প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে অঞ্চলভিত্তিক কৃষি সম্ভাবনা ধরে গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেছেন, গবেষণা ছাড়া কোনো উপায় নেই। গবেষণাকে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে গতকাল সকালে কৃষিক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধি অর্জনে প্রকাশিত ‘১০০ কৃষি প্রযুক্তি এটলাস’ এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে কৃষি মন্ত্রণালয় আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হন। খবর বাসস ও বিডিনিউজ।
দেশের কৃষিবিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত ধান, পাট, ইক্ষু, চা, রেশম, তুলা, বনজ সম্পদ এবং মৎস্য সম্পদের থেকে নির্বাচিত ১০০টি প্রযুক্তি এটলাসে যুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে প্রযুক্তিগুলোর প্রয়োগে বেশ কিছু সাফল্যের গল্প, যা হতে পারে কৃষি উন্নয়নে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। দেশ-বিদেশের পাঠকের সুবিধার্থে এই এটলাসে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজিও রাখা হয়েছে। বিএআরসি (বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল) প্রকাশিত এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের উদ্ভাবিত এই ‘১০০ কৃষি প্রযুক্তি এটলাস’ আধুনিক কৃষি উন্নয়ন ও কৃষকদের জীবন মানোন্নয়নে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গবেষণা বাড়ানো গেলে কৃষিপণ্যের মানোন্নয়ন এবং বাজারজাত করা সহজ হবে। সরকার বীজ সংরক্ষণে নরওয়ের সঙ্গে কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা গবেষণাকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিই এবং মনে করি, গবেষণাকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। ‘আমার মাটি এত উর্বর যে এখানে একটা বীজ ফেললেই একটা গাছ হয়, ফল হয়। তবে, আমার দেশের মানুষ খাবারে কষ্ট পাবে কেন’- জাতির পিতার বক্তব্যের এই উদ্ধৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে জন্য তিনি সব পদক্ষেপ নিতেন। আর এজন্য গবেষণাটা একান্তভাবে প্রয়োজন। শেখ হাসিনা কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এবং বিজ্ঞানীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের দেশের কৃষিপণ্য যাতে মানসম্পন্ন করা যায় তার জন্য আরও পরীক্ষাগার তৈরি করা দরকার। সেই সঙ্গে অঞ্চলভিত্তিক পরীক্ষাগারও নির্মাণ প্রয়োজন। মাটির উর্বরতা এবং পরিবেশ বিবেচনা করে যে ফসল যেখানে ভালো উৎপন্ন হয় সেখানেই তার চাষাবাদ করতে হবে। তিনি বলেন, অল্প খরচে অধিকমাত্রায় ফসল উৎপাদন কীভাবে করতে পারি সেটা বিবেচনায় এনে মাটির উর্বরতা এবং পরিবেশ বিবেচনা করে সমগ্র বাংলাদেশের এলাকাভিত্তিক একটি ‘জোন ম্যাপ’ তৈরি করা দরকার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পণ্য উৎপাদনের মূলে থাকতে হবে দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ানো এবং দেশ-বিদেশে বাজার সৃষ্টি ও রপ্তানি। তিনি বলেন, কৃষিভিত্তিক শিল্প আমরা গড়ে তুলতে চাই এবং সেটাই আমরা করব। এ বিষয়েও আমাদের গবেষকদের আমি সহযোগিতা চাই। তিনি গবেষকদের চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এক দিনে গবেষণা শেষ হয়ে যায় না। দীর্ঘদিন গবেষণা করতে হয়। তবে চাকরির একটা বয়স নির্দিষ্ট করা রয়েছে, যার পরে আর চাকরি করা যায় না। কিন্তু গবেষণায় সম্পৃক্ত সরকারি চাকুরেদের জন্য আমি একটা কথাই বারবার বলেছি, এই গবেষকদের কীভাবে আমরা প্রণোদনা দিতে পারি যাতে গবেষণার ফসল তারা হাতে পাওয়া পর্যন্ত থাকতে পারেন। তিনি বলেন, এর জন্য তাঁর সরকার একবার উদ্যোগ নিলেও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই এই সুযোগটা নিতে চাওয়ায় সেটা আর সম্ভব হয়নি। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, অফিসের পিয়ন, আর্দালি, দারোয়ান থেকে শুরু করে কেউ আর বাদ যান না। এটাতো হয় না। এটাই আমাদের দেশে সমস্যা। শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বয়সসীমা বৃদ্ধি করায় সেখানে আর সমস্যা হচ্ছে না। কাজেই আমরা ইনস্টিটিউটগুলোতে কীভাবে এই প্রণোদনাটা দিতে পারি সেই পরামর্শটা আপনাদের কাছ থেকে চাচ্ছি। কারণ, আমাদের কৃষি গবেষকদের আমরা আরও সুযোগ দিতে চাচ্ছি। তিনি বলেন, আমাদের যারা গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন, তাদের সমস্যাবলি নিয়ে আলোচনার জন্য তাদের সঙ্গে একটি সরকারি মতবিনিময়ের ইচ্ছা আমার রয়েছে। ভবিষ্যতে সেই ধরনের একটা সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে আমি জানতে পারি আপনারা আরও কীভাবে গবেষণা চালিয়ে যেতে পারেন। শেখ হাসিনা বলেন, বন্যা, খরা, শিলাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়, উজানের ঢল, পাহাড়ি ঢল ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবং বিশেষ বিশেষ ফসল চাষাবাদে উদ্বুদ্ধকরণে ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৪০২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশীয় ফলগুলো বিদেশি বিভিন্ন ফলের চেয়ে বেশি সুস্বাদু হওয়ায় এগুলোর উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে আরও গবেষণা দরকার। তবে এসব ফলের বিভিন্ন প্রজাতি উদ্ভাবনে অরিজিনালিটি যেন নষ্ট না হয় সেটাও দেখতে হবে। বঙ্গবন্ধুর শুরু করে যাওয়া কৃষি বিপ্লবের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি কৃষকদের ২৫ (পঁচিশ) বিঘা পর্যন্ত খাজনা মওকুফ, ১০ লক্ষাধিক কৃষকের সার্টিফিকেট মামলা প্রত্যাহার এবং ভূমিহীন কৃষকদের মাঝে খাসজমি বিতরণসহ নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণির মর্যাদা প্রদান করে প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় উন্নয়ন বাজেটের ৫০০ কোটি টাকার মধ্যে ১০১ কোটি টাকা কৃষি উন্নয়নে বরাদ্দ প্রদান করে স্বনির্ভরতা অর্জনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন জাতির পিতা। সেই পথ অনুসরণ করেই তাঁর সরকার দেশে প্রথমবারের মতো ‘কৃষি সম্প্রসারণ নীতি ১৯৯৬’ ও ‘কৃষি নীতি ১৯৯৯’, ‘জৈব কৃষি নীতি ২০১৬’, ‘জাতীয় কৃষি নীতি ২০১৮’ এবং ‘জাতীয় কৃষি সম্প্রসারণ নীতি ২০২০’ প্রণয়ন করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারের মূল্য হ্রাসসহ কৃষকের উৎপাদন খরচ নিম্ন পর্যায়ে রাখতে ২০০৯ থেকে ২০২০ পর্যন্ত সার, বিদ্যুৎ ও ইক্ষু খাতে কৃষকদের মোট ৭৫ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা উন্নয়ন সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। এ ছাড়া কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মেজবাউল ইসলাম, বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, সফল কৃষক মো. রফিকুল ইসলাম অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
 
                         
                                     
                                                             
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        