বৃহস্পতিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেবেন দুই প্রধানমন্ত্রী

স্বাধীনতার স্বীকৃতির দিনে ভুটানের সঙ্গে অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

স্বাধীনতার স্বীকৃতির ৫০তম বছরে   ভুটানের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ, যে চুক্তিটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আসছে ৬ ডিসেম্বর দুই দেশের মধ্যে এই চুক্তিটি স্বাক্ষর হবে। একই দিন দুই দেশের সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি হতে যাচ্ছে। সেই দিনটিকেও উদযাপন করতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ডা. লোটে শেরিং ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশ নেবেন। বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন,  ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথম বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল ভুটান। সে কারণে দুই দেশের মধ্যে পিটিএ চুক্তির জন্য এই স্মরণীয় দিনটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া একই দিন বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি হতে যাচ্ছে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর কেক কেটে সৌহার্দ্যরে ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করা হবে। জানা গেছে, বর্তমানে সাফটার আওতায় ভুটানকে ১৮টি পণ্যে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দেয় বাংলাদেশ, বিপরীতে ভুটান দেয় ৯২টি পণ্যে। নতুন চুক্তি কার্যকর হলে বাংলাদেশ ভুটানকে নতুন ১৬টি পণ্যসহ মোট ৩৪টি পণ্যে শুল্ক সুবিধা দেবে। বিপরীতে ভুটানে পাওয়া যাবে ১০২টি পণ্যে শুল্ক সুবিধা। দুই দেশ নিজেদের মধ্যে পণ্য তালিকা হস্তান্তর করেছে। দ্বিপক্ষীয় এই বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের একটি প্রস্তাব এর আগে গত সেপ্টেম্বরে মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া হয়।

কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ মূলত ভুটান থেকে বোল্ডার পাথর আমদানি করে থাকে। এই চুক্তির ফলে পণ্যটি শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা গেলে দেশের নির্মাণ শিল্পের ব্যয় কমে যাবে। খরচ কমবে দেশের অবকাঠামো উন্নয়নেও।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ-ভুটানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ২০১২-১৩ অর্থবছরে ছিল ২৬.৫২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা  বেড়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫৭.৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। প্রথমদিকে বাণিজ্যের ভারসাম্য বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকে থাকলেও এখন ভুটানের পক্ষে রয়েছে। কারণ পদ্মা সেতুসহ দেশের বড় বড় প্রকল্পে ভুটান থেকে বোল্ডার পাথর আমদানি করায় দেশটি থেকে আমদানি ব্যয় বেড়েছে। ফলে ভুটানের সঙ্গে পিটিএ চুক্তি করা বাংলাদেশের জন্য লাভজনক হবে বলে মনে করছে সরকার।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, পিটিএ চুক্তির ফলে বাংলাদেশ প্রায় ৩০টি তৈরি পোশাক শিল্প পণ্যের ওপর সুবিধা পাবে। এ ছাড়া পাট ও পাটজাতীয় পণ্য, চামড়া পণ্য ও জুতা, ফ্যান, ড্রাইসেল ব্যাটারি, ঘড়ি, আলু, কনডেন্সড মিল্ক, সিমেন্ট, টুথব্রাশসহ অন্যান্য পণ্যেও শুল্ক সুবিধা পাওয়া যাবে। অন্যদিকে বাংলাদেশে শুল্ক সুবিধার জন্য ভুটানের তালিকায় কমলা, আপেল, আদা, ফলের জুস, পাথর, কাঠ, (বোল্ডার) চুনাপাথরসহ অন্যান্য পণ্য রয়েছে। চুক্তিটি সম্পন্ন হলে পরে আলোচনার মাধ্যমে উভয় দেশ শুল্ক সুবিধার জন্য পণ্যের সংখ্যা বাড়াতে পারবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশ একাধিক আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তির সদস্য হলেও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে এসে দেখা যাচ্ছে, এখনো  কোনো দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় মুক্তবাণিজ্য চুক্তি বা অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি হয়নি। ইরানের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি শুল্ক সুবিধা বিনিময় সংক্রান্ত চুক্তি থাকলেও প্রয়োজনীয় প্রটোকল চূড়ান্ত না হওয়ায় সেটি কার্যকর হয়নি। এ ছাড়া বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ৪৩টি  দেশের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের চুক্তি করেছে যেগুলোর কোনোটাই পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য চুক্তি নয়। এসব চুক্তির মাধ্যমে শুল্ক সুবিধাও পাওয়া যায় না। এ অবস্থায় স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতিদানকারী দেশ ভুটানকে প্রথম অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তির (পিটিএ) জন্য বেছে নিয়েছে সরকার।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর