শুক্রবার, ২৯ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

পাঁচ দিনে ১০৭ মৃত্যু আক্রান্ত ৮ হাজার

বিশেষ প্রতিনিধি

পাঁচ দিনে ১০৭ মৃত্যু আক্রান্ত ৮ হাজার

ঈদের ছুটিতে ২৪ থেকে ২৮ মে পর্যন্ত দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১০৭ জন। এর মধ্যে ২৪ মে সর্বোচ্চ ২৮ জন, ২৫ ও ২৬ মে ২১ জন করে, ২৭ মে ২২ জন এবং গতকাল ২৮ মে ১৫ জন মারা গেছেন। একই সময়ে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৮ হাজার ২৪৩ জন। এ ছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত কয়েক দিনে  সাবেক এমপি, শিক্ষাবিদ, চিকিৎসকসহ কয়েকজন ভিআইপি মারা গেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক এমপি হাজী মকবুল হোসেন, সানবিমস স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর স্ত্রী নিলুফার মঞ্জুর, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের শিশু বিভাগের চিকিৎসক এ এম জাফর হোসাইন রুমি। এ ছাড়া গত দুই দিনে ঢাকা ও বরিশালে দুই পুলিশ সদস্যের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য হাজী মকবুল হোসেন ২৪ মে রাত ৯টার কিছু পরে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) মারা যান। তার পরিবারের এক সদস্য গণমাধ্যমকে জানান, হাজী মকবুল করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। মকবুল হোসেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকার ধানমন্ডি-মোহাম্মদপুর আসন থেকে নির্বাচিত হন। হাজী মকবুলের পরিবারের ওই সদস্য বলেন, করোনা মহামারীর মধ্যে ঢাকা, মুন্সীগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় মানুষের মধ্যে নিয়মিত ত্রাণ বিতরণ করছিলেন সাবেক এই এমপি। ১৪ মে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই সদস্য জানান, হাজী মকবুলের স্ত্রীও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার সানবিমস স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ নিলুফার মঞ্জুর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার মারা যান। নিলুফার মঞ্জুর বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়ী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর স্ত্রী। এপেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা মঞ্জুর এলাহী নিজেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। তিনি এখন বাসায় আছেন বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। নিলুফার মঞ্জুর ১৯৭৪ সালে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সানবিমস স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি সোশ্যাল মার্কেটিং কোম্পানির সঙ্গেও যুক্ত। তার মৃত্যুতে বসুন্ধরা গ্রুপ গভীর শোক প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া এ স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থীদের অনেকেই ফেসবুকে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে শোক প্রকাশ করেছেন। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২ হাজার ২৯ জন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এটিই এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ শনাক্ত। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ৪০ হাজার ৩২১ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হলেন। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরও ১৫ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৫৫৯ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৫০০ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হলেন ৮ হাজার ৪২৫ জন।

গতকাল কভিড-১৯ সম্পর্কিত সার্বিক পরিস্থিতি জানাতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত বুলেটিনে এ তথ্য জানান অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা। তিনি জানান, মারা যাওয়া ১৫ জনের মধ্যে পুরুষ ১১ জন, নারী চারজন। এদের মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে ছয়জন এবং নারায়ণগঞ্জে একজন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম মহানগরীতে দুজন, জেলায় দুজন, কক্সবাজার ও কুমিল্লায় দুজন করে মৃত্যুবরণ করেছেন। নাসিমা সুলতানা জানান, নতুন যুক্ত হওয়া সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের ল্যাবসহ ৪৯টি ল্যাবে আগের দিনের নমুনাসহ এক দিনে ৯ হাজার ৩১০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ নিয়ে মোট নমুনা পরীক্ষা হলো ২ লাখ ৭৫ হাজার ৭৮৬টি। অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাইরে বের হলে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। এদিকে সারা দেশের কোথায় কোথায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নতুন রোগী শনাক্ত হলেন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন এর সব শেষ খবর জানিয়েছেন আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা-

চট্টগ্রাম : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক দিনে ছয় ঘণ্টার ব্যবধানে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) ১৮ বছর বয়সী এক নারীর মৃত্যু হয়। এ ছাড়া বিকাল সাড়ে ৪টায় একই হাসপাতালের আইসিইউতে মৃত্যু হয় ৪৫ বছর বয়সী এক পুরুষের।

জুনের মাঝামাঝি করোনার সংক্রমণ বাড়ার শঙ্কা : আইইডিসিআর বিশ্বব্যাপী তান্ডব চালানো করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাংলাদেশেও চলছে। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী ধারা জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলতে থাকবে বলে ধারণা করছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। তারপর ধীরে ধীরে সংক্রমণের হার কমার সম্ভাবনা রয়েছে। জুলাইয়ের শেষ নাগাদ নামতে পারে সহনীয় পর্যায়ে। তবে জাতীয় পরামর্শক কমিটি বলছে, সংক্রমণের শীর্ষবিন্দুতে এখনো পৌঁছায়নি দেশ। তাই জুনের প্রথম দু-তিন সপ্তাহ কড়াকড়িভাবে বিধিনিষেধ নিশ্চিত করা জরুরি। দেশে করোনাভাইরাসে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫০০। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ঘোষণা অনুযায়ী এখনো সংক্রমণের ঝুঁঁকিতে পুরো দেশ। আইইডিসিআরের প্রাথমিক প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, জুনের প্রথম সপ্তাহে করোনাভাইরাসে সংক্রমণের হার কমে আসার কথা ছিল। কিন্তু একের পর এক ভুলের কারণে সংক্রমণ তো কমেইনি বরং ঊর্ধ্বমুখী। আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর বলেন, হঠাৎ করে বলা হলো অফিস, গার্মেন্ট খুলে দেওয়া হবে সবাই ঢাকা চলে আস। তখন একদল লোক ঢাকায় চলে এলো এবং পরদিন বেতন দিয়ে বলা হলো তোমরা বাড়ি চলে যাও।

এভাবেই সারা দেশে করোনাটা ছড়িয়েছে। এরপর মার্কেট খুলে দিয়ে আরও ঝুঁঁকি বাড়ানো হলো।

জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, একটি ফেরির মধ্যে গাদাগাদি করে লোকজন বাড়ি গেল। এদের মধ্যে অনেকে উপসর্গ ছাড়াই কভিড পজিটিভ ছিল, যারা গ্রামে গিয়ে সবার সঙ্গে মিশেছে। এর ফলে এটি খুব দ্রুতই গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে।

সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে টানা ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটি শেষ হচ্ছে ৩০ মে। পরদিন খুলছে অফিস-আদালত। এই পরিস্থিতি বিবেচনায় সংক্রমণ নিয়ে নতুন আরেকটি প্রক্ষেপণ তৈরি করেছে আইইডিসিআর। সে অনুযায়ী, জুলাইয়ের শেষ দিকে সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসতে পারে সংক্রমণ।

আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের হিসাব মতে জুনের ১৫ তারিখ পর্যন্ত এখন যেমন করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে তেমনই থাকবে। এটি সহজে স্বাভাবিক হবে না তবে জুলাইয়ের শেষের দিকে সহনীয় পর্যায়ে আসতে পারে।’

অবশ্য জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি বলছে, সংক্রমণের শীর্ষবিন্দুর দেখা মেলেনি এখনো। তাই জুনে কড়াকড়িভাবে বিধিনিষেধ নিশ্চিতের বিকল্প নেই। তবে সংক্রমণ ঠেকাতে বিধিনিষেধ নিশ্চিত করার ওপরই নির্ভর করে যথাযথ প্রক্ষেপণ। তাই শারীরিক দূরত্বসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর জোর দেন বিশেষজ্ঞরা।

 

