মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

সরকারের একদলীয় মনোভাবেই দেশে এখন রাজনৈতিক শূন্যতা

মাহমুদ আজহার

সরকারের একদলীয় মনোভাবেই দেশে এখন রাজনৈতিক শূন্যতা

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশে এখন কোনো রাজনীতি নেই বললেই চলে। করোনাভাইরাসের কারণে নয়, একদলীয় সরকারের কারণেই এমন রাজনৈতিক শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। যে কোনো দেশে যখন একনায়কতন্ত্র ও স্বৈরাচারী শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় তখন সেখানে রাজনীতি থাকে না। তখন একজন ব্যক্তির ওপরই সবকিছু নির্ভর করে। বাংলাদেশেও তাই হচ্ছে। দেশ পরিচালনা, সমাজব্যবস্থা, অর্থনীতি সবই এখন ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে।

গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে টেলিফোন সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। আলাপচারিতায় সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, এখন বিজয়ের মাস। গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা বিজয়ী হয়েছি। আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন, বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন। সেই মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ছিল গণতন্ত্র, কিন্তু সে গণতন্ত্র আজ অনুপস্থিত। দেশে এখন বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতা নেই। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই। গণমাধ্যম সরকারের বিরুদ্ধে কিছু লিখলেই ডিজিটাল আইনে মামলা দিয়ে নির্যাতন করে। কারও কথা বলার অধিকার নেই। মানুষের ভোটাধিকার নেই। অর্থনীতিও ভঙ্গুরপ্রায়। একটা গোষ্ঠী অর্থনীতি লুট করে নিয়ে যাচ্ছে।

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশে আজ সামাজিক মূল্যবোধও শেষ হয়ে যাচ্ছে। করোনাভাইরাসের এই সময়ে ব্যাপক খুন, ধর্ষণসহ নারী নির্যাতন হয়েছে। এর অর্থ হলো দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন নেই। প্রভাব-প্রতিপত্তি বা পেশিশক্তি দিয়ে সব অনিয়মে নেমেছে সরকারি দলের লোকজন। সমাজের সর্বত্রই পচন ধরেছে। এ পরিস্থিতিতে দেশকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। দেশের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। গণতন্ত্রের সরল সংজ্ঞা এ দেশের সরকার হবে জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য এবং জনগণের মধ্য থেকে। সে মূলনীতিতে দেশ এখন নেই। তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি লুটেরাদের হাত থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। সামাজিক মূল্যবোধ পুনরায় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বিজয়ের মাসে সবার প্রত্যাশা- এ সরকার গায়ের জোরে চেপে বসেছে, তার অবসান হবে। যত তাড়াতাড়ি সরকার এ বাস্তবতা বুঝে পদত্যাগ করে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে ভোটের ব্যবস্থা করবে, তত দ্রুতই একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এ দেশে মানুষ তাদের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। তা না হলে দেশ যেভাবে সংঘাতের দিকে চলছে তা দেশ, গণতন্ত্র ও অর্থনীতির জন্য সুখকর নয়।

বিএনপির এই নেতা বলেন, সম্প্রতি আবার ব্যক্তিপূজা করার জন্য যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে এতেও দেশে এক ধরনের অস্থিরতা ও অরাজকতার সৃষ্টি হয়েছে। এটাও সরকার ইচ্ছাকৃতভাবেই করছে। সরকারের সব ক্ষেত্রে ব্যর্থতায় জনগণ তাদের আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না, তাদের পতন চায়। এ মূল বিষয়টি থেকে জনগণের দৃষ্টি অন্য দিকে ফিরিয়ে নিতেই নানা ইস্যু সৃষ্টি করছে সরকার। কোনো নন-ইস্যুকে ইস্যু করে বেশিদিন কোনো স্বৈরাচার টেকেনি, এ সরকারও টিকবে না। এ দেশের মানুষের অভ্যুত্থানে সরকারকে সরে যেতে হবে। তাদের হুঁশ হলে পদত্যাগ করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ নতুন সরকারের অধীনে যদি ভোটের ব্যবস্থা করে তাহলে হয়তো শান্তিপূর্ণ সমাধান হবে। তা না হলে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারকে সরতে হবে। আইয়ুব, এরশাদসহ দেশে-বিদেশে কেউ এভাবে বেশিদিন টিকে থাকতে পারেনি। এ সরকারও পারবে না। তাদের পরিণতি খারাপ হয়েছে। দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে সরকার সে পথেই হাঁটবে। এতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন হবে। সাবেক এই স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে এখন শুধু করোনাভাইরাসের জন্য নয়, আওয়ামী লীগ সরকার ভোটবিহীন ক্ষমতায় আসার পর থেকে সব সেক্টরে অযাচিতভাবে প্রভাব বিস্তার করে গণতান্ত্রিক ধারা ক্ষুণ্ণ করেছে। প্রায় এক যুগ ধরে মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তাদের বাধ্যগত প্রশাসন ও নিজেদের লোকজন দিয়ে আগের রাতেই ভোটাধিকার হরণ করে নেওয়া হয়। এটা পৃথিবীতে নজিরবিহীন। সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি দাবি করে ড. মোশাররফ বলেন, তারা জনগণের সরকার নয়। তাই জনগণের কাছে তারা দায়বদ্ধও নয়। জনগণেরও তাদের ওপর কোনো আস্থা নেই। সরকার রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে। করোনাভাইরাসের এই সময়ে তা নগ্নভাবে প্রকাশিত হয়েছে। করোনার সময় সব দুর্নীতি প্রকাশ পেয়েছে। এই সময়ে যেখানে মানুষের বাঁচা-মরার প্রশ্ন সেখানে করোনা টেস্ট নিয়ে আওয়ামী লীগের লোকজন জালিয়াতি করেছে। এ কারণে শুধু বাংলাদেশেই নয়, আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়েছে। আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে। সারা বিশ্ব যখন করোনা নিয়ে বিপর্যস্ত তখন বাংলাদেশে এমন অমানবিকতা থাকতে পারে, তা ভাবতেও অবাক লাগে।

তিনি আরও বলেন, সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের এক জেলার নেতা ২ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে। স্থাস্থ্য বিভাগের ড্রাইভারের অঢেল সম্পদ পাওয়া যায়। সেখানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কী অবস্থা? গত ১০ বছরে সুইস ব্যাংকে যে পরিমাণ টাকা পাচার করেছে তা সরকার ফিরিয়ে আনতে পারছে না। কারণ এটা আওয়ামী লীগ সমর্থকরা বলছে। দলীয়করণ করে বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। এটা সর্বশেষ আশা-ভরসার স্থল হলেও মানুষ কোনো ভরসা পায় না। এখানে সত্যের জয় হওয়ার কথা, কিন্তু এখানে সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়। একজন প্রধান বিচারপতিকে কীভাবে জোর করে পদত্যাগ করিয়ে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে, সবাই জানে।

সর্বশেষ খবর