রবিবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

শক্তিমান অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান চলে গেলেন

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

শক্তিমান অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান চলে গেলেন

অগণিত ভক্ত, অনুরাগী, শুভাকাক্সক্ষী, সহকর্মীকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে না-ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন পাঁচবারের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত,

একুশে পদকে ভূষিত বর্ষীয়ান অভিনয়শিল্পী এ টি এম শামসুজ্জামান। গতকাল সকাল ৯টার দিকে রাজধানীর সূত্রাপুরের দেবেন্দ্রনাথ লেনের নিজ বাসায় শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই কিংবদন্তি অভিনেতা। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। দীর্ঘদিন তিনি শ্বাসকষ্টসহ নানা বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। স্ত্রী রুনি জামান, দুই ছেলে, এক মেয়ে, অগণিত স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এ টি এম শামসুজ্জামান মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জোটের কার্যকরী সভাপতি ছিলেন। এই শক্তিমান অভিনয়শিল্পীর মৃত্যুর খবরে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নেমে আসে শোকের ছায়া। প্রিয়জনকে শেষবারের মতো দেখতে সূত্রাপুরের বাসায় ছুটে যান তাঁর সহকর্মী ও ভক্তরা। বর্ষীয়ান চলচ্চিত্রকার এ টি এম শামসুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গতকাল বাদ জোহর নারিন্দা পীর সাহেব বাড়ি মসজিদে প্রথম নামাজে জানাজা শেষে সূত্রাপূর কমিউনিটি সেন্টারে লাশ রাখা হয় সর্বস্তরের মানুষের শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। এ সময় বর্ষীয়ান এ অভিনয়শিল্পীকে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান চলচ্চিত্র, টেলিভিশন, সংগীত ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ব্যক্তিবর্গ। সূত্রাপুর মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা শেষে বাদ আসর জুরাইন কবরস্থানে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়। শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, এ টি এম শামসুজ্জামানের মৃত্যুতে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অপূরণীয় ক্ষতি হলো। বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশে তাঁর অবদান মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। পৃথক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জনপ্রিয় শিল্পী এ টি এম শামসুজ্জামান তাঁর অসাধারণ অভিনয়ের মধ্য দিয়ে দেশবাসীর হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।

অভিনয়শিল্পী এ টি এম শামসুজ্জামান হিসেবে সমধিক পরিচিত হলেও তাঁর পুরো নাম আবু তোরাব মোহাম্মদ শামসুজ্জামান। তিনি ছিলেন একাধারে অভিনেতা, পরিচালক, কাহিনিকার, চিত্রনাট্যকার ও সংলাপ রচয়িতা। সহকারী পরিচালক হিসেবে চলচ্চিত্রে ক্যারিয়ার শুরু করেন ১৯৬১ সালে পরিচালক উদয়ন চৌধুরীর ‘মানুষের ভগবান’ ও ‘বিষকন্যা’ ছবিতে। ১৯৬৫ সালে চলচ্চিত্রের জন্য চিত্রনাট্য লেখা শুরুর পর তিনি শতাধিক চিত্রনাট্য ও কাহিনি রচনা করেন। ওই বছরই নির্মাতা নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ‘এতটুকু আশা’ ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রাভিনেতা হিসেবে অভিষেক ঘটে।

১৯৭৬ সালে আমজাদ হোসেনের ‘নয়নমণি’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে আলোচনার পাদপ্রদীপে আসেন বর্ষীয়ান এ অভিনেতা। ৩ শতাধিক চলচ্চিত্রে ও কয়েক শ টিভি নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি।

১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর দৌলতপুরে নানাবাড়ি জন্মগ্রহণ করেন এ টি এম শামসুজ্জামান। গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের ভোলাকোটের বড়বাড়ী। তাঁর বাবা নূরুজ্জামান ছিলেন নামকরা উকিল এবং শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের সঙ্গে রাজনীতি করতেন। মা নুরুন্নেসা বেগম। পাঁচ ভাই, তিন বোনের মধ্যে এ টি এম শামসুজ্জামান সবার বড়। পড়াশোনা করেছেন ঢাকার পগোজ স্কুল, কলেজিয়েট স্কুল ও রাজশাহীর লোকনাথ হাইস্কুলে। ‘দায়ী কে’, ‘ম্যাডাম ফুলি’, ‘চুড়িওয়ালা’, ‘মন বসে না পড়ার টেবিলে’ ও ‘চোরাবালি’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন এ টি এম শামসুজ্জামান। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৫ সালে তিনি রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হন। ৪২তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন তিনি। এ টি এম শামসুজ্জামানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ১৪ দলের মুখপাত্র আমির হোসেন আমু, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, বন ও পরিবেশ মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান খান চৌধুরী, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাক শিরিন আখতার, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুস সবুর, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি, যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, কৃষক লীগ সভাপতি সমীর চন্দ, সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি, ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সারাহ বেগম কবরী, সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানা, অর্থ সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা শফিকুল বাহার মজুমদার টিপু, জোটের নেত্রী তারিন জাহান, শাহনুর, আওয়ামী লীগ নেতা বলরাম পোদ্দার প্রমুখ। এ ছাড়া শোক জানিয়েছেন চিত্রনায়ক ফারুক এমপি, চিত্রনায়িকা ববিতা, চম্পা, মৌসুমী, শাবনূর, চিত্রনায়ক ওমর সানী, বাপ্পারাজ, শাকিব খান, শাকিল খান, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হানিফ সংকেত প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর