নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাটে মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপে গোলাগুলির ঘটনার পর গতকাল সারা দিনই এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে। এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত যুবলীগ কর্মী সিএনজিচালক মো. আলাউদ্দিনের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল সন্ধ্যায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। নিহতের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। অন্যদিকে বিস্ফোরণ ঘটানো এবং পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ৯৮ জনের নাম উল্লেখসহ আরও অজ্ঞাতনামা ১৫০ জনকে আসামি করে বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে বসুরহাটে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের গোলাগুলিতে হতাহতের ঘটনার পর গতকাল ভোর ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছিল উপজেলা প্রশাসন। এ সময় বসুরহাট পৌর এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা, এমনকি একসঙ্গে চারজনের বেশি লোকের জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সকাল থেকে উপজেলা সদরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও র্যাব সদস্যকে টহল দিতে দেখা যায়। এ সময় বসুরহাট বাজারের অধিকাংশ দোকানপাট ছিল বন্ধ। সড়কে আগের মতো লোকজনের উপস্থিতি ছিল না। কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহিদুল হক রনি জানান, সংঘর্ষের পর মঙ্গলবার রাত থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে হাতবোমা, দেশীয় অস্ত্র, ইটপাটকেল, লাঠিসোটাসহ ২৮ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বিস্ফোরণ ঘটানো এবং পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ৯৮ জনের নাম উল্লেখসহ আরও অজ্ঞাতনামা ১৫০ জনকে আসামি করে বাদী হয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানায় মামলা করেছেন এসআই জাকির হোসেন। এর আগে মঙ্গলবার রাতে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা খিজির হায়াৎ খানের অনুসারীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও গোলাগুলি হয়। এ সময় যুবলীগ কর্মী মো. আলাউদ্দিন (৩২) নিহত হন। এ সময় ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হন অন্তত ৫০ জন।
নিহত আলাউদ্দিনের বাড়ি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরফকিরা ইউনিয়নের চরকালি গ্রামে। তার বাবার নাম মমিনুল হক (৭০)। মা মরিয়মের নেছা পাখি (৬৫)। পরিবারের ছয় ভাই এক বোনের মধ্যে আলাউদ্দিন ছিলেন মেজো। তিনি পেশায় ছিলেন সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক। আলাউদ্দিন চরফকিরা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। চরকালি গ্রামের আলাউদ্দিনের বাড়িতে চলছে সন্তানহারা মায়ের বুকফাটা আর্তনাদ। বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা মরিয়মের নেছা পাখি। আলাউদ্দিনের দুই বছরের প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে তিনি আহাজারি করছেন আর বুক চাপড়ে কাঁদছেন তিনি। বিলাপে সন্তানের খুনিদের বিচারের দাবি করছেন বারবার। বয়োবৃদ্ধ বাবা মমিনুল হকও সন্তানের অকালে চলে যাওয়া সহ্য করতে না পেরে বারবার অচেতন হচ্ছেন। সেই সঙ্গে স্বামীকে হারিয়ে স্ত্রী পারভীন আক্তার সুমিও কাঁদছেন অঝরে। প্রতিবন্ধী সন্তানকে নিয়ে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ চোখে ভাসছে তার। আলাউদ্দিনের ছোট বোন রুনি বেগম বলেন, ‘মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাড়ি থেকে বের হন আলাউদ্দিন। যাওয়ার সময় বলে গিয়েছিলেন, বাদল চেয়ারম্যানের (কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল) মিটিং আছে। সেখানে যাচ্ছি। মিটিং তো শেষ কিন্তু আমার ভাই তো ফিরল না!’ রুনি বলেন, এর আগে হরতালের সময় আমার ভাইয়ের সিএনজিটাও পুড়িয়ে দিয়েছিল মির্জা সাহেবের (পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা) লোকেরা। আর এখন ভাইকেও মেরে ফেলল!’