বগুড়া : বগুড়ায় করোনা  আইসোলেশন ইউনিট মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালে করোনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফণীন্দ্র সূত্রধর (৫৫) নামের এক ব্যক্তি মারা গেছেন। তিনি সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার রতনকান্দি ইউনিয়নের হরিণাবাগবাটি গ্রামের বাসিন্দা। রবিবার দিবাগত রাত ৩টায় তিনি মারা যান। এ ছাড়া জেলায়  গত ২৪ ঘন্টায় ৫০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে একই পরিবারের ১২ জন রয়েছেন।

রংপুর : বিভাগের মধ্যে আক্রান্ত রোগীর শীর্ষে রয়েছে রংপুর। এখানে ৩৭৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৬০ জনই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্বাস্থ্য বিভাগের লোক। এদের মধ্যে পুলিশ ৫৬ জন, র‌্যাব ১৮ জন, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক ৩৮ জন , নার্স ও কর্মচারী ২৬ জন, হাসপাতালে কর্তব্যরত আনসার ও ভিডিপির সদস্য ২২ জন। এ ছাড়া রংপুর রেঞ্জ রিজার্ভ পুলিশের এসপি মেনহাজুল ইসলামসহ তার পরিবারের সাতজন আক্রান্ত হয়েছেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে বিভাগে এখন পর্যন্ত ১২ জন মারা গেছেন। এদের মধ্যে রংপুরে পাঁচজন, পঞ্চগড়ে একজন, নীলফামারীতে দুইজন, দিনাজপুরে একজন এবং গাইবান্ধায় তিনজন রয়েছেন।

দিনাজপুর : ২৪ ঘণ্টায় জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের ১২ জনসহ ৩১ জন করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন। ৩১ জনের মধ্যে দিনাজপুর সদরে তিনজন পুরুষ একজন নারী, নবাবগঞ্জে আটজন পুরুষ পাঁচজন নারী, বিরামপুরে সাতজন পুরুষ একজন নারী, চিরিরবন্দরে দুজন পুরুষ এবং পার্বতীপুরে একজন পুরুষ ও দুজন নারী, আর একজন এক মাস বয়সের শিশু রয়েছে। এ নিয়ে দিনাজপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৭৯ জন, যার মধ্যে পুরুষ ১৩১ জন, নারী ৩৯ জন ও শিশু ৯ জন।

টাঙ্গাইল : জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে দুইজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। গতকাল সকাল পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩৫ জনে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত জেলায় মোট মারা গেছেন চারজন। সুস্থ হয়েছেন ৩৮ জন।

গাজীপুর : জেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এক ব্যক্তি শনিবার রাতে মারা গেছেন। দক্ষিণ কোরিয়া-ফেরত ওই ব্যক্তি গাজীপুরের কভিড-১৯ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ নিয়ে জেলায় এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চারজন মারা গেলেন।

টঙ্গী (গাজীপুর) : টঙ্গীতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুমাইয়া (২৮) আক্তার নামে এক কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল ভোররাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে তার মৃত্যু হয়। মৃত সুমাইয়া মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার বুড়িগার শামসুল হকের মেয়ে। তিনি টঙ্গীর ১৫৪ মধ্য আরিচপুর এলাকায় সিকদার ভিলায় পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতেন। সুমাইয়া তেজগাঁও কলেজের মাস্টার্সে পলিটিক্যাল সায়েন্স বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। এ নিয়ে টঙ্গীতে করোনায় দুইজনের মৃত্যু হলো।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ : জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও তিনজনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট ৫২ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হলো। আক্রান্তদের তিনজনের বাড়ি শিবগঞ্জ উপজেলায়।

কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ঢাকায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া আবদুল কুদ্দুসের (৬৭) দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার ভোর ৬টায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে উপজেলার ফিলিপনগর মন্ডলপাড়া কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়। অবসরপ্রাপ্ত কাস্টম কর্মকর্তা আবদুল কুদ্দুস করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার বেলা ১টায় ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

মাগুরা : মাগুরায় মালদ্বীপ-ফেরত এক যুবক  করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হলো ২১ জনের। এদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছে ১৯ জন। মালদ্বীপ-ফেরত যুবকের বাড়ি মাগুরা সদর উপজেলার চাউলিয়া ইউনিয়নের কুকিলা গ্রামে। এ নিয়ে মাগুরায় মোট করোনা শনাক্ত হলেন ২১ জন।

বোয়ালমারী (ফরিদপুর) : বোয়ালমারী উপজেলার রূপাপাত ইউনিয়নের সুর্যোগ গ্রামে লুৎফর রহমান (৫০) নামে এক ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়ে গতকাল দুপুরে নিজ বাড়িতে মারা যান। এর আগে উপজেলার চতুল ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মিলু মিয়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মৃত লুৎফর রহমান ঢাকায় চাকরি করতেন। ঈদের দিন রাতে তিনি বাড়িতে আসেন। বাড়ি আসার আগে তিনি ঢাকায় নমুনা পরীক্ষা করতে দিয়েছিলেন তিনি। গতকাল তার মৃত্যুর পর করোনা আক্রান্তের পজিটিভ রিপোর্ট আসে। তার পরিবারের আরও চারজনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

চাঁদপুর : জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে ফারুক সরকার (৩৮) নামে একজন মারা গেছেন। মঙ্গলবার দুপুরে মতলব উত্তর উপজেলার বাগানবাড়ী ইউনিয়নের বরুরকান্দি গ্রামের নিজ বাড়িতে মারা যান তিনি। তিনি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগে চাকরি করতেন। এ নিয়ে জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন ১৩ জন। জেলায় বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৪৭ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ১৩ জন, সুস্থ হয়েছেন ২৩ জন, চিকিৎসাধীন ১১১ জন।

কুমিল্লা : জেলার হোমনা উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা নাজমুন নাহার করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় মারা গেছেন। তিনি গতকাল ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপ্তি চাকমা তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ছুটিতে থাকাবস্থায় ঢাকায় তার করোনা আক্রান্ত ভাইকে দেখতে গিয়েই তিনি করোনায় আক্রান্ত হন। তার স্বামী, এক ছেলে ও এক মেয়েও করোনায় আক্রান্ত।

নোয়াখালী : জেলায় নতুন করে এক দিনে ২৯ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪৫৬ জন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে জেলায় মোট মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। জেলায় এ পর্যন্ত ১০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

ভোলা : ভোলায় এক স্বাস্থ্যকর্মীসহ নতুন ১৯ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট ৪২ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হলো। এর মধ্যে লালমোহন উপজেলায় আলমগীর (৫০) নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে লালমোহন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৩ মে মারা যান। তার নমুনা পরীক্ষার পর রিপোর্ট পজেটিভ আসে। মৃত ওই ব্যক্তির সংস্পর্শে আসায় লালমোহন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিন চিকিৎসকসহ বেশ কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মীকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে।

ফেনী : জেলায় এক উপজেলা চেয়ারম্যানসহ নতুন করে আরও আটজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে ফেনীতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮৯ জনে দাঁড়াল। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৫০ জন। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে দাগনভূঞা উপজেলার চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সভাপতি দিদারুল কবির রতন, দাগনভূঞা সদর ইউনিয়নের জগৎপুরের দুজন ও ইয়াকুবপুর ইউনিয়নের বিজয়পুরের দুজন রয়েছে। একজন সোনাগাজীর চরমজলিশপুর ইউনিয়নের চান্দালা গ্রামের বাসিন্দা। বাকি দুজন ফেনী সদর উপজেলার।

লাকসাম (কুমিল্লা) : লাকসামে দুই পরিবারের মা-মেয়েসহ নতুন ছয়জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা অর্ধশতকের ঘরে পৌঁছাল। গতকাল পৌরশহরের পশ্চিমগাঁও এলাকার মা ও তার দুই মেয়ের করোনা পজিটিভের রিপোর্ট আসে। এ নিয়ে ওই পরিবারে চারজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

সর্বশেষ খবর