বৃহস্পতিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

কৃষি খাদ্য স্বাস্থ্য কর্মসংস্থানই অগ্রাধিকার

করোনায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ কর্মসূচি

মানিক মুনতাসির

কৃষি খাদ্য স্বাস্থ্য কর্মসংস্থানই অগ্রাধিকার

মহামারী করোনায় দেশের মানুষকে সুরক্ষা দিতে কৃষি, খাদ্য, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রণয়ন করা হচ্ছে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট। আসছে এই বাজেটে করোনায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য থাকবে বিশেষ কর্মসূচি। স্বাস্থ্য সুরক্ষায়ও থাকবে বিশেষ উদ্যোগ। এ ছাড়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকারের নেওয়া কর্মসূচিগুলোও সচল থাকবে আগামী বাজেটে। অর্থ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বৈশি^ক মহামারী করোনার কারণে পুরো, আধা এবং হালকা লকডাউনের কারণে উৎপাদন, বিপণন ও ভোগ সবই কমছে এবং আগামীতে আরও কমবে। সেজন্য নতুন কৌশল নিয়েই অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের নজর রয়েছে। আগামী বাজেটে জীবন-জীবিকা উভয়ের সমন্বয় করতে থাকবে উদ্যোগ। অতিমারীর মধ্যে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। ফলে জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পরই কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিকে তৃতীয় অগ্রাধিকার খাত হিসেবে চিহ্নিত করে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে কৃষি খাতকে। খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, সার, বীজের ভর্তুকি ও প্রয়োজনীয় উপকরণের পাশাপাশি এসব উপকরণ ব্যবহার ও আধুনিক কৃষি সম্পর্কে সম্যক ধারণা বাড়াতে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বছর জুড়েই। এর জন্য পৃথকভাবে বরাদ্দ রাখা হবে জাতীয় বাজেটে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জাতীয় সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও বাজেট মনিটরিং কমিটির সমন্বয় সভায় এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত বৈঠকটিতে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম   মুস্তফা কামাল। অর্থ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষি খাতের উৎপাদন প্রক্রিয়া সচল রাখার কৌশল থাকবে বাজেটে। পাশাপাশি সরকারের খাদ্য মজুদ শক্তিশালী করতে অভ্যন্তরীণ বাজারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজার থেকেও খাদ্যপণ্য সংগ্রহ করছে সরকার। এ ধারা আগামী বছরও অব্যাহত রাখা হবে। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর ও কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, এক দশকে বিশ্বে বাংলাদেশ ধান-চাল ও মাছ উৎপাদনে চতুর্থ অবস্থানে, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, ছাগল উৎপাদনেও চতুর্থ, আম উৎপাদনে সপ্তম স্থান অর্জন করেছে। একইভাবে আলু উৎপাদনেও এক বিস্ময় সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ। বিভিন্ন ফসলের উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবনেও শীর্ষ স্থান অর্জন করেছে বাংলাদেশ। আগামী বাজেটে এসব বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে কৃষি খাত উন্নয়নের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কভিড-১৯ এর প্রভাবে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যেভাবে নেতিবাচক পর্যায়ে চলে গেছে সেখানেও বাংলাদেশ ৫ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে কৃষির বাম্পার ফলন। আর এটা সম্ভব হচ্ছে কৃষির আধুনিকীকরণের জন্য বলে মনে করে সরকার। কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক জানান, কৃষি ব্যবস্থাকে শতভাগ যান্ত্রিকীকরণ করতে চায় সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা ৪০০ কোটি টাকার থোক বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। আগামী বাজেটে আরও বেশি অর্থ বরাদ্দের প্রয়োজন হবে। আমাদের জনসংখ্যার ভিত্তিতে জমির পরিমাণ খুবই কম। মানুষের গড় আয়ু বাড়ায় ও শিল্প খাতের প্রসারের কারণে কৃষিজ জমির পরিমাণও কমছে। ফলে ভবিষ্যতে খাদ্য চাহিদা মেটাতে হলে উৎপাদন আরও বাড়াতে হবে। আর এর জন্য প্রয়োজন উচ্চফলনশীল জাতের উদ্ভাবন। যার জন্য প্রয়োজন বেশি বেশি গবেষণা। এ জন্য প্রযুক্তিনির্ভরতার কোনো বিকল্প নেই। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ইতিমধ্যে বলেছেন, দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই আগামী বাজেট হবে জীবন ও জীবিকার বাজেট। দুটি খাতই সমান ও সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে আসছে বাজেটে। এ জন্য বরাদ্দও বাড়ানো হবে। এ ছাড়া এক বছর ধরে চলমান মহামারীর কারণে যেসব মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তাদের জন্যও বাজেটে নতুন কিছু উদ্যোগ নেওয়া হবে। একই সঙ্গে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগের পরিকল্পনা থাকবে বাজেটে। এ জন্য ছোট-মাঝারি ক্ষুদ্র ব্যবসা ও শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে এ খাতের বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো হবে। একইভাবে এ খাতকে চাঙা করতে দেওয়া হবে নীতিগত সহায়তাও।

সর্বশেষ খবর