বৃহস্পতিবার, ৬ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

দেশে ফেরেননি রনি, এসেছে মৃত্যুর খবর

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

দেশে ফেরেননি রনি, এসেছে মৃত্যুর খবর

টানা ছয় বছর পর গত মার্চ মাসে দেশে ফেরার কথা ছিল লেবাননে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত বাংলাদেশি তরুণ মেহেদী হাসান রনির (২৫)। এ জন্য সব কেনাকাটাও করেছিলেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। কাজ বন্ধ থাকায় বাড়িতেও টাকা পাঠাতে পারছিলেন না। এবারের ঈদে মাত্র ১ হাজার ৬০০ টাকা পাঠিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে হতাশাগ্রস্ত ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাছিহাতা ইউনিয়নের ভাদেশ্বর গ্রামের তাজুল ইসলামের ছেলে রনি। গতকাল সকালে সেই রনিরই মৃত্যুর খবর আসে তার পরিবারের কাছে। মঙ্গলবার লেবাননের বৈরুতে জোড়া বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত হয়েছেন তিনি। একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন বাবা তাজুল ইসলাম। আর মা ইনারা বেগম ছেলের মৃত্যুর সংবাদ পেয়েই বাকরুদ্ধ। রনির পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় রনি গ্রামের স্কুলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। অর্থ সংকটে পড়াশোনা বেশিদূর এগোয়নি। বাহরাইন প্রবাসী বাবা তাজুল ইসলাম সুবিধা করতে পারেননি। পরিবারের কথা ভেবে রনি বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সুদে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে ২০১৪ সালের ৯ মার্চ লেবাননে পাড়ি জমান রনি। লেবাবনের বৈরুতের বিপণি বিতানে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করতেন তিনি। মাসে ২০ হাজার টাকা পাঠাতে পারতেন বাড়িতে। কিন্তু এত অল্প টাকা দিয়ে ঋণ শোধ করতে পারছিলেন না। এখনো সুদের দুই লাখ টাকা বাকি আছে। লেবাননে আয়-রোজগার কম হওয়ায় অন্য কোনো দেশে পাড়ি জমাতে চেয়েছিলেন রনি। বাড়ির সবাইকে বলেছিলেন অনুমতি দেওয়ার জন্য। কিন্তু ঋণের টাকা শোধ না হওয়ায় বাড়ি থেকে অনুমতি মেলেনি। অভিমান করে পরিবারের কাউকে না জানিয়ে অন্য দেশে চলে যাওয়ার কথাও বলেছিলেন ছোট বোন জেসমিন আক্তার হ্যাপিকে। কিন্তু নিয়তি রনিকে নিয়ে গেছে দূর আকাশে, না ফেরার দেশে। গতকাল দুপুরে রনির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছেলের ছবি হাতে নির্বাক হয়ে বসে আছেন বাবা তাজুল ইসলাম। মা ইনারা বেগম বাকরুদ্ধ হয়ে বসা বাড়ির উঠানে।

লেবাননে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত মিজানের বাড়িতে মাতম : লেবাননে নিহত মিজানুর রহমান খানের মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার কাজীকান্দি গ্রামের বাড়িতে চলছে মাতম। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম বড় সন্তানকে হারিয়ে পুরো পরিবারসহ গ্রামের মানুষ নিস্তব্ধ। জানা গেছে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে লেবাননের বৈরুত যান জাহাঙ্গীর খানের ছেলে মিজানুর রহমান খান। সেখানে একটি হোটেলে চাকরি করতেন। মঙ্গলবারের ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত হন তিনি। বাড়িতে এ খবর এলে পুরো পরিবারসহ গ্রামের মানুষ শোকে নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে। ঢাকার একটি কারখানায় মিজানের মা চাকরি করে কিছু টাকা জমান। এ ছাড়া আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধার করে এবং ২ লাখ টাকা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ৬ লাখ টাকায় মিজান লেবাননে যান। তারা তিন ভাই, এক বোন। তার স্ত্রী ও তিন বছরের কন্যাসন্তান রয়েছে। ঢাকায় কারখানায় কাজ করা অবস্থায় মিজানের মায়ের দুই হাতের ছয়টি আগুল পুড়ে যায়। তিনি এখন অসুস্থ অবস্থায় বাড়িতেই থাকছেন। বাবা কৃষিকাজ করে কোনোমতে পরিবার নিয়ে বেঁচে আছেন। বাকরুদ্ধ কণ্ঠে মিজানের বাবা জাহাঙ্গীর খান বলেন, ‘মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে আমার সঙ্গে শেষ কথা হয়েছে। আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি আমাদের মিজান বোমা বিস্ফোরণে মারা গেছে। আমি আমার সন্তানের লাশ দ্রুত দেশে ফেরত চাই।’ কালকিনি উপজেলার শিকারমঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম মৃধা বলেন, ‘লাশ দ্রুত দেশে আনার জন্যে আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করব।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর