বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

পাপুলের মামলায় উঠে আসবে আরও নাম : সিআইডি

৬১৩ ব্যাংক হিসাব জব্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক

এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের বিরুদ্ধে করা মানি লন্ডারিং মামলায় তার শ্যালিকা ও মেয়েসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হলেও আরও কয়েকজনের নাম উঠে আসবে। প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ শেষে মামলায় তাদের নাম যুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি সদর দফতরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি (ঢাকা মেট্রো) মো. ওমর ফারুক, ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মোস্তফা কামাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সিআইডি প্রধান বলেন, মূলত পাপুলের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় করা মানব পাচার মামলার তদন্ত করতে গিয়ে মানি লন্ডারিংয়ের তথ্য উঠে আসে। এ অভিযোগে গত মঙ্গলবার পল্টন থানায় পাপুল, তার শ্যালিকা ও মেয়েসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এ মামলার তদন্তে আরও কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে বলে আমরা আশা করছি। পাপুলের স্ত্রী সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলামের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তদন্তাধীন থাকায় এখনই কোনো কিছু স্পষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। তবে তদন্তে যারই নাম উঠে আসুক তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। ব্যারিস্টার মাহবুব বলেন, প্রাথমিকভাবে পাপুল চক্রের ৫১৬টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও এফডিআর চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো ১৩টি ব্যাংকের। যেখানে ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত সাড়ে ৩০০ কোটি টাকারও বেশি লেনদেন করা হয়েছে। বর্তমানে অ্যাকাউন্টগুলোতে ৩৮ কোটি টাকা জমা আছে। অন্যান্য টাকা কী কাজে ব্যবহার করা হয়েছে তা জানার চেষ্টা চলছে।

পাশাপাশি পাপুলের বেশ কিছু প্রপার্টির খোঁজ পাওয়া গেছে। এগুলো জব্দ করার জন্য আদালতে আবেদন জানানো হয়েছে। আদালত নির্দেশ দিলে জব্দ করা হবে। জালিয়াতির মাধ্যমে ৪টি প্রতিষ্ঠান থেকে ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠা প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান করা হচ্ছে। মানব পাচার চক্রের সদস্যদের যতই গ্রেফতার করা হোক না কেন তাতে কোনো লাভ নেই। চক্রের মূল হোতাদের গ্রেফতার করতে না পারলে কোনোভাবেই এটি বন্ধ হবে না। এজন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

এমপি পাপুলসহ চারজনের ৬১৩ ব্যাংক হিসাব জব্দ : লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলসহ চারজনের ৬১৩টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করতে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আদালতের অনুমতি নিয়ে গতকাল দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা (উপ-পরিচালক) মো. সালাহউদ্দিন স্বাক্ষরিত চিঠি বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পাপুল, তার স্ত্রী এমপি সেলিনা ইসলাম, শ্যালিকা জেসমিন প্রধান ও মেয়ে ওয়াফা ইসলামের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করতে ৮ ব্যাংকের এমডিকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। এর আগে গত ১১ নভেম্বর এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৩১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ ও ১৪৮ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ করা হয়েছে।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানের আড়ালে জেসমিন প্রধানের ৫টি হিসাবের মাধ্যমে ২০১২ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত লন্ডারিং হয় ১৪৮ কোটি টাকা। অথচ মাত্র ২৩ বছর বয়সী জেসমিনের নিজের কোনো আয়ের উৎস নেই। অন্যদিকে এফডিআর হিসাবের ২ কোটি ৩১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৮ টাকার কোনো উৎস পাপুলের শ্যালিকা জেসমিন দাখিল করতে পারেননি। চলতি বছরের ৬ জুন রাতে কুয়েতের মুশরেফ আবাসিক এলাকা থেকে এমপি পাপুলকে গ্রেফতার করে দেশটির অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। পাচারের শিকার পাঁচ বাংলাদেশির অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে মানব পাচার, অর্থ পাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ এনেছে কুয়েতি প্রসিকিউশন। পাপুলের স্ত্রী, মেয়ে ও শ্যালিকার দেশত্যাগে ইতিমধ্যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দুদক।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর