শুক্রবার, ৭ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

পি কে হালদারসহ ৪০ সহযোগীর বিরুদ্ধে হচ্ছে আরও ২০ মামলা

বিশেষ প্রতিনিধি

বিদেশে পলাতক এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) অস্তিত্বহীন ২০টি প্রতিষ্ঠানের নামে ফাস ফাইন্যান্স লিমিটেড থেকে ঋণের নামে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অস্তিত্বহীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে নেওয়া ঋণের টাকা ওইসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে জমা হওয়ার কোনো রেকর্ড নেই। ওই টাকা তাদের নামীয় অন্য প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরিত করে পরে উত্তোলনের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান এবং ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের এমডি মো. রাশেদুল ইসলাম ও পিপলস লিজিংয়ের চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দীর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি থেকে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। পি কে হালদার ও তার দুর্নীতির ৪০ সহযোগীর বিরুদ্ধে জালিয়াতি করে ওই ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকাসহ মোট দেড় হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আরও ২০টি মামলার সুপারিশসহ প্রতিবেদন তৈরি করেছে দুদক। দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানসহ অনুসন্ধান টিমের অন্য সদস্যরা বাদী হয়ে শিগগির এসব মামলা করবেন।

অস্তিত্বহীন কাগুজে যেসব প্রতিষ্ঠানের নামে ফাস ফাইন্যান্সের অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে, সেগুলো হলো- নিউটেক এন্টারপ্রাইজ, নিউট্রিক্যাল লিমিটেড, এস এ এন্টারপ্রাইজ, সুখাদা প্রপার্টিজ লিমিটেড, নেচ্যার এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড, উইনটেল ইন্টারন্যাশনাল, বর্ণ, স›দ্বীপ করপোরেশন, আনান কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ, এন্ডবি ট্রেডিং, আরবি এন্টারপ্রাইজ, দেয়া শিপিং, ইমার এন্টারপ্রাইজ, জি অ্যান্ড জি এন্টারপ্রাইজ, হাল ইন্টারন্যাশনাল, কণিকা এন্টারপ্রাইজ, মেরিনট্রাস্ট লিমিটেড, মুন এন্টারপ্রাইজ, এমটিবি মেরিন ও পি অ্যান্ড এল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড।

এর আগে দুদক হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে পি কে হালদারসহ তার অর্ধশতাধিক সহযোগীর বিরুদ্ধে ১৫-২০টি মামলা করে। পি কের অর্থ আত্মসাৎ ও পাচার কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে দুদক নাহিদা রুনাই, সৈয়দ আবেদ হাসান ও রাফসান রিয়াদ চৌধুরীসহ ১১ জনকে গ্রেফতার করে। তাদের মধ্যে উজ্জ্বল কুমার নন্দী, শংখ বেপারী, রাশেদুল হক এবং সর্বশেষ অবন্তিকা বড়াল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

একাধিক সূত্র জানায়, পি কে হালদার ৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে তুলে নিয়ে আত্মসাৎ ও পাচার করেছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি তার আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের ব্যবহার করেছেন। তাদের বিভিন্ন কাগুজে প্রতিষ্ঠানের মালিক বানিয়ে ঋণ হাতিয়ে নিলেও তারা ছিলেন তার বেতনভুক্ত কর্মচারী। দুদকের অনুসন্ধানে জানা গেছে, পি কে হালদার এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের এমডি থাকার সময় গৃহঋণের নামে ৩ কোটি টাকা দেওয়া হলেও পরে এই টাকা তার ব্যাংক এশিয়ার ধানমন্ডি শাখার হিসাবে ২০১৭ সালের ২২ জুন স্থানান্তর করা হয়। ওই সময় এ হিসাবে ১৫৯ কোটি ৬৫ টাকা জমা এবং উত্তোলনের প্রমাণও রয়েছে দুদকের হাতে। পিপলস লিজিং ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের মতো ফাস ফাইন্যান্স থেকেও পি কে হালদার বিভিন্ন কাগুজে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অর্থ লোপাট করেন। দুদকের অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে ফাস ফাইন্যান্স থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নেওয়া পি কে হালদারের ২২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২০টিরই ঠিকানা যাচাই করে কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। দুটি প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা অনুযায়ী অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও সেগুলোর কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফাস ফাইন্যান্সের সহকারী ম্যানেজার মো. নুরুল আমিনের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি টিম দুই সপ্তাহ পরিদর্শন করেও ২০টি প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি। অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের মালিকদেরও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তারা দেশে বা বিদেশে পালিয়ে আছেন। তাদের দেওয়া মোবাইল নম্বর বন্ধ রয়েছে। ঋণের বিপরীতে কোনো ধরনের জামানত উল্লেখ করা হয়নি। ফলে ঋণের টাকা আত্মসাৎ করা ওই টাকা আদায়ের কোনো সম্ভাবনা নেই।

সর্বশেষ খবর