রবিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিবসহ শীর্ষ দুই নেতা গ্রেফতার

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আরও ৭

নিজস্ব প্রতিবেদক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ দুই নেতা মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব এবং মাওলানা জালালুদ্দীন আহমাদকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এদিকে হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগরীর সহসভাপতি মাওলানা জুবায়ের আহমদের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।

জানা গেছে, গতকাল দুপুরে হেফাজতে ইসলামের সহকারী মহাসচিব এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমাদকে ডিবির মতিঝিল-লালবাগ যৌথ অভিযানে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে বিকাল ৪টার দিকে বারিধারা এলাকা থেকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করে হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগরীর সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিবকে। এনিয়ে হেফাজতের সাতজন কেন্দ্রীয় নেতাসহ সারা দেশে শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হলো। গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল বিকালে বারিধারা এলাকার একটি মাদরাসায় অভিযান চালিয়ে জুনায়েদ আল হাবিবকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের হেফাজতের সহিংসতার ঘটনায় একাধিক মামলা রয়েছে। এর আগে দুপুরে ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজত ইসলামের তা বের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার করা হয় মাওলানা জালালুদ্দীনকে। সম্প্রতি বায়তুল মোকারম মসজিদে সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা মামলায়ও তিনি আসামি। জানা গেছে, আল্লামা জুনায়েদ আল হাবিব হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগরীর সভাপতি ছাড়াও কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া তিনি জমিয়ত-ই-উলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি ও ঢাকার জামিয়া কাসেমিয়া আশরাফুল উলুম মাদরাসার প্রিন্সিপাল হিসেবে কর্মরত। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, জুনায়েদ আল হাবিবের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে সহিংসতা ছাড়াও সাম্প্রতিক সহিংসতাতেও সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। তাকে ২০১৩ সালের একটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে সাম্প্রতিক মামলাতেও গ্রেফতার দেখানো হবে। প্রসঙ্গত, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে ১১ এপ্রিল কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল ইসলামাবাদী ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-অর্থ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগরী কমিটির সহসভাপতি মুফতি ইলিয়াস, ১৩ এপ্রিল হেফাজতের কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার সম্পাদক মুফতি শরীফ উল্লাহ, ১৪ এপ্রিল সহকারী মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি ও কেন্দ্রীয় নেতা সাখাওয়াত হোসেন রাজীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সর্বশেষ গত শুক্রবার মাওলানা যুবায়ের আহমেদ ও শনিবার মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমেদ নামে হেফাজতের দুই কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেফতার করা হয়।

মাওলানা জুবায়ের পাঁচ দিনের রিমান্ডে : হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগরীর সহসভাপতি মাওলানা জুবায়ের আহমদের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। গতকাল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম রিমান্ডের এ আদেশ দেন। এর আগে মতিঝিল থানা পুলিশ মাওলানা জুবায়েরকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। তবে, এদিন আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। শুনানি শেষে বিচারক ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। উল্লেখ্য, গত শুক্রবার বিকালে লালবাগ এলাকা থেকে মাওলানা জুবায়েরকে গ্রেফতার করেন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গ্রেফতার আরও সাত : ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরজুড়ে হেফাজতে ইসলামের ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিকান্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আরও সাতজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত শুক্রবার রাতে জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের দাবি, গ্রেফতার সবাই হেফাজতে ইসলামের কর্মী-সমর্থক। এ নিয়ে তান্ডবের ঘটনায় মোট ২৬৮ জন গ্রেফতার হলেন। গতকাল সকালে জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হেফাজতের তান্ডবের ঘটনায় জড়িত আরও সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরা সবাই হেফাজতে ইসলামের কর্মী-সমর্থক। এ নিয়ে এসব ঘটনায় মোট ২৬৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তান্ডবের ঘটনায় জেলার বিভিন্ন থানায় মোট ৫৫টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় ৪৯টি, আশুগঞ্জ থানায় ৩টি, সরাইল থানায় ২টি এবং আখাউড়া রেলওয়ে থানায় ১টি। ৫৫টি মামলায় এজাহারনামীয় ৪১৪ জনসহ অজ্ঞাতনামা ৩৫ হাজার লোককে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত মামলার ২৬৮ জন আসামিকে গ্রেফতার করে। এ ব্যাপারে জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ডিআইওয়ান) ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, পুলিশ আসামিদের ভিডিও ফুটেজ ও ছবি দেখে তাদের গ্রেফতার করছে।

সর্বশেষ খবর