের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত আমেরিকায় ৫৬ হাজার ২৪৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তার ঠিক আগের দিন সন্ধ্যায় হোয়াইট হাউসের নিয়মমাফিক সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘আমার এখন মনে হচ্ছে আমেরিকায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার মানুষ মারা যাবেন। বিশেষজ্ঞদের যেখানে অনুমান ছিল ২২ লাখ লোক মারা যাবেন, সে তুলনায় ৬০-৭০ হাজার কিছুই নয়।’? পরক্ষণেই নিজের স্বস্তি আড়াল করতে দুঃখ প্রকাশ করে ট্রাম্প বলেন, ‘৬০-৭০ হাজারও যথেষ্ট বেশি। একটি লোক মারা যাওয়াও দুঃসহ গুরুভার।’ অবশ্য এর আট দিন আগে ট্রাম্পই বলেছিলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে ৫০-৬০ হাজার লোক মারা যাবেন।’ ব্রিটেনে ২৪ ঘণ্টায় ৫৮৬ জনের মৃত্যু : যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি জানান, ব্রিটেনে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা আবারও বেড়েছে। ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ অ্যান্ড সোশ্যাল কেয়ার জানিয়েছে, মঙ্গলবার বেলা ৫টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৫৮৬ জনের।এর আগের দিন মৃত্যুবরণ করেছিলেন ৩৬০ জন। মোট মৃতের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৬৭৮ জনে। তবে এই মৃত্যুর পরিসংখ্যান শুধু যারা হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেনÑ তাদের নিয়ে। ধারণা করা হচ্ছে বাড়ি ঘরে এবং কেয়ার হাউসে আরও ৭ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে গত সোমবার করোনায় নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৩১০ জন, রবিবার ছিল ৪ হাজার ৪৬৩ জন, শনিবার ছিল ৪ হাজার ৯১৩, শুক্রবার ৫ হাজার ৩৮৬ জন। মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ১ লাখ ৬০ হাজার জন। বিবিসি জানিয়েছে, মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টায় ব্রিটেনের ইংল্যান্ডে মৃত্যুবরণ করেন ৫৪৬ জন, স্কটল্যান্ডে ৭০ জন, ওয়েলসে ১৭ জন।
মৃত্যুতে চীনকে ছাড়াল ব্রাজিল : করোনাভাইরাস মহামারীতে প্রাণহানির সংখ্যায় চীনকেও ছাড়িয়ে গেছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিল। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে দুঃখ প্রকাশ করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জেইর বোলসোনারো। মঙ্গলবার ব্রাজিলে রেকর্ড ৪৭৪ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে ব্রাজিলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এদিন রেকর্ড সংখ্যক মৃত্যুর বিষয়ে বোলসোনারোকে প্রশ্ন করেছিলেন সাংবাদিকরা। তার জবাব, ‘তাতে কী হয়েছে? আমি দুঃখিত।’ এ সময় সাংবাদিকদের পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, ‘আমাকে আপনারা কী করতে বলেন?’
শুরু থেকেই করোনা মহামারীকে খুব একটা গুরুত্ব দেননি ব্রাজিলিয়ান প্রেসিডেন্ট। বরং একে ‘সামান্য ফ্লু’ মন্তব্য করে মহামারী নিয়ন্ত্রণে লকডাউনেরও বিরোধিতা করেছেন তিনি। করোনার বিস্তার প্রতিরোধে গত মাসে লকডাউন নির্দেশনা জারি হয় ব্রাজিলের বেশ কয়েকটি বড় শহরে। সে সময় শহরগুলোর গভর্নর-মেয়রদের এমন সিদ্ধান্তের সরাসরি বিরোধিতা করেন বোলসোনারো। এর মাধ্যমে ব্রাজিলের অর্থনীতি ধ্বংসের পাঁয়তারা চলছে দাবি করে লকডাউনের নির্দেশদাতাদের ‘ক্রিমিনাল’ বলে মন্তব্য করেন তিনি। গত ১৯ এপ্রিল রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় লকডাউনবিরোধীদের এক সমাবেশেও যোগ দিয়েছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বারবার সতর্ক করলেও সে সময় মাস্ক বা গ্লাভসজাতীয় কোনো ধরনের সুরক্ষা উপকরণ পরেননি তিনি। ভাষণের সময় জনসম্মুখে কাশি দিতেও দেখা গেছে তাকে। এর আগে মার্চের শেষের দিকে এক বক্তব্যে অনেকটা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতোই করোনাভাইরাসকে ‘সামান্য ফ্লু’ বলে মন্তব্য করেন জেইর বোলসোনারো। ‘এক দিন সবাই মারা যাবো’ উল্লেখ করে জনগণকে কাজে যোগ দিতেও আহ্বান জানান তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুযায়ী, ব্রাজিলে মঙ্গলবার পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭৩ হাজার ২৩৫ জন। মারা গেছেন অন্তত ৫ হাজার ৮৩ জন। লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে ব্রাজিলেই এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। সূত্র : আল-জাজিরা, ভক্স, রয়টার্স।
৩৪ দেশে ৩২ লাখ মানুষ মারা যাবে : আন্তর্জাতিক উদ্ধার কমিটি বা আইআরসি গত মঙ্গলবার সতর্ক করে দিয়েছে যেÑ আফগানিস্তান, সিরিয়া এবং ইয়েমেনসহ ৩৪টি দেশ যেখানে হয় যুদ্ধ চলছে কিংবা অন্যান্য সংকট রয়েছেÑ সে সব দেশে করোনাভাইরাসে প্রায় এক কোটি লোক সংক্রমিত হবে এবং মৃত্যুর সংখ্যা হবে ৩২ লাখের মতো। আইআরসি বলছে, এই রোগ সংক্রমণের সম্ভাব্য চিত্রে দেখা যাচ্ছে যে, ওই সব বিপদসংকুল দেশে ৫০ কোটি থেকে ১০০ কোটি লোক সংক্রমিত হতে পারে এবং প্রাণহানি ঘটতে পারে ১৭ লাখ থেকে ৩২ লাখ লোকের।
আইআরসি-এর প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান নির্বাহী ডেভিড মিলিব্যান্ড বলেন, এই সংখ্যা আমাদের আরও বেশি সচকিত করছে, কারণ বিশ্বের সব চেয়ে দুর্বল এবং যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশগুলোকে এই মহামারীর ধ্বংসাত্মক এবং পূর্ণ ভার বহন করতে হবে। মিলিব্যান্ড বলেন, বিশ্বব্যাপী এই মহামারীর বৃদ্ধি রোধ করতে এর বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের এখনো সময় আছে। তবে তিনি বলেন, এই লড়াইয়ে যারা সম্মুখসারিতে রয়েছেন, তাদের জন্য জরুরি অর্থায়ন প্রয়োজন।