শনিবার, ২৭ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

বর্ণিল আয়োজনে সুবর্ণজয়ন্তী

প্যারেড গ্রাউন্ডে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান । বঙ্গবন্ধুকে দেওয়া গান্ধী পুরস্কার নিলেন শেখ রেহানা । উদ্বোধন বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল মিউজিয়াম

জুলকার নাইন

বর্ণিল আয়োজনে সুবর্ণজয়ন্তী

গতকাল রাজধানীর প্যারেড গ্রাউন্ডে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছ থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রদত্ত গান্ধী শান্তি পুরস্কার গ্রহণের পর বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা -পিআইডি

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর ১০ দিনের অনুষ্ঠানমালার শেষ দিন গতকাল ছিল বাংলাদেশের ৫০তম স্বাধীনতাবার্ষিকী। জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের এ আয়োজন ছিল অন্য যে কোনো বারের চেয়ে আলোকোজ্জ্বল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ভারত সরকারের দেওয়া গান্ধী পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার হাতে। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে অকৃত্রিম সহযোগিতা করা বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তুলে দেন এ পুরস্কার। বিকালের এ আয়োজন শেষে সন্ধ্যায় উদ্বোধন হয়েছে বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল মিউজিয়াম।

‘স্বাধীনতার ৫০ বছর ও অগ্রগতির সুবর্ণরেখা’ থিমের অনুষ্ঠান শুরু হয় গতকাল বিকালে। সাড়ে ৪টায় কোট পরে উপস্থিত হন নরেন্দ্র মোদি। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা তাঁকে স্বাগত জানান। ছায়ানটের জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান। পরে মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিধি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সম্মানিত অতিথি ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা, ১০ দিনের আয়োজনের প্রধান সমন্বয়ক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। তিলাওয়াত করা হয় পবিত্র কোরআন, পাঠ করা হয় পবিত্র গীতা, ত্রিপিটক ও বাইবেল। মুজিব চিরন্তন থিমের ওপর একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এক নান্দনিক পরিবেশনার মাধ্যমে বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীর লোগো উন্মোচনের পর সুবর্ণজয়ন্তীর থিম সং পরিবেশন করেন একদল শিল্পী। পরে বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর ওপর একটি বিশেষ পরিবেশনা উপস্থাপন করা হয় অনুষ্ঠানে। স্বাগত সম্ভাষণ জানিয়ে জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির পক্ষে প্রধান সমন্বয়ক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের এ আয়োজন আজ বিশে^ ছড়িয়ে গেছে। বিশে^র বিভিন্ন রাজা, রানী, রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন বার্তা তার প্রমাণ। পরে ভিডিওবার্তায় বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীতে একে একে শুভেচ্ছা জানান জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। পরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া গান্ধী শান্তি পুরস্কার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছ থেকে গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে চিরন্তন মুজিব সম্মাননা তুলে দেন শেখ রেহানা। টুঙ্গিপাড়ায় মাটি দিয়ে তৈরি এ স্মারকে বিশ্বশান্তির প্রতীক হিসেবে নয়টি পায়রা রয়েছে। পরে বক্তব্য দেন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, গেস্ট অব অনার নরেন্দ্র মোদি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুজিব চিরন্তন’ এ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে ১৭ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা শেষ হলো। আপনাদের সবাইকে জানাই আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা। আজ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। ৫০ বছর আগে এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি জান্তাদের হাতে বন্দী হওয়ার আগমুহূর্তে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনের এ শুভমুহূর্তে আসুন প্রতিজ্ঞা করি সব ভেদাভেদ ভুলে আমরা আমাদের জনগণের মঙ্গলের জন্য কাজ করব। দক্ষিণ এশিয়াকে উন্নত-সমৃদ্ধ অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করব। একটি স্থিতিশীল এবং রাজনৈতিক-অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দক্ষিণ এশিয়া গড়ে তুলতে হলে ভারতকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। আমরা যদি পরস্পরের সহযোগিতায় এগিয়ে আসি তাহলে আমাদের জনগণের উন্নয়ন অবশ্যম্ভাবী। ভাষণপর্ব শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাংলাদেশ ও ভারতের খ্যাতনামা সংগীতশিল্পীদের সুরঝঙ্কারে মোহিত হয় জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ড। ভারতের ধ্রুপদি সংগীতশিল্পী পন্ডিত অজয় চক্রবর্তীর নেতৃত্বে ‘মৈত্রী’ নামে বিশেষ রাগ পরিবেশিত হয়। অস্কারজয়ী সংগীতশিল্পী এ আর রহমানের সুরের ঝঙ্কারে মাতোয়ারা হয় প্যারেড গ্রাউন্ড। সন্ধ্যা থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হচ্ছেন পঞ্চম বিশ্বনেতা যিনি এ উদ্যাপনে যোগ দিলেন। উদ্বোধনী দিনে ১৭ মার্চ মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম মোহাম্মদ সোলিহ এবং তাঁর সহধর্মিণী ফাজনা আহমদ, শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে তৃতীয় দিন, নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যাদেবী ভান্ডারী ষষ্ঠ দিন এবং ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং অষ্টম দিনে আমন্ত্রিত সম্মানিত অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এ ছাড়া গত কয়েক দিনে বাংলাদেশের জনগণ এবং সরকারকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ভিডিওবার্তা পাঠিয়েছেন চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে স্যুগা, কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী চুং সেয় কিউন, ভ্যাটিকানের পোপ দ্বিতীয় ফ্রান্সিস, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেরগেই ভি ল্যাভরভ, ফ্রান্সের সিনেটর ম্যাডাম জাকুলিন ডেরোমেডি, ওআইসি মহাসচিব ড. ইউসেফ আল ওথাইমিন, ইউনেস্কোর মহাপরিচালক অড্রে আজুলে, ভারতীয় কংগ্রেসের সভাপতি সোনিয়া গান্ধীসহ আরও অনেকেই।                লিখিত অভিনন্দনবার্তা পাঠিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, অস্ট্রিয়া, কিউবা, চেক রিপাবলিক, এস্তোনিয়া, ইথিওপিয়া, মিসর, ইউরোপিয়ান কাউন্সিল, জর্জিয়া, উত্তর কোরিয়া, পোল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, সুইস ফেডারেশন, ফিলিপাইন, ফিলিস্তিন, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইউক্রেন, ভিয়েতনাম, লাও পিডিআর, মঙ্গোলিয়া ও জাম্বিয়ার রাষ্ট্রপতিরা। এ ছাড়া আলজেরিয়া, বুলগেরিয়া, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, কিউবা, চীন, চেক রিপাবলিক, গ্রিস, ইরাক, কসোভো, মন্টেনিগ্রো, মোনাকো, মালয়েশিয়া, কাতার, সার্বিয়া, থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী ও মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক কাউন্সিলের সভাপতি বার্তা দিয়েছেন। তা ছাড়া ব্রিটেনের রানী, জাপানের সম্রাট, বেলজিয়াম, মালয়েশিয়া, স্পেন, সুইডেন ও মরক্কোর রাজা, ব্রুনাইয়ের সুলতান, কাতারের আমিরসহ অনেকেই লিখিত অভিনন্দনবার্তা পাঠিয়েছেন।

অনন্য গান্ধী পুরস্কার : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অহিংসাত্মক ও অনন্য গান্ধীবদ্ধ পদ্ধতির মাধ্যমে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক রূপান্তরের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সম্মানিত ‘দ্য গান্ধী শান্তি পুরস্কার, ২০২০’-এ ভূষিত করা হয়েছে। ভারত সরকারের দেওয়া ‘গান্ধী শান্তি পুরস্কার’ একটি অনন্য মাত্রা পেয়েছে। গান্ধী শান্তি পুরস্কারের বিচারকমন্ডলীর প্রধান ছিলেন মোদি। মোদি ছাড়া বিচারকমন্ডলীর অন্য সদস্যরা হলেন ভারতের প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে, লোকসভার প্রধান বিরোধী দলের নেতা, লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা এবং সুলভ ইন্টারন্যাশনাল সামাজিক সেবা সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা বিন্ধ্যেশ্বর পাঠক। গান্ধী পুরস্কারের অর্থমূল্য ১ কোটি রুপি; সঙ্গে দেওয়া হয় মানপত্র ও ঐতিহ্যপূর্ণ হস্তশিল্পসামগ্রী। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘এটা ভারতের জন্যও গর্বের আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গান্ধী শান্তি পুরস্কার দিতে পেরেছি।’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গান্ধী শান্তি পুরস্কার দেওয়ায় ভারত সরকারের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর