রবিবার, ৯ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

কী এই বি.১.৬১৭?

প্রতিদিন ডেস্ক

কী এই বি.১.৬১৭?

বাংলাদেশে শনাক্ত হয়েছে করোনার ভারতীয় ধরন। যে কোনো ভাইরাসই ক্রমাগত নিজের ভিতরে নিজেই মিউটেশন ঘটাতে থাকে, অর্থাৎ নিজেকে বদলাতে থাকে। ফলে একই ভাইরাসের নানা ধরন তৈরি হয়। করোনাভাইরাসের ভারত ভেরিয়েন্ট, যার বৈজ্ঞানিক নাম দেওয়া হয়েছে বি.১.৬১৭। এটি প্রথম ভারতে শনাক্ত হয় গত অক্টোবরে। এ ধরনটির ব্যাপারে বিবিসি একটি প্রতিবেদেন তৈরি করেছে। এতে বলা হয়েছে, কত দ্রুত এবং কতদূর নতুন ধরনের এই ভাইরাসটি ভারতে ছড়িয়েছে তার সুনির্দিষ্ট ধারণা পেতে যে মাত্রায় নমুনা পরীক্ষা করতে হয়, তা এখনো ভারতে সম্ভব নয়। পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৩৬১টি নমুনা পরীক্ষায় ২২০টির মধ্যে নতুন ধরনের এই ভাইরাসটি শনাক্ত হয়। ওদিকে সংক্রামক রোগের তথ্য সংগ্রহ এবং আদান-প্রদানে নিয়োজিত আন্তর্জাতিক সংস্থা জিআইসএইডের ডাটাবেজ অনুসারে, এরই মধ্যে কমপক্ষে ২১টি দেশে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভেরিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। যাতায়াতের কারণে ব্রিটেনেও করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরনটি পাওয়া গেছে। ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ১০৩ জন কভিড রোগীর দেহে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা এখনো জানতে পারেননি যে, ভারতে প্রথম শনাক্ত এই করোনাভাইরাসটি অন্যগুলোর তুলনায় দ্রুত সংক্রমণ ঘটায় কি না বা এটির বিরুদ্ধে টিকা কার্যকর কি না। যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের ভাইরোলজিস্ট ড. জেরেমি কামিল বলেন, ভারত ভেরিয়েন্টে শনাক্ত একটি মিউটেশনের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ব্রাজিল ভেরিয়েন্টে শনাক্ত মিউটেশনের মিল রয়েছে। এই মিউটেশনটি দেহে রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থায় তৈরি অ্যান্টিবডিকে পাশ কাটিয়ে যেতে ভাইরাসকে সাহায্য করতে পারে। সংক্রমণ এবং ভ্যাকসিন নিয়ে আগের বিভিন্ন পরীক্ষায় এটি দেখা গেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভেরিয়েন্ট নিয়ে এখন পর্যন্ত যে তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাচ্ছে তার অধিকাংশই অসম্পূর্ণ। বিজ্ঞানীদের হাতে নমুনার সংখ্যাও খুব কম। ভারতে এই নমুনার সংখ্যা মাত্র ২৯৮, আর সারা বিশ্বে ৬৫৬। সেই তুলনায় ব্রিটিশ ভেরিয়েন্টের পূর্ণাঙ্গ নমুনার সংখ্যা কমপক্ষে ৩,৮৪,০০০। ভারতের এই ভেরিয়েন্ট প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর পৃথিবীতে তা পাওয়া গেছে চারশ’রও কম, বলছেন ড. কামিল। ভারতে গত ১৫ এপ্রিল থেকে প্রতিদিন নতুন কভিড রোগী শনাক্তের সংখ্যা ২ লাখের ওপর। এক দিনে ৪ লাখেরও বেশি করোনা শনাক্ত হয়েছে। অথচ গত বছর প্রথম দফা সংক্রমণের সময় দিনে সংক্রমণের সর্বোচ্চ সংখ্যা ছিল ৯৩,০০০। শুধু সংক্রমণই নয়, মৃত্যুর সংখ্যাও হু হু করে বাড়ছে। ‘ভারতের উচ্চ জনসংখ্যা এবং ঘনবসতি মিউটেশনের জন্য এই ভাইরাসকে আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছে’ বলে জানিয়েছেন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল মাইক্রোবায়োলজির অধ্যাপক রবি গুপ্তা। তবে ভারতে এখন যে উঁচু মাত্রায় সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে তার পেছনে বিশাল গণজমায়েত এবং সেই সঙ্গে মাস্ক না পরা এবং সামাজিক দূরত্ব অগ্রাহ্য করার মতো আচরণও কাজ করতে পারে। ওয়েলকাম স্যাংগের ইনস্টিটিউটের ড. জেফরি ব্যারেট বলছেন, করোনাভাইরাসের নতুন এই ভেরিয়েন্টের সঙ্গে ভারতের বর্তমান এই ভয়াবহ পরিস্থিতির যোগসূত্র থাকতে পারে, কিন্তু তা নিয়ে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ এখনো নেই। তিনি বলেন, ভারতীয় এই ভেরিয়েন্টটি গত বছরের শেষ দিক থেকেই সেদেশে রয়েছে। ‘যদি সত্যিই ওই ভেরিয়েন্টের কারণেই বর্তমানের এই উঁচু সংক্রমণ হয়ে থাকে, তাহলে সেটি কাজ করতে কয়েক মাস সময় নিয়েছে। তার অর্থ এটির চেয়ে কেন্ট বি ১১৭ ভেরিয়েন্টটি (ব্রিটিশ ভ্যারিয়েন্ট) অনেক বেশি সংক্রামক।’ বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, বর্তমানে করোনাভাইরাসের যেসব টিকা রয়েছে তা ভারতীয় ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত রোগীদের চরম অসুস্থ হয়ে পড়া থেকে রক্ষা করবে। তবে নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত অধ্যাপক গুপ্তা এবং তার সহযোগীদের করা একটি গবেষণা রিপোর্ট বলছে, এখন যেসব টিকা রয়েছে করোনাভাইরাসের কিছু ভেরিয়েন্ট সেগুলোতে মরবে না। ফলে, নতুন ধরনের ভ্যাকসিন আনতে হবে এবং বর্তমানের টিকাগুলোকে অদল-বদল করতে হবে। তবে, যেসব টিকা এখন তৈরি হয়েছে সেগুলো করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বা বিপদ কমাতে সক্ষম। ড. কামিল বলেন, ‘সিংহভাগ মানুষের ক্ষেত্রে যেটা সত্য তা হলো, ভ্যাকসিন নেওয়া বা না নেওয়ার ওপর নির্ভর করবে- তারা সংক্রমণ মুক্ত বা বড়জোর স্বল্পমাত্রায় সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকবেন, নাকি প্রাণ হারানোর ঝুঁকি নিয়ে হাসপাতালে যাবেন। ভ্যাকসিন দেওয়ার সুযোগ পেলে দয়া করে তা লুফে নিন। সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগবেন না। শতভাগ অব্যর্থ কোনো ভ্যাকসিনের জন্য অপেক্ষায় বসে থাকার মতো ভুল করবেন না।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর