বৃহস্পতিবার, ৬ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

মাহে রমজানের অন্যতম শিক্ষা তাকওয়া অর্জন

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

মাহে রমজানের অন্যতম শিক্ষা তাকওয়া অর্জন

মাহে রমজান তাকওয়া অর্জনের মাস। নিজের ইমান-আমলের উন্নতি করার মাস। তার জন্য প্রয়োজন তাকওয়ার। তাকওয়া হচ্ছে সব ধরনের গুনাহকে বর্জন করে এক আল্লাহর ভয়কে অন্তরে স্থান দিয়ে জীবন পরিচালনা করার নাম। আত্মার সংশোধন ও মানুষকে পরিশুদ্ধ করার ব্যাপারে রমজান মাসের অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে। এই রমজান মাসেই একজন মানুষ পরিপূর্ণ মুত্তাকি হতে পারে। ইমানদারদের জন্য রমজান মাস সারা বছরের জন্য গুনাহ বর্জন, ইবাদাতের শক্তি সঞ্চয় ও আত্মিক পাথেয় অর্জনের এক মহা সুযোগ। যেমন আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজাকে ফরজ করা হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার’ (সুরা বাকারা-১৮৩)। এই আয়াত দ্বারা বোঝা গেল যে, রোজা পরিপূর্ণ মুত্তাকি হওয়ার একটি মাধ্যম। প্রকৃতপক্ষে ওই ব্যক্তি পরিপূর্ণ সফলকাম যে রমজান মাস পেল এবং তার থেকে কাক্সিক্ষত উপকার অর্জন করে নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করতে পারল। আল্লাহতায়ালা কোরআনের বহু জায়গায় বারবার ইরশাদ করেছেন, “হে ইমানদারগণ! তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর।” আর তাকওয়া অর্জনের দ্বারাই একজন মানুষের জীবন পূর্ণতা লাভ করে। যেহেতু রমজান মাসে প্রতিটি সৎ কাজের প্রতিদান বহু গুণ দেওয়া হয়, যেমন রমজানে একটি নফল আদায়ের দ্বারা অন্য মাসের একটি ফরজ আদায়ের সমান সাওয়াব পাওয়া যায়। একটি ফরজ আদায়ের দ্বারা সত্তরটি ফরজ আদায়ের সমান সাওয়াব পাওয়া যায়। তাই রমজান মাসই হচ্ছে পরিপূর্ণ তাকওয়া অর্জনের মোক্ষম সময়। একজন রোজাদার রমজান মাসে কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তাঁর ভয়েই রোজা রাখে। কেননা হাদিসে পাকে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহতায়ালা বলেন, “নিশ্চয় রোজা আমার জন্য, আর এর প্রতিদান স্বয়ং আমিই দিব” (সহিহ মুসলিম, হাদিস ১১৫১)। সুতরাং প্রকৃত মুত্তাকি তারাই হতে পারে যাদের আছে “ইসলাহে নফস বা আত্মশুদ্ধি”। কারণ যার অন্তরের ইসলাহ বা আত্মশুদ্ধি আছে তার জন্য গুনাহ মুক্ত জীবন ধারণ করা খুবই সহজ হয়ে যায়। আত্মশুদ্ধি ব্যতিরেকে কখনই গুনাহ বর্জন করা সম্ভব নয়। গুনাহ বর্জন ব্যতীত জান্নাতে যাওয়াটা কঠিন থেকে কঠিনতর হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। দেখুন, একটি বিষয় আমরা সবাই জানি যে, এই দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী, আখেরাত হচ্ছে চিরস্থায়ী। সুতরাং আমাদের চিরস্থায়ী বাসস্থান জান্নাতে যাওয়ার চিন্তা-ফিকির করতে হবে। ইবাদতে তাকওয়াবান হওয়াই হচ্ছে জান্নাতি হওয়ার অন্যতম নিদর্শন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, আল্লাহতায়ালা বলেন, “যে ব্যক্তি তার প্রভুর সামনে উপস্থিত হওয়াকে ভয় করে এবং নিজের অন্তরকে কুপ্রবৃত্তি থেকে দূরে রাখে, জান্নাতই হবে তার জন্য চূড়ান্ত আবাসস্থল” (সুরা আননাজিয়াত : ৪০) প্রকৃত মুমিন বান্দা শুধু একটি মাস ইবাদত করেই ক্ষান্ত হবে না, বরং সর্বদা ইবাদত জারি রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করবে। কেননা আল্লাহতায়ালা বলেছেন, “তুমি মৃত্যু অবধি তোমার রবের ইবাদত করতে থাক” (সুরা হিজর : ৯৯)। আমাদের মনে রাখতে হবে, তাকওয়া বা খোদাভীতি বিহীন ইবাদত আখেরাতে কোনো কাজে আসবে না। সুতরাং ইবাদতে যে যত বেশি তাকওয়াবান সে-ই সফলকাম মুমিন। মানুষ গুনাহের দিকে ধাবিত হয় আত্মার খাহেশাতের কারণে। এ জন্য রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (উম্মতকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য) সব সময় আল্লাহর কাছে অন্তরের খারাপি থেকে অধিক পরিমাণে মুক্তি চাইতেন এই বলে “হে আল্লাহ! তুমি আমার অন্তরকে আত্মরক্ষার ক্ষমতা দাও এবং তাকে পরিশুদ্ধ কর। তুমিই অন্তরের সর্বোত্তম পরিশোধনকারী এবং তুমিই তার অভিভাবক ও প্রতিপালক” (মিশকাত, হাদিস ২৪৬০)। প্রিয় পাঠক! রমজান আমাদের থেকে চলে যাচ্ছে। আমরা যদি আমাদের জীবনের গুনাহ-খাতা ক্ষমা করাতে না পারি, তাহলে এর চেয়ে বড় ব্যর্থতা আর কিছুই হতে পারে না। এখন নাজাতের দিন চলছে, এই দিনগুলোতে আল্লাহপাক বহু গুনাহগার বান্দাকে ক্ষমা করে থাকেন। তাই আসুন, আমরা তাকওয়া অর্জন করে নিজেদের গুনাহগুলো ক্ষমা করিয়ে নেই। আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে তাকওয়া অর্জন করার তৌফিক দান করুন। আমিন!

লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির, খতিব ও ইসলামী প্রোগ্রামের টিভি উপস্থাপক।

সর্বশেষ খবর