মঙ্গলবার, ৪ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

আরেকটি বদর যুদ্ধের ডাক দিয়েছিল হেফাজত : ডিবি

কেন্দ্রীয় নেতাসহ দুজনের রিমান্ড ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আরও পাঁচজন গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

হেফাজতে ইসলাম আরেকটি ‘বদর যুদ্ধের’ ডাক দিয়েছিল বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম। তিনি বলেন, আরেকটি শাপলা চত্বর তৈরির চেষ্টা করেছিল তারা। বদরের যুদ্ধ হয়েছিল রমজান মাসে। সরকার পতনের জন্য আরেকটি বদরের যুদ্ধের ডাক দিয়েছিল হেফাজত। ঢাকা শহর কলাপস করার পরিকল্পনা ছিল তাদের। ২৬ মার্চে শুরু হওয়া সহিংসতা রমজান পর্যন্ত টেনে আনার পরিকল্পনা ছিল। গ্রেফতার নেতাদের জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য পাওয়ার দাবি করছে ডিবি।

গতকাল দুপুরে ডিবি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরে মাহবুব আলম বলেন, চলতি রমজানেই দেশে একটি অরাজক পরিস্থিতি তৈরির নীলনকশায় মেতেছিল হেফাজতের নেতারা। দেশ-বিদেশ থেকে মাদরাসায় আসা অনুদানের টাকা সাম্প্রতিক সহিংসতায় খরচ করা হয়েছিল। আর এটা নিয়ন্ত্রণ করত মূলত মামুনুল-হাবীবী।

তিনি আরও বলেন, মাদরাসার অনুদানের টাকা ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় খরচ করার তথ্য পাওয়া গেছে। এমনকি মোহাম্মদপুরে মামুনুল হকের মাদরাসায় এক বছরে ১০/১২ কোটি টাকার আয় হয়েছে; কিন্তু কোথায় কোথায় ব্যয় হয়েছে তার কোনো হিসাব তাদের কাছে নেই। অর্থাৎ তারা মাদরাসার টাকা রাজনৈতিক দলের কাজে ব্যবহার করতেন। তিনি বলেন, সারা দেশের বিভিন্ন কওমি মাদরাসায় যা আয় হতো, তার বেশিরভাগই রাজনীতির কাজে ব্যবহার করতেন হেফাজত নেতারা। হেফাজত একটি অরাজনৈতিক সংগঠন, কিন্তু এর নেতারা কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। হেফাজতের কার্যক্রমের আড়ালে তারা তাদের রাজনৈতিক দলের কাজ করে আসছিল।

তিনি আরও বলেন, তাবলিগ জামাতকে দুই ভাগ করার নেপথ্যেও তাদের হাত ছিল বলে জিজ্ঞাসাবাদে রিমান্ডে থাকা নেতারা পুলিশকে জানিয়েছেন।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরোধিতা করে গত ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে তান্ডব চালানোর অভিযোগ রয়েছে হেফাজত নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। এ তান্ডব ছড়িয়ে পড়ে কয়েকটি জেলায়। এ ঘটনায় হওয়া মামলায় এখন পর্যন্ত ৩০ জনেরও বেশি হেফাজতের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে সহিংসতার মূল কারণ পাওয়া গেছে বলে জানায় ডিবি।

হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতাসহ দুইজনের রিমান্ড : ময়মনসিংহে গ্রেফতার হেফাজতে ইসলামের সদ্য বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সাদীর এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। একই সঙ্গে ইত্তেফাকুল উলামা বৃহত্তর মোমেনশাহীর কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক ও ময়মনসিংহ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাফেজ মাওলানা মঞ্জুরুল হককেও এক দিনের রিমান্ড দেওয়া হয়েছে। গতকাল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মাসুম মিয়া এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। কোর্ট ইন্সপেক্টর প্রসূন কান্ত দাস বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ওই দুইজনকে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। পরে বিজ্ঞ বিচারক এক দিন করে তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গত ২৮ মার্চ হেফাজতে ইসলামের হরতালের নামে ময়মনসিংহ নগরীর চরপাড়া মোড়ে পুলিশ বক্স ভাঙচুর, বাইপাস সড়কে বাসে আগুন, পুলিশের ওপর হামলাসহ নাশকতার ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা হয়। ওই মামলায় তাদের গ্রেফতার করা হয়।

এর আগে, গত রবিবার বিকালে মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সাদীকে ময়মনসিংহ সদরের মাইজভারী মাদরাসা থেকে এবং হাফেজ মাওলানা মঞ্জুরুল হককে নগরীর ছোট বাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ।

হেফাজতের তান্ডব ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আরও পাঁচজন গ্রেফতার : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের কর্মসূচি চলাকালে শহরজুড়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিকান্ডের ঘটনায় আরও পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রবিবার রাতে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তা বের ঘটনায় মোট ৪০৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, হেফাজতের তা বের ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন থানায় এ পর্যন্ত ৫৬টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে সদর মডেল থানায় ৪৯টি, আশুগঞ্জ থানায় চারটি, সরাইল থানায় দুটি এবং আখাউড়া রেলওয়ে থানায় একটি। এসব মামলায় ৪১৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৩০-৩৫ হাজার লোককে আসামি করা হয়। পুলিশ শনিবার রাত পর্যন্ত ৪০৮ জনকে গ্রেফতার করেছে।

পুলিশের বিশেষ শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ডিআইওয়ান) ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, সহিংস ঘটনাগুলোর স্থির চিত্র ও ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে অভিযুক্তদের শনাক্ত শেষে গ্রেফতার করা হচ্ছে।

 

সর্বশেষ খবর