বুধবার, ১ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

সংকট উত্তরণের বাজেট পাস

৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

মহামারী করোনাভাইরাসের সংকট মোকাবিলায় মানুষের জীবন ও জীবিকাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জাতীয় বাজেট ২০২০-২১ সংসদে গতকাল পাস করা হয়েছে। এ বাজেটের আকার ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। আশা করা হচ্ছে এ বাজেটের সুফল পাবে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিতে ফিরে আসবে নতুন গতি। এ জন্য অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে এবারের বাজেটে অপ্রয়োজনীয় বা বিলাসী ব্যয়ে কৃচ্ছ্র সাধন করে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধিসহ চারটি কৌশলও নেওয়া হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী বলছেন, এ বাজেট মানুষের কল্যাণের কাজে আসবে এবং এটি বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট। আজ ১ জুলাই থেকে নতুন এ বাজেট কার্যকর হবে। গতকাল জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন বসে। বেলা দেড়টায় অর্থমন্ত্রী নির্দিষ্টকরণ বিল উত্থাপন করলে তা পাসের জন্য ভোটে দেন স্পিকার। এ সময় তা কণ্ঠভোটে পাস করা হয়। এর মধ্য দিয়ে পাস হলো ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেট। এরপর সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে অভিবাদন জানান।

করোনাভাইরাস মহামারী সতর্কতায় এবারের বাজেট অধিবেসন সীমিত করা হয়েছিল। নিয়মিত ৫০ থেকে ৬০ জন সংসদ সদস্য অধিবেশনে অংশ নেন, যা বাজেট অধিবেশনের নজিরবিহীন কমসংখ্যক উপস্থিতি। এবারের মূল বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা হয়েছে মাত্র দুই দিন। এতে দুই দিনে মোট পাঁচ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট ১৫ সেকেন্ড আলোচনা হয়েছে সাধারণ বাজেটের ওপর। এ ছাড়া সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনা হয়েছে এক দিন, যা সেদিনই পাস করা হয়। ১০ জুন অধিবেশন শুরু হলেও ৩০ জুন পর্যন্ত মাত্র সাত কার্যদিবস সংসদ চলে। সাত দিনে মোট আলোচনা হয়েছে সাড়ে ১৫ ঘণ্টার মতো। এর মধ্যে ১৫ জুন সম্পূরক বাজেট পাস হয়। আর ২৯ জুন পাস করা হয় অর্থবিল-২০২০। এরপর সংসদের বৈঠক আগামী ৮ জুলাই পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করা হয়। ওই দিন সংসদ চলার পর অষ্টম অধিবেশন তথা বাজেট অধিবেশনের সমাপ্তি ঘটতে পারে। এবারের বাজেটের মূল শিরোনাম ছিল ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথপরিক্রমা’। অর্থমন্ত্রী গতকাল ২৯ জুন অর্থবিল পাস করার সময় বলেছেন, ‘এবারও বাজেট বাস্তবায়ন করবই ইনশা আল্লাহ। বাজেট বাস্তবায়নে দেশের সব জনগণকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এর আগে ১১ জুন সংসদে বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে এবার বাজেট অধিবেশন ছিল অন্য যে কোনো সময়ের সময়ের চেয়ে ভিন্ন। সাধারণত রেওয়াজ অনুযায়ী, অর্থমন্ত্রী বাজেট পেশের পর পুরো মাস ও অধিবেশনজুড়ে বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা করেন সংসদ সদস্যরা। এতে বাজেটের ওপর অন্তত ৪০ ঘণ্টা আলোচনার রেকর্ড রয়েছে। কিন্তু এবারই সবচেয়ে কম সময় জুড়ে আলোচনা করে বাজেট পাস করা হলো।

নির্দিষ্টকরণ বিল : আগামী অর্থবছরের বাজেট ব্যয়ের বাইরে সরকারের বিভিন্ন ধরনের সংযুক্ত দায় মিলিয়ে মোট ৭ লাখ ৫৯ হাজার ৬৪২ কোটি ৪৪ লাখ ২১ হাজার টাকার নির্দিষ্টকরণ বিল গতকাল জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে পাস হয়েছে। এর মধ্যে সংসদ সদস্যদের ভোটে গৃহীত অর্থের পরিমাণ ৫ লাখ ২৩ হাজার ৪৪৪ কোটি ২৪ লাখ ৭ হাজার টাকা এবং সংযুক্ত তহবিলের ওপর দায় ২ লাখ ৩৬ হাজার ১৯৮ কোটি ২০ লাখ ১৪ হাজার টাকা।

সংযুক্ত তহবিলের দায়ের মধ্যে ট্রেজারি বিলের দায় পরিশোধ, হাই কোর্টের বিচারপতি ও মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের বেতনও এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

মঞ্জুরি দাবি ও ছাঁটাই প্রস্তাব : আজ থেকে শুরু হওয়া নতুন অর্থবছরের বাজেটের ওপর সংসদে উত্থাপিত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ খাতের ৫৯টি মঞ্জুরি দাবির বিপরীতে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবং বিএনপির সংসদ সদস্যরা ৪২২টি বিভিন্ন ধরনের ছাঁটাই প্রস্তাব আনেন। এর মধ্যে আইন মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের দাবি ও ছাঁটাই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। বিরোধী দলের আলোচনার পর সব প্রস্তাব কণ্ঠভোটে বাতিল হয়ে যায়। এটা অবশ্য গৃহীত হওয়ার নজির নেই।

জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, মুজিবুল হক চুন্নু, ফখরুল ইমাম, পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, লিয়াকত হোসেন খোকা, রওশন আরা মান্নান, বিএনপির হারুনুর রশীদ এবং রুমিন ফারহানা ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো উত্থাপন করেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীদের অনুপস্থিতিতে তাদের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন সংক্রান্ত মঞ্জুরি দাবি সংসদে তোলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে সেগুলো পাস করা হয়।

এক নজরে নতুন বাজেট : এবারের বাজেটের মোট আকার ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। আর ঘাটতি ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। বিদায়ী অর্থবছরের ৮ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হলেও কভিড-১৯ দুর্যোগের মধ্যে তা সংশোধন করে ৫ দশমিক ২ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। নতুন বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারলে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪ শতাংশের মধ্যে আটকে রেখেই ৮ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